ইসলামী ঐতিহ্যের প্রতীক বায়তুল মোকাররমের ইতিবৃত্ত

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:৫১ এএম, ১০ জুলাই ২০১৬

স্থাপত্য শৈলীর দৃষ্টিনন্দন মসজিদ বায়তুল মোকাররম। এ মসজিদটি বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ। দেখতে অনেকটা পবিত্র কাবা শরিফের আকৃতিতে তৈরি, যা পুরান ঢাকা ও নতুন ঢাকার মিলনস্থলে অবস্থিত। আট তলাবিশিষ্ট মসজিদটির প্রধান কক্ষের ছাদের উপর গম্বুজের অনুপস্থিতি মসজিদ স্থাপত্যের একটি বিরল বৈশিষ্ট্য। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সংক্ষিপ্ত তথ্য জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

ফিরে দেখা-
১৯৫৯ সালের কথা। তৎকালীন পাকিস্তানের বিশিষ্ট শিল্পপতি আব্দুল লতিফ ইবরাহিম বাওয়ানি প্রথম ঢাকায় বিপুল ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি গ্র্যান্ড মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেন। সেই মতে ওই বছরই ‘বায়তুল মোকাররম মসজিদ সোসাইটি’ গঠনের মাধ্যমে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। তাই ১৯৫৯ সালে পুরান ঢাকা ও নতুন ঢাকার মিলনস্থলে মসজিদটির জন্য জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। স্থানটি নগরীর প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র থেকেও ছিল নিকটবর্তী। অবশেষে আবদুল লতিফ ইবরাহিম বাওয়ানি ও তার ভাতিজা ইয়াহিয়া বাওয়ানির উদ্যোগে এই মসজিদ নির্মাণের পদক্ষেপ গৃহীত হয়।

Baitul-Mukarram

মসজিদের নকশা
মসজিদের প্রধান কক্ষটি তিন দিক থেকে বারান্দা দিয়ে ঘেরা। মেহরাবটি অর্ধ-বৃত্তাকারের পরিবর্তে আয়তাকার। আধুনিক স্থাপত্যে অল্প অলংকরণই এ মসজিদটির লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য, যা দেখতে অনেকটা পবিত্র কাবা শরিফের মতো। বিশিষ্ট স্থপতি টি আব্দুল হুসেন থারিয়ানি মসজিদ কমপ্লেক্সটির নকশা প্রণয়ন করেন। পুরো কমপ্লেক্সের নকশায় রয়েছে দোকান, অফিস, প্রকাশনা, পাঠাগার, অডিটোরিয়াম ও গাড়ি পার্কিংয়ের সুব্যবস্থা। ২৭ জানুয়ারি ১৯৬০ সালে জাতীয় মসজিদ বায়তুল  মোকাররমের নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

Baitul-Mukarram

মসজিদের আয়তন
আটতলা মসজিদটি মাটি থেকে এর উচ্চতা ৩০.১৮ মিটার। মসজিদে প্রধান কক্ষটি ২৪৬৩.৫১ বর্গমিটার এবং মধ্যবর্তী তলা হলো ১৭০.৯৪ বর্গমিটার। মসজিদের মোট আয়তন ২৬৯৪.১৯ বর্গমিটার। এ মসজিদে একসঙ্গে ৪০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের প্রবেশ বারান্দাগুলোতে আবার তিনটি অশ্বখুরাকৃতি খিলানপথ রয়েছে, যার মাঝেরটি পার্শ্ববর্তী দুটি অপেক্ষা বড়। দুটি উন্মুক্ত অঙ্গন প্রধান নামাজ কক্ষে আলো ও বাতাস চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে।

Baitul-Mukarram

টি আব্দুল হুসেন থারিয়ানির মূল নকশায় মসজিদের মিনারটি ছিল ভবনের দক্ষিণ পার্শ্বে আলাদা একটি কাঠামো। তবে বর্তমানের নতুন প্ল্যান অনুযায়ী নতুন মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। মূল নকশা অনুযায়ী মসজিদের প্রধান প্রবেশপথ পূর্ব দিকে হওয়ার কথা।

aitul-Mukarram

মসজিদটি উত্তর গেটে পূর্ব থেকেই কারুকার্যক্ষচিত গেটের সমন্বয়ে নির্মিত। মসজিদটির দক্ষিণ চত্বর বর্তমানে অত্যাধুনিক ডিজাইনে নির্মিত তোরনের মধ্যে বিশাল উন্মুক্ত পরিসর, যা পূর্বে পানির ফোয়ারা ছিল। মসজিদটি পূর্বে বিশাল চত্বর সুউচ্চ শেডে ঢাকা। এ স্থানটিতে বড় বড় অনুষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতা, সেমিনার ও মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। বর্তমানে এ মসজিদটির প্রধান আকর্ষণ হলো এর সুউচ্চ মিনার, যা এ দেশে ইসলামী ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক।

Baitul-Mukarram

ব্যবস্থাপনা
বর্তমানে মসজিদটি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত হয়ে আসছে। এ মসজিদেই অবস্থিত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষ। যেখানে হিজরি বৎসর সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতার বাছাইপর্বও এ মসজিদের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশনক কর্তৃক পরিচালিত বিশাল লাইব্রেরি ও পাঠাগার এ মসজিদ ভবনেই অবস্থিত।

বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর এবং দক্ষিণ পাশের ‘আল্লাহু আকবার’ লেখাটি রাতের বেলায় মসজিদের সৌন্দর্যকে অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের অবয়ব অনেকটা পবিত্র কাবা শরিফের মতো হওয়ায় মুসলমানদের হৃদয়ে এই মসজিদটি আলাদা জায়গা করে নিয়েছে।

এমএমএস/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।