ইসলামে জাকাতের বিধান


প্রকাশিত: ০৯:২৯ এএম, ০৩ জুলাই ২০১৬

ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম স্তম্ভই হচ্ছে জাকাত। মুসলমানের জন্য ঈমান আনার পর নামাজ-রোজা যেমন ফরজ ঠিক জাকাতও তেমনই ফরজ। ইসলাম ও মুসলমানের জন্য জাকাতের গুরুত্ব অত্যাধিক। ইসলামের আর্থিক ফরজ ইবাদাতের মধ্যে জাকাত একটি। তাইতো ইসলামী অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তিই হচ্ছে জাকাত। আল্লাহ তাআলা কুরআনের অনেক জায়গায় জাকাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। ইসলামে জাকাতের বিধান সম্পর্কিত কিছু কথা তুলে ধরা হলো-

জাকাতের বিধান
জাকাতের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা কর এবং জাকাত আদায় করো। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হাদিসে এসেছে-

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত মুয়া’জ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ইয়ামেনে (শাসকরুপে)প্রেরণকালে বলেন, সেখানের অধিবাসীদেরকে আল্লাহ ব্যতিত কোনো ইলাহ নেই এবং আমি (মুহাম্মদ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসুল- এ কথা সাক্ষ্যদানের দাওয়াত দেবে। যদি তারা এ কথা মেনে নেয়, তাহলে তাদেরকে জানিয়ে দেবে, আল্লাহ তাআলা তাদের ওপর প্রতিদিন ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। তারা যদি এ কথা মেনে নেয়, তবে তাদেরকে জানিয়ে দেবে, আল্লাহ তাদের সম্পদের উপর সাদকা (জাকাত) ফরজ করেছেন। তাদের মধ্যকার (নিসাব পরিমাণ) সম্পদশালীর নিকট থেকে (জাকাত) উত্তোলন করে তাদের (সমাজের) দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করে দেয়া হয়।

যে সম্পদের জাকাত দিবে
মানুষের সকল সামগ্রীর ওপর জাকাত ফরজ নয়; বরং চার প্রকারের ধন-সম্পদের ওপর জাকাত আবশ্যক হয়। তা হলো-
ক. সোনা-রূপা বা নগদ মুদ্রা।
খ. তেজারতি বা ব্যবসার দ্রব্যসামগ্রী।
গ. নির্দিষ্ট সংখ্যক গৃহপলিত পশু এবং
ঘ. ভূমির উৎপন্ন ফসল। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, পাঁচ আওসাকের কম খেজুরের জাকাত নেই; পাঁচ আওকিয়ার কম রূপা কোনো জাকাত নেই; এবং পাঁচ জাওদের কম সংখ্যক উটের জাকাত নেই। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)

আওসাক
আমাদের দেশীয় হিসাব অনুযায়ী ১ আওসাক = ৬০ সা; ১ সা = ৩ সের ৯ ছটাক; অতএব ৫ আওসাক = ২৬মন ২৬ সের ৯ ছটাক। কারো কারো মতে ৫ আওসাক = ২৮ মন। ২৮ মনের কম খেজুর হলে জাকাত নেই।

আওকিয়া
১ আওকিয়া = ৪০ দিরহাম; সুতরাং ৫ আওকিয়া = ২০০ দিরহাম। যা আমাদের দেশীয় হিসাব অনুযায়ী এক দিরহাম = .২৬ তোলা, ফলে ২০০ দিরহাম = সাড়ে ৫২ তোলা।

জাওদ
এর পরিমান নির্ধারণে মতভেদ রয়েছে
>> কেউ কেউ বলেন, জাওদ বলতে ২ থেকে ৯ পর্যন্ত সংখ্যা;
>> কারো কারো মতে, জাওদ বলতে ৩ থেকে ১০ পর্যন্ত সংখ্যা;
>> আবার কেউ কেউ বলেন ৫ জাওদ বলতে কমপক্ষে ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ৫০টি উট।
সুতরাং এ নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের ওপরই জাকাত আবশ্যক হয়ে থাকে।

যে জিনিসের জাকাত নেই
এমন কিছু সম্পদ আছে যার পরিমাণ যত বেশিই হোক না কেন তাতে জাকাত ওয়াজিব হবে না। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মুসলমানদের ক্রীতদাস এবং ঘোড়া জাকাত নেই। অপর বর্ণনায় এসেছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তার ক্রীতদাসে সাদকায়ে ফিতর ছাড়া কোনো সাদকা নেই। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)

কোনো মুসলমানের নিত্য ব্যবহার্য জিনিস যার প্রতি সে সর্বদা মুখাপেক্ষী; এমন জিনিসের জাকাত ওয়াজিব হয় না। যেমন- ঘরের আসবাবপত্র ইত্যাদি।

পরিশেষে...
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআন এবং হাদিস অনুযায়ী জাকাত আদায় করে সম্পদের পবিত্র অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।