শবে মেরাজের বিশেষ কোনো আমল আছে কি?

ইসরা ও মেরাজ বিশ্বনবি মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও মুজিজা। এক রাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে প্রথম মসজিদুল আকসায় নিয়ে যাওয়া হয়, মসজিদুল আকসা থেকে উর্ধ্বজগত ভ্রমণে নিয়ে যাওয়া হয়। মক্কা থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত নবিজির (সা.) রাতের ভ্রমণ ইসরা নামে এবং মসজিদুল আকসা বা বাইতুল মুকাদ্দাস থেকে উর্ধ্বাজগত ভ্রমণ মেরাজ নামে পরিচিত।
ইসরা ও মেরাজের রাতে আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়াতাআলা নবিজিকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার কিছু বড় নিদর্শন দেখিয়েছিলেন এবং তাকে অনেক নেয়ামতও দান করেছিলেন।
তাই এ রাতটি নবিজির (সা.) নবুয়্যতের জীবনে অত্যন্ত স্মরণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ রাত ছিল তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু নবিজি (সা.) এ রাতটিকে বিশেষভাবে পালন করেছেন এ রকম কোনো প্রমাণ হাদিসে ও সাহাবিদের বক্তব্যে পাওয়া যায় না।
মেরাজের ঘটনা ঘটেছিল হিজরতের এক বা দেড় বছর আগে নবিজির মক্কী জীবনে। এরপর তিনি আরও অন্তত এক বছর মক্কায় ছিলেন। তারপর হিজরত করে মদিনায় যান এবং আরও দশ বছর বেঁচে থাকেন। কিন্তু এ দীর্ঘ সময়ে তিনি নিজে মেরাজের রাতটির স্মরণে বিশেষ কোনো আমল করেছেন বা কাউকে বিশেষ কোনো আমল করতে বলেছেনÑগ্রহণযোগ্য সূত্রে এ রকম কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈ বা তাবে-তাবেঈদের যুগেও মেরাজের রাতটিকে বিশেষভাবে পালন করার প্রচলন ছিল না।
আমাদের দেশে ২৬ রজব দিবাগত রাত বা ২৭ রজবের রাতটিকে ‘শবে মেরাজ’ হিসেবে পালন করা হয়। কিন্তু মেরাজের ঘটনা রজবের ২৭ তারিখে হয়েছিল-এ কথাও বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত নয়। এই তারিখটি শুধু এমন একটি বর্ণনায় পাওয়া যায়, যার সনদ বিশুদ্ধ নয়। মেরাজ কবে হয়েছিল সে সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য সনদে শুধু এটুকু পাওয়া যায় যে, তা হিজরতের এক বা দেড় বছর আগে সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু কোন দিন, মাস বা তারিখে সংঘটিত হয়েছে এ ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য সূত্রে কিছুই নেই। তাই এই তারিখকে নিশ্চিতভাবে মেরাজের রাত হিসেবে ধরে নেওয়াও ঠিক নয়।
অনেকে ২৭ রজব মেরাজের রাতে বিশেষ সওয়াবের আশায় নামাজ আদায় করে থাকেন, পরদিন রোজাও রাখেন। কিন্তু ওপরে যেমন বলেছি, এ রাতের নামাজ, রোজা বা এ সব আমলের বিশেষ কোনো ফজিলতের কথা গ্রহণযোগ্য সূত্রে বর্ণিত কোনো হাদিসে পাওয়া যায় না। এ রাতের নামাজ-রোজার ফজিলত সম্বলিত কিছু হাদিস প্রচার করা হয় যেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই।
তাই বিশেষ ফজিলতপূর্ণ বিশ্বাস করে শবে মেরাজ উপলক্ষে নামাজ আদায় করলে বা রোজা রাখলে তা বিদআত বা নবউদ্ভাবিত আমল গণ্য হবে।
ইসলামের উৎস হলো কোরআন ও রাসুলের সুন্নত অর্থাৎ তার কথা, কাজ ও সমর্থন। কোরআন ও রাসুলের সুন্নত ছাড়া অন্য কোনো সূত্রে আমলের নতুন কোনো ধরন উদ্ভাবন করে তাকে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ মনে করলে তা হয় দীনের মধ্যে নতুন উদ্ভাবন বা বিদআত। রাসুল (সা.) তার উম্মতকে দীনের মধ্যে নতুন উদ্ভাবিত বিষয় বা বিদআত থেকে বেঁচে থাকতে বলেছেন। রাসুল (সা.) বলেন, সব নতুন উদ্ভাবিত বিষয় থেকে বেঁচে থাকো, সব নতুন উদ্ভাবিত বিষয়ই বিদআত আর সব বিদআতই পথভ্রষ্টতা। (সুনানে তিরমিজি, সুনানে আবু দাউদ, মুসনাদে আহমদ)
ওএফএফ/জিকেএস