যেভাবে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন ইহুদি রাব্বি হুসাইন
আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) ছিলেন বিশ্বনবি হজরত মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একজন সাহাবি। ইসলাম গ্রহণের আগে তিনি মদিনার ইহুদি সম্প্রদায়ের একজন বড় রাব্বি বা ধর্মগুরু ছিলেন। তার নাম ছিল হুসাইন, উপনাম আবু ইউসুফ। নবিজি (সা.) মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় যাওয়ার পর কিছুদিনের মধ্যেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণের পর নবিজি তার নাম রাখেন আব্দুল্লাহ।
নবিজি (সা.) মদিনায় যাওয়ার পর উৎসুক মদিনাবাসী যখন দলে দলে নবিজিকে (সা.) দেখতে যাচ্ছিলেন, আবদুল্লাহ ইবনে সালামও (রা.) তাদের সাথে নবিজিকে (সা.) দেখতে গিয়েছিলেন। নবিজিকে (সা.) দেখেই তার মনে হয়েছিল, এই ব্যক্তি মিথ্যুক হতে পারেন না। আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় এলেন, লোকেরা তাকে দেখার জন্য ছুটে যাচ্ছিল এবং বলছিল, ‘আল্লাহর রাসুল এসেছেন!’ ‘আল্লাহর রাসুল এসেছেন!’ আমিও সবার সাথে তাকে দেখতে গেলাম। তার চেহারা ভালোভাবে দেখে আমি বুঝতে পারলাম, এটা মিথ্যাবাদীর চেহারা নয়। সর্বপ্রথম তার মুখে আমি যা শুনেছিলাম, তিনি বলেছিলেন, লোকসকল! আপনারা সালামের ব্যাপক প্রচলন করুন, খাবার খাওয়ান, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করুন এবং রাতে মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে, তখন নামাজ আদায় করুন, তাহলে আপনারা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। (সুনানে তিরমিজি: ২৪৮৫)
আব্দুল্লাহ ইবনে সালামের (রা.) ইসলাম গ্রহণের ঘটনা বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন হজরত আনাস (রা.)। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু সালামের কাছে যখন আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মদিনায় আগমনের খবর পৌঁছল, তখন তিনি তার কাছে এলেন। তিনি বললেন, আমি আপনাকে এমন তিনটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে চাই যা নবি ছাড়া আর কেউ জানবেন না। তারপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কিয়ামতের প্রথম নিদর্শন কি? জান্নাতবাসী সর্বপ্রথম কী খাবার খাবে? সন্তান কখন বাবার সাদৃশ্য লাভ করে আর কখন মাতৃকুলের সাদৃশ্য লাভ করে?
আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এইমাত্র জিবরাইল (আ.) এ বিষয়ে আমাকে জানিয়েছেন। কেয়ামতের প্রথম নিদর্শন হল আগুন যা মানুষকে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে তাড়িয়ে নিয়ে একত্রিত করবে। জান্নাতবাসী প্রথম যে খাবার খাবে তা হলো মাছের কলিজার অতিরিক্ত অংশ। পুরুষ-নারীর মিলনের সময় যদি পুরুষের বীর্য অগ্রগামী বা প্রবল হয়, তাহলে সন্তান তার সাদৃশ্য লাভ করে আর নারীর বীর্য অগ্রগামী বা প্রবল হলে সন্তান তার সাদৃশ্য লাভ করে।
আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি নিঃসন্দেহে আপনি আল্লাহর রাসুল। এরপর তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, ইহুদিদের মিথ্যা বলা ও অপবাদ দেওয়ার অভ্যাস আছে। আপনি তাদেরকে আমার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করার আগে তারা যদি আমার ইসলাম গ্রহণের খবর জেনে ফেলে, তাহলে তারা আপনার কাছে আমার ব্যাপারে মিথ্যা বলবে।
তারপর ইহুদিরা উপস্থিত হলে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনে সালাম কেমন ব্যক্তি? তারা বললো, তিনি আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যাক্তি এবং সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যাক্তির পুত্র। তিনি আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যাক্তি এবং সর্বোত্তম ব্যাক্তির পুত্র।
আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যদি আবদুল্লাহ ইসলাম গ্রহন করে, এতে তোমাদের অভিমত কী হবে? তারা বললো, এর থেকে আল্লাহ তার তাকে রক্ষা করুন। এমন সময় আবদুল্লাহ (রা.) তাদের সামনে বের হয়ে এলেন এবং বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল।
তখন ইহুদিরা বলতে লাগল, সে আমাদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যাক্তি এবং সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যাক্তির সন্তান এবং তারা তার ব্যাপারে কুৎসা রটনায় লিপ্ত হয়ে গেল। (সহিহ বুখারি: ৩০৯৪)
ইসলাম গ্রহণের আগে ইহুদি ধর্মের একজন আলেম ও রাব্বি হওয়ায় আবদুল্লাহ ইবনে সালামের ইসলাম গ্রহণ ছিল নবিজির (সা.) নবুয়্যত ও ইসলামের সত্যতার পক্ষে এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল। কোরআনে আল্লাহ তাআলা তার গ্রহণের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন,
قُلۡ اَرَءَیۡتُمۡ اِنۡ كَانَ مِنۡ عِنۡدِ اللّٰهِ وَ كَفَرۡتُمۡ بِهٖ وَ شَهِدَ شَاهِدٌ مِّنۡۢ بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ عَلٰی مِثۡلِهٖ فَاٰمَنَ وَ اسۡتَكۡبَرۡتُمۡ اِنَّ اللّٰهَ لَا یَهۡدِی الۡقَوۡمَ الظّٰلِمِیۡنَ
বলুন, তোমরা কি ভেবে দেখেছ, যদি এ কোরআনে আল্লাহর পক্ষ থেকে এসে থাকে আর তোমরা একে অমান্য কর, বনি ইসরাঈলের একজন সাক্ষী এর পক্ষে সাক্ষ্য দিয়ে এতে বিশ্বাস স্থাপন করে আর তোমরা অহংকার কর, তবে তোমাদের চেয়ে অবিবেচক আর কে হবে? নিশ্চয় আল্লাহ অবিবেচকদেরকে পথ দেখান না। (সুরা আহকাফ: ১০)
আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَ یَقُوۡلُ الَّذِیۡنَ كَفَرُوۡا لَسۡتَ مُرۡسَلًا قُلۡ كَفٰی بِاللّٰهِ شَهِیۡدًۢا بَیۡنِیۡ وَ بَیۡنَكُمۡ وَ مَنۡ عِنۡدَهٗ عِلۡمُ الۡكِتٰبِ
আর যারা কুফরি করে, তারা বলে, তুমি রাসুল নও। বলুন, আল্লাহ আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট এবং যার কাছে কিতাবের জ্ঞান আছে সেও। (সুরা রা’দ: ৪৩)
ওএফএফ/জিকেএস