মুমিনের গুণাবলী ও কর্মের সফলতা পড়া হবে আজকের তারাবিতে
আজ রমজানের ২৩তম তারাবি। শুরু হবে জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাতের তৃতীয় দিন। আজকের বেজোড় রজনীতে আল্লাহ তাআলা শবে কদরও দান করতে পারেন। তাই আজকের তারাবির পরে ইবাদাত-বন্দেগিতে কাটানো উচিত। আজকের তারাবিতে সুরা আহক্বাফ, সুরা মুহাম্মাদ, সুরা ফাতহ এবং সুরা হুজরাত পড়া হবে। সে সঙ্গে ২৬তম পাড়ার তিলাওয়াত শেষ হবে। আজকের তারাবির সংক্ষিপ্ত আলোচ্যসূচি তুলে ধরা হলো-
সুরা আহক্বাফ : আয়াত ৩৫
সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ। আহক্বাফ ইয়েমেনের একটি জায়গার নাম। যেখানে আদ জাতির বসবাস ছিল। এ সুরায় আদ জাতির নাফরমানির কারণে তাদের ধ্বংসের বিবরণ স্থান পেয়েছে। যাতে অবিশ্বাসী নাফরমানদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে।
সুরাটির প্রথম আয়াতে একটি বিষয় সুস্পষ্ট করা হয়েছে, যারা ঈমান না আনা সত্ত্বেও যারা গরিব-দুঃখী সাহায্য করে, দুর্গতদের মাঝে মানবিক সেবা প্রদান করে, তাদের সেবা ও সাহায্য কোনো কাজে আসবে না। আল্লাহ বলেন, ‘যারা বিশ্বনবির নবুয়তকে অস্বীকার করে এবং পবিত্র কুরআনের সত্যতাও মানে না, তদুপরি মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিরত রাখে, তাদের যাবতীয় সৎকাজ বরবাদ হয়ে যায়। কেননা ঈমান ও ইখলাস ব্যতিত আল্লাহর নিকট কোনো নেক আমলই গ্রহণযোগ্য হয় না। এ সুরার মূল আলোচ্য বিষয় হলো-
১. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়তকে প্রমাণ করা; যতক্ষণ কেউ তাকে আল্লাহর নবি হিসেবে মেনে নিবে না, ততক্ষণ পবিত্র কুরআনের সত্যতায় বিশ্বাস করবে না। তাইতো সুরার শুরুতে বিশ্বনবির ওপর কুরআন নাজিল হওয়া রিসালাতের সর্বোচ্চ প্রমাণ।
২. বিশ্বজাহানের স্রষ্ঠা ও পালনকর্তা আল্লাহ তাআলার একত্ববাদের প্রমাণ। কারণ একমাত্র আল্লাহ তাআলাই আসমান জমিন সৃষ্টি করেছেন। তিনিই স্রষ্ঠা, তিনিই পালনকর্তা, তিনি এক ও অদ্বিতীয়। পৃথিবীর কোনো কিছুই তিনি ব্যতিত আপনা-আপনি সৃষ্টি হয়নি।
এ সুরার সর্বশেষ আয়াতে আল্লাহ তাআলা নাফরমান, পাপিষ্ঠদের অনিবার্য ধ্বংসের ঘোষণা দিয়েছেন। সুতরাং এক আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি বিশ্বাসী হওয়াই হলো বোধশক্তি সম্পন্ন মানুষের আবশ্যক কর্তব্য।
সুরা মুহাম্মাদ : আয়াত ৩৮
মাদানি সুরা মুহাম্মাদের আরেকটি নাম হলো ক্বিতাল। কারণ এ সুরায় আল্লাহ তাআলা জিহাদের কথা আলোচনা করেছেন। এ সুরার মূল বক্তব্য আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করেছেন-
যারা কাফের তথা অস্বীকারকারী, তাঁরা আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের দুশমন, তারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিরত রাখে; বিশ্বনবির সত্য-সাধনায় বাধা প্রদান করে; তাদের যাবতীয় সৎকাজ ব্যর্থ।
অতপর এ সুরায় মুসলমানদেরকে জিহাদের আদেশ দেয়া হয়েছে; এবং মুসলমানদের বিজয়ের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি এ কথার ঘোষণা এসেছে যে, মুসলমান জাতি কখন আল্লাহ তাআলার সাহায্য লাভের যোগ্য বিবেচিত হবে।
এ সুরায় মক্কার কাফেরদের ধ্বংসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ইসলামের বিরুদ্ধে মদিনার মুনাফিকদের চক্রান্তের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এবং এ সুরার সমাপ্তিতে মুসলিম জাতিকে আল্লাহর রাহে জিহাদের আহ্বান করা হয়েছ। কেননা জিহাদের মাধ্যমেই মুসলিম জাতি বিজয় ও সাফল্য অর্জন করতে পারে।
সুরা ফাতহ : আয়াত ২৯
সুরাটি মদিনায় অবতীর্ণ। যা ঐতিহাসিক হুদায়বিয়ার সন্ধিকে কেন্দ্র করেই নাজিল হয়। আলোচ্য সুরায় মুসলমানদের বিজয়ের সুসংবাদ রয়েছে। প্রকৃত মুমিনদের গুণাবলী, ইখলাস, ত্যাগ-তিতিক্ষা, ধৈর্য ও সহনশীলতা, আল্লাহ তাআলার প্রতি আনুগত্য এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও পরিপূর্ণ আনুগত্য প্রভৃতি গুণাবলীর কারণে আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে যে সুস্পষ্ট ও মহান বিজয় দান করেছেন এ সুরায় তার বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে।
সুরা হুজরাত : আয়াত ১৮
এ সুরাটিও মদিনায় অবতীর্ণ। মুসলমানদের ঈমান উপযোগী আদব-কায়দা ও নিয়ম-নীতির শিক্ষা দেয়া হয়েছে। কোনো কিছু শুনার পর সে ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করার পূর্বে সে বিষয়ে সুক্ষ্ন, বিশ্বস্তসূত্র ও নির্ভরযোগ্য তথ্য জেনে সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়টি আলোচিত হয়েছে।
সামাজিক ও সামষ্টিক জীবনে ভাঙ্গন, বিপর্যয় বা অশান্তি সৃষ্টি করে এমন সব অন্যায় ও অনুচিত কাজ-কর্ম হতে বিরত থাকতে মুসলিম উম্মাহকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এ সুরায়। যেমন-পরস্পরকে ঠাট্টা-বিদ্রোপ, গালাগালি, মন্দ নামে ডাকা, অন্যের ব্যাপারে মন্দ ধারণা পোষণ ও পরনিন্দার চর্চা করা।
সর্বোপরি এ সুরায় সাধনার মাধ্যমে মুসলমানের আত্মশুদ্ধি অর্জনের বিষয় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ হয়েছে।
সুরা ক্বাফ : আয়াত ৪৫
মক্কায় অবতীর্ণ সুরা ক্বাফে পরকাল, কিয়ামাত, মৃতদের পুনরুজ্জীবন ও হিসাব-নিকাশ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। সুরাটির মূল বক্তব্য হলো- বিশ্ব সৃষ্টির প্রথম অবস্থা; মৃত্যুর পর পুনর্জীবন; আল্লাহর দরবারে দণ্ডায়মান হওয়ার বিষয়; ভালো ও মন্দের হিসাব-নিকাশ; জান্নাতের সুখ-শান্তি ও জাহান্নামের আযাব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে। সর্বোপরি মানুষকে জান্নাতের জন্য অনুপ্রাণিত করে দোজখের প্রতি ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে।
সুরা যারিয়াত : আয়াত ৬০
সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ। একত্ববাদ, নবুয়ত ও হাশরের ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে সুরাটিতে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের এ গুরুত্বপূর্ণ সুরাগুলো বুঝে পড়ার এবং তাঁর ওপর আমল করার পাশাপাশি নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসকে শিরকমুক্ত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস