তামাত্তু হজ যেভাবে আদায় করবেন


প্রকাশিত: ১০:২৪ এএম, ১৫ আগস্ট ২০১৬

মুসলিম উম্মাহর জন্য হজ আদায়ের সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত ফরজ আদায়ের নিয়ম হচ্ছে তিনটি। তামাত্তু, ক্বিরান ও ইফরাদ। এ তিন ধরনের হজের মধ্যে তামাত্তু হজ আদায় সহজ।

তামাত্তু হজ
শাওয়াল, জিলক্বদ, জিলহজ মাসে হজের সফরে প্রথমেই ওমরার ইহরাম বেঁধে ওমরা করে ইহরাম খুলে ফেলা; অতপর হজের জন্য পুনরায় ইহরাম বেঁধে হজ সম্পন্ন করাকে তামাত্তু হজ বলে। তামাত্তু হজ আদায়ের নিয়ম তুলে ধরা হলো-

১. ওমরার ইহরাম (ফরজ)
যারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সরাসরি মক্কায় যাওয়ার ইচ্ছা করেছেন, তারা নিজ নিজ দেশ থেকে অর্থাৎ মিকাত অতিক্রম করার পূর্বেই ইহরাম বাঁধবেন। ইহরাম বাঁধার জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সেরে ওজু বা গোসল করা। অতপর মিকাত অতিক্রমের পূর্বেই দুটি সেলাইবিহীন কাপড় পরিধান করা। অতপর দুই রাকাআত নামাজ আদায় করে ওমরার নিয়ত করা এবং তিনবার তালবিয়া পাঠ করা-
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাব্বাইক ওমরাতান; লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক; লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক; ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক; লা শারিকা লাক।

২. ওমরার তাওয়াফ (ফরজ)
ওজুর সঙ্গে ইজতিবাসহ তাওয়াফ করা। ইজতিবা হলো ইহরামের চাদরকে ডান বগলের নিচে রেখে চাদরের দুই মাথা বাম কাঁধের সামনে ও পিছনে ফেলে রাখা।

হাজরে আসওয়াদ থেকে বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে দুই হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠিয়ে তাওয়াফ শুরু করা। প্রথম তিন চক্কর রমল তথা বীরের মতো বুক ফুলিয়ে কাঁধ দুলিয়ে ঘন ঘন কদমে দ্রুতগতিতে প্রদক্ষিণ করা। পরবর্তী চার চক্কর সাধারণভাবে হেঁটে আদায় করা।

সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করে তাওয়াফ শুরু করে রুকনে ইয়ামেনি অতিক্রম করার সময় তা স্পর্শ করা। সম্ভব না হলে ইশারা করাই যথেষ্ট।

রুকনে ইয়ামেনি থেকে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত তাওয়াফকালে এ দোয়া পড়া-
উচ্চারণ : রাব্বানা আতিনা ফিদ্দিুনিয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াক্বিনা আ’জাবান নার। অতপর হাজরে আসওয়াদে এসে তাওয়াফ শেষ করা। এভাবে সাতবার চক্কর বা প্রদক্ষিণ করা।

৩. মাকামে ইবরাহিমে নামাজ (ওয়াজিব)
তাওয়াফ সম্পন্ন হলে মাকামে ইবরাহিম সন্নিকটবর্তী প্রান্তে দুই রাকাআত নামাজ আদায় করে দোয়া করা। এটা দোয়া কবুলের স্থান। অতপর দাঁড়িয়ে ঝমঝমের পানি পান করা।

৪. ওমরার সাঈ (ওয়াজিব)
সাফা পাহাড়ের উপরে আরোহন করে সেখান থেকে ক্বিবলামুখী হয়ে সাঈ’র নিয়ত করে সাফা হতে সাঈ শুরু করা। সাফা ও মারওয়ার মধ্যবর্তী নির্ধারিত চিহ্নিত স্থান দ্রুতবেগে অতিক্রম করা। মারাওয়া পাহাড়ে আরোহনপূর্বক দোয়া করা। অতপর আবার সাফায় আসা। এভাবে সাতবার সাঈ করা।

৫. মাথা মুণ্ডানো (ওয়াজিব)
পুরুষ হলে বিশ্বনবির আদর্শ অনুসারে সম্পূর্ণ মাথা মুণ্ডণ করা বা চুল ছাঁটা। মহিলা হলে চুলে মাথা এক ইঞ্চি পরিমাণ কর্তন করে ওমরার ইহরাম থেকে বের হওয়া।
 
৬. হজের ইহরাম (ফরজ)
৭ জিলহজ হারাম শরিফে হজের নিয়মাবলীর ওপর খুতবা দেয়া হয়। তা মনোযোগ সহকারে শুনা বা বুঝে নেয়া। অতপর হারাম শরিফ বা বাসা থেকে আগের নিয়মে শুধু হজের নিয়তে ইহরাম বেঁধে ৮ জিলহজ জোহরের নামাজের পূর্বে মিনায় পৌঁছা।

৭. মিনায় অবস্থান (সুন্নাত)
৮ জিলহজ জোহর থেকে ৯ জিলহজ ফজর পর্যন্ত মোট পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মিনায় আদায় করা এবং সেখানে অবস্থান করা।

৮. আরাফাতের ময়দানে অবস্থান (ফরজ)
হজের অন্যতম রুকন হলো আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা। ৯ জিলহজ সকালে মিনায় ফজরের নামাজ আদায় করে আরাফায় আসার প্রস্তুতি স্বরূপ গোসল করে একবার তাকবিরে তাশরিক পাঠ করা। জোহরের নামাজের পূর্বেই আরাফায় আসা।

উচ্চারণ : আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার; লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার; ওয়া লিল্লাহিল হামদ’
অতপর দুপুরের পর থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে হজের খুতবা শ্রবন করা। এবং নিজ নিজ তাবুতে জোহর ও আসরের নামাজ নির্দিষ্ট সময়ে আলাদাভাবে আদায় করা। সেখান থেকে সুর্যাস্তের পর মাগরিবের নামাজ না পড়ে মুযদালিফার দিকে রওয়ানা হওয়া।

৯. মুযদালিফায় অবস্থান (ওয়াজিব)
আরাফার সুর্যাস্তের পর মুযদালিফায় গিয়ে ইশার সময় মাগরিব ও ইশা এক আজানে ও একই ইক্বামাতে একসঙ্গে আদায় করা। প্রত্যেক নামাজের পর তাকবিরে তাশরিক আদায় করা অর্থাৎ ১৩ জিলহজ আসর নামাজ পর্যন্ত তাকবিরে তাশরিক আদায় করা। পরদিন মিনায় কংকর নিক্ষেপের জন্য এখান থেকেই পাথর সংগ্রহ করে রাখা।

১০. কংকর নিক্ষেপ (প্রথম দিন)
১০ জিলহজ ফজর নামাজ মুযদালিফায় আদায় করে সুর্যোদয়ের পূর্বেই মিনায় এসে বড় জামরায় ৭টি (সাত) কংকর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। এ দিন সম্ভব না হলে রাতের শেষ পর্যন্ত সময়ে কংকর নিক্ষেপ করা। কংকর নিক্ষেপের জায়গায় বাংলায় দিক-নির্দেশনা দেয়া হয় তা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করা।

১১. কোরবানি করা (ওয়াজিব)
মিনায় রাত্রি যাপন করে সকালে কুরবানি নিশ্চিত করা জরুরি। কুরবানি সম্পন্ন করার পর মাথা হলক বা মুণ্ডন করা বিশ্বনবির আদর্শের অনুসরণ, যা ওয়াজিব। সতর্কতা- কংকর নিক্ষেপ, কুরবানি ও মাথা মুণ্ডনের মধ্যে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা জরুরি।

১২. তাওয়াফে জিয়ারাত (ফরজ)
হজের সর্বশেষ ফরজ কাজ। এ তাওয়াফে জিয়ারাত ১২ জিলহজ সুর্যাস্তের পূর্বেই সম্পন্ন করা। ১২ তাওয়াফের পর আদায় করলে দম বা কুরবানি দিতে হবে।

১৩. কংকর নিক্ষেপ (ওয়াজিব)
১০, ১১ ও ১২ জিলহজ মিনায় অবস্থান করা এবং ১১ ও ১২ জিলহজ মিনায় অবস্থিত তিন জামরায় ৭টি করে ২১টি পাথর নিক্ষেপ করা। প্রথমে ছোট জামরায় তারপর মধ্যম, অতপর বড় জামরায় কংকর নিক্ষেপ করা। সর্বক্ষেত্রে দুর্বল ও নারীদের জন্য রাতের বেলায় কংকর নিক্ষেপ করা উত্তম।

১৪. মিনায় রাত যাপন
মিনায় অবস্থানরত দিনগুলোতে ১০-১২ জিলহজ পর্যন্ত মিনাতেই রাত যাপন করুন এবং ১৩ জিলহজ কংকর নিক্ষেপ শেষ করে মিনা থেকে ফিরে আসা সুন্নাত। (এর মাঝে মক্কায় এসে তাওয়াফে জিয়ারাত সম্পন্ন করে আবার মিনা যাওয়া।)

১৫. মিনা ত্যাগ
১৩ জিলহজ মিনায় না থাকতে চাইলে ১২ জিলহজ সন্ধ্যার আগে মিনা ত্যাগ করা। সুর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করা উত্তম।

১৬. বিদায়ী তাওয়াফ (ওয়াজিব)
সমগ্র বিশ্ব থেকে আগত সকল হজযাত্রীর জন্য বিদায়ী তাওয়াফ করা ওয়াজিব। তবে হজ শেষে যে কোনো নফল তাওয়াফই বিদায়ী তাওয়াফে পরিণত হয়ে যায়।

পরিশেষে...
হজে গমনকারীদের মধ্যে যারা তামাত্তু হজ আদায় করার ইচ্ছা পোষণ করেছেন, আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে উল্লেখিত নিয়মে তামাত্তু হজ যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।