শেষ রাতে নবিজির (সা.) তিলাওয়াত ও দোয়া

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:০১ পিএম, ০৪ জানুয়ারি ২০২৫
শেষ রাতে নবিজি (সা.) তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তেন

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একবার আমি আমার খালা উম্মুল মুমিনীন মায়মুনার (রা.) বাড়িতে রাত কাটালাম। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সে রাতে তার বাড়িতে ছিলেন। ইশার পর কিছু সময় তিনি তার স্ত্রী মায়মুনার সঙ্গে কথাবার্তা বললেন। তারপর শুয়ে পড়লেন।

রাতের শেষ তৃতীয়াংশে অথবা রাতের কিছু সময় অবশিষ্ট থাকতে তিনি জেগে উঠলেন এবং আকাশের দিকে তাকিয়ে তিনি সুরা আলে ইমরানের শেষ এগারো আয়াত পাঠ করলেন,

إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَاخْتِلاَفِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لآيَاتٍ لِّأُوْلِي الألْبَابِ
নিশ্চয় আসমান ও জমিন সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধ সম্পন্ন লোকদের জন্যে।

الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَىَ جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذا بَاطِلاً سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
যারা দাঁড়িয়ে, বসে, ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষয়ে, (তারা বলে) পরওয়ারদেগার! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। সকল পবিত্রতা তোমারই, আমাদেরকে তুমি দোজখের শাস্তি থেকে বাঁচাও।

رَبَّنَا إِنَّكَ مَن تُدْخِلِ النَّارَ فَقَدْ أَخْزَيْتَهُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ
হে আমাদের পালনকর্তা! নিশ্চয় তুমি যাকে দোজখে নিক্ষেপ করলে তাকে অপমানিত করলে; আর জালেমদের জন্যে তো সাহায্যকারী নেই।

رَّبَّنَا إِنَّنَا سَمِعْنَا مُنَادِيًا يُنَادِي لِلإِيمَانِ أَنْ آمِنُواْ بِرَبِّكُمْ فَآمَنَّا رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الأبْرَارِ
হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা নিশ্চিতরূপে শুনেছি একজন আহবানকারীকে ইমানের প্রতি আহবান করতে যে, তোমাদের পালনকর্তার প্রতি ইমান আন; তাই আমরা ইমান এনেছি। হে আমাদের পালনকর্তা! অতঃপর আমাদের সকল গোনাহ মাফ কর এবং আমাদের সকল দোষত্রুটি দুর করে দাও, আর আমাদের মৃত্যু দাও নেক লোকদের সাথে।

رَبَّنَا وَآتِنَا مَا وَعَدتَّنَا عَلَى رُسُلِكَ وَلاَ تُخْزِنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّكَ لاَ تُخْلِفُ الْمِيعَادَ
হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে দাও, যা তুমি ওয়াদা করেছ তোমার রাসুলগণের মাধ্যমে এবং কিয়ামতের দিন আমাদেরকে তুমি অপমানিত করো না। নিশ্চয় তুমি ওয়াদা খেলাফ করো না।

فَاسْتَجَابَ لَهُمْ رَبُّهُمْ أَنِّي لاَ أُضِيعُ عَمَلَ عَامِلٍ مِّنكُم مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَى بَعْضُكُم مِّن بَعْضٍ فَالَّذِينَ هَاجَرُواْ وَأُخْرِجُواْ مِن دِيَارِهِمْ وَأُوذُواْ فِي سَبِيلِي وَقَاتَلُواْ وَقُتِلُواْ لأُكَفِّرَنَّ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَلأُدْخِلَنَّهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الأَنْهَارُ ثَوَابًا مِّن عِندِ اللّهِ وَاللّهُ عِندَهُ حُسْنُ الثَّوَابِ
অতঃপর তাদের পালনকর্তা তাদের দোয়া এই বলে কবুল করে নিলেন যে, আমি তোমাদের কোন পরিশ্রমকারীর পরিশ্রমই বিনষ্ট করি না, তা সে পুরুষ হোক কিংবা নারী। তোমরা পরস্পর এক। তারপর সে সমস্ত লোক যারা হিজরত করেছে, তাদেরকে নিজেদের দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে এবং তাদের প্রতি উৎপীড়ন করা হয়েছে আমার পথে এবং যারা লড়াই করেছে ও মৃত্যুবরণ করেছে, অবশ্যই আমি তাদের উপর থেকে অকল্যাণকে অপসারিত করব। এবং তাদেরকে প্রবেশ করাবো জান্নাতে যার তলদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত। এই হলো বিনিময় আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর আল্লাহর নিকট রয়েছে উত্তম বিনিময়।

لاَ يَغُرَّنَّكَ تَقَلُّبُ الَّذِينَ كَفَرُواْ فِي الْبِلاَدِ
নগরীতে কাফেরদের চাল-চলন যেন তোমাদেরকে ধোঁকা না দেয়।

مَتَاعٌ قَلِيلٌ ثُمَّ مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ وَبِئْسَ الْمِهَادُ
এটা হলো সামান্য ভোগবিলাস-এরপর তাদের ঠিকানা হবে দোজখ। আর সেটি হলো অতি নিকৃষ্ট অবস্থান।

لَكِنِ الَّذِينَ اتَّقَوْاْ رَبَّهُمْ لَهُمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا نُزُلاً مِّنْ عِندِ اللّهِ وَمَا عِندَ اللّهِ خَيْرٌ لِّلأَبْرَارِ
কিন্তু যারা ভয় করে নিজেদের পালনকর্তাকে তাদের জন্যে রয়েছে জান্নাত যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে প্রস্রবণ। তাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে সদা আপ্যায়ন চলতে থাকবে। আর যা আল্লাহর নিকট রয়েছে, তা সৎকর্মশীলদের জন্যে উত্তম।

وَإِنَّ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ لَمَن يُؤْمِنُ بِاللّهِ وَمَا أُنزِلَ إِلَيْكُمْ وَمَا أُنزِلَ إِلَيْهِمْ خَاشِعِينَ لِلّهِ لاَ يَشْتَرُونَ بِآيَاتِ اللّهِ ثَمَنًا قَلِيلاً أُوْلَـئِكَ لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ إِنَّ اللّهَ سَرِيعُ الْحِسَابِ
আর আহলে কিতাবদের মধ্যে কেউ কেউ এমনও রয়েছে, যারা আল্লাহর ওপর ইমান আনে এবং যা কিছু তোমার ওপর অবতীর্ণ হয় আর যা কিছু তাদের ওপর অবতীর্ণ হয়েছে সেগুলোর উপর, আল্লাহর সামনে বিনয়াবনত থাকে এবং আল্লাহর আয়াতসমুহকে স্বল্পমুল্যের বিনিময়ে সওদা করে না, তারাই হলো সে লোক যাদের জন্য বিনিময় রয়েছে তাদের পালনকর্তার কাছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ যথাশীঘ্র হিসাব চুকিয়ে দেন।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اصْبِرُواْ وَصَابِرُواْ وَرَابِطُواْ وَاتَّقُواْ اللّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
হে ঈমানদানগণ! ধৈর্য্য ধারণ কর এবং মোকাবেলায় দৃঢ়তা অবলম্বন কর। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক যাতে তোমরা সফল হতে পার।

(সুরা আলে ইমরান: ১৯০-২০০)

এ আয়াতগুলো তিলাওয়াত করে তিনি অজুর পাত্রের কাছে গেলেন। পাত্রের বাঁধন খুলে তাতে পানি ঢাললেন। তারপর মধ্যম ধরনের অজু করলেন। (অর্থাৎ শরীরে দরকারী পানি পৌঁছালেন। তবে খুব অল্প পানি খরচ করলেন।) তারপর তিনি দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে লাগলেন।

ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আমি নিজেও উঠলাম। অজু করে তার বাম পাশে দাঁড়িয়ে গেলাম। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার কান ধরে তার বাম পাশ থেকে ঘুরিয়ে এনে আমাকে তার ডান পাশে দাঁড় করালেন।

তের রাকাত নামাজ আদায় করে তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। শুয়ে পড়লে তিনি নাক ডাকতেন। তাই তার নাক ডাকা শুরু হলো। ইতোমধ্যে বেলাল এসে নামাজের প্রস্তুতির ঘোষণা দিলেন। তিনি নামাজ আদায় করলেন।

নামাজ শেষে তিনি দোয়া করলেন,

اللَّهُمَّ اجْعَلْ فِي قَلْبِي نُورًا وَفِي بَصَرِي نُورًا وَفِي سَمْعِي نُورًا وَعَنْ يَمِينِي نُورًا وَعَنْ يَسَارِي نُورًا وَفَوْقِي نُورًا وتحتي نورا وأمامي نورا وَخَلْفِي نُورًا وَاجْعَلْ لِي نُورًا

উচ্চারণ: আল্লহুম্মা-জ্’আল ফী কালবী নূরাওঁ ওয়াফী বাসারী নূরাওঁ ওয়া ফী সাম্’ঈ নূরাওঁ ওয়া আন ইয়ামীনী নূরাওঁ ওয়া আন ইয়াসারী নূরাওঁ ওয়া ফাওক্বী নূরাওঁ ওয়া তাহতী নূরাওঁ ওয়া আমামী নূরাওঁ ওয়া খলফী নূরাওঁ ওয়াজ্’আল্ লী নূরা।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমার হৃদয়ে, আমার চোখে, আমার কানে, আমার ডানে, আমার বামে, আমার ওপরে, আমার নিচে, আমার সম্মুখে, আমার পেছনে নূর দিয়ে পূর্ণ করে দিন। আমার জন্যে কেবল নূরই-নূর সৃষ্টি করে দিন।

সূত্র: সহিহ বুখারি ৬৩১৬, সহিহ মুসলিম ৭৬৩

ওএফএফ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।