মসজিদ নির্মাণে হারাম সম্পদ ব্যয় করা যাবে কি?

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:২৪ পিএম, ০৪ জানুয়ারি ২০২৫
মসজিদ আল্লাহর ইবাদতের স্থান

মসজিদ আল্লাহর ঘর। আল্লাহর ইবাদতের মর্যাদাপূর্ণ স্থান। কোরআনে আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তাআলা মসজিদকে মর্যাদায় সমুন্নত করার ও মসজিদে তার নাম স্মরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং মসজিদে ইবাদতকারীদের প্রশংসা করেছেন। আল্লাহ বলেন, যেসব গৃহকে মর্যাদায় সমুন্নত করতে এবং তাতে তাঁর নাম স্মরণ করতে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, সেখানে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এমন ব্যক্তিরা যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয় বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে, নামাজ কায়েম ও জাকাত প্রদান থেকে বিরত রাখেনা, তারা ভয় করে সেই দিনকে যেদিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। (সুরা নুর: ৩৬, ৩৭)

মুসলমানদের সমাজের একটি অপরিহার্য ইমারত ও প্রতিষ্ঠান মসজিদ। এটি মুসলমানদের সম্মিলিতভাবে নামাজ আদায়ের স্থান, দীন শেখার স্থান এবং মুসলমানদের সব ধরনের সামাজিক কার্যক্রমের কেন্দ্র। মসজিদ নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা মুসলমানদের দায়িত্ব, যা শুধু মুসলমানদের অর্থে এবং হালাল উপায়ে উপার্জিত অর্থে সম্পন্ন করা আবশ্যক। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, একমাত্র তারাই আল্লাহর মসজিদসমূহ আবাদ করবে যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ইমান রাখে, নামাজ কায়েম করে, জাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না। আশা করা যায়, তারা হিদায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সুরা বাকারা: ১৮)

মসজিদ নির্মাণ বা ব্যবস্থাপনায় অবৈধ সম্পদ বা হারাম সম্পদ ব্যয় করা হারাম। এতে মসজিদকে অপবিত্র করা হয়। তাই দানকৃত কোনো অর্থ বা সম্পদ হারাম—এ কথা নিশ্চিত জানা থাকলে মসজিদ নির্মাণে ওই সম্পদ ব্যয় করা যাবে না। আর যদি দানকৃত বস্তু সম্পর্কে জানা না যায়, তাহলে দেখতে হবে দাতার অধিকাংশ আয় হালাল কি না। যদি অধিকাংশ হালাল হয় তাহলে তার প্রদত্ত বস্তু নেওয়া যাবে এবং মসজিদে ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু দাতার অধিকাংশ আয় যদি হারাম হয় তাহলে মসজিদ নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনায় ওই ব্যক্তির দান গ্রহণ করা জায়েজ হবে না এবং ওই অর্থ-সম্পদ মসজিদের কাজে ব্যয় করাও জায়েজ হবে না।

একজন মুসলমানের জন্য রিজিক উপার্জনের জন্য হালাল উপায় অবলম্বন করা জরুরি। দুর্নীতি, অন্যায়, অসততা, জুলুম বা অন্য কোনো অসদুপায়ে অর্থ উপার্জন করা হারাম, ওই সম্পদ খাওয়া, পরা ও অন্যান্য প্রয়োজনে খরচ করাও হারাম। হাদিসে এসেছে, হারাম সম্পদ খেয়ে মানুষের শরীরে যে রক্ত-মাংস হবে, তা জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে। কাব ইবনে উজরা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হারাম পস্থায় উপার্জিত সম্পদ দ্বারা সৃষ্ট ও পরিপুষ্ট মাংসের জন্য জাহান্নামের আগুনই উপযুক্ত। (সুনানে তিরমিজি: ৬১৪)

হারাম উপর্জনকারীর দোয়া কবুল হয় না। তার অন্যান্য ইবাদতও কবুল হয় না। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, লোকসকল! অবশ্যই আল্লাহ পবিত্র এবং তিনি শুধু পবিত্র বস্তুই কবুল করে থাকেন। আল্লাহ তাআলা মুমিনদের যে নির্দেশ দিয়েছেন, একই নির্দেশ দিয়েছেন তার নবিদেরও। আল্লাহ তার নবিদের উদ্দেশে বলেছেন, হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তুসমূহ থেকে আহার কর এবং সৎকাজ কর। তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত। (সুরা মুমিনুন: ৫১)

আল্লাহ তাআলা (মুমিনদের উদ্দেশে) বলেছেন, হে মুমিনগণ! আমি তোমাদের যে রিজিক দান করেছি তা থেকে পবিত্র বস্তু আহার কর। (সুরা বাকারা: ১৭২)

তারপর আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এক ব্যক্তি দীর্ঘ সফরে আলুথালু ধূলিমলিন বেশে নিজের দুই হাত আকাশের দিকে দীর্ঘ করে তুলে দোয়া করে, ‘হে আমার রব! হে আমার রব!’ কিন্তু তার খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পরিধেয় পোশাক হারাম এবং হারাম খেয়েই তার শরীর গঠিত হয়েছে। তাই তার দোয়া কীভাবে কবুল হতে পারে? (সহিহ মুসলিম: ২৩৯৩)

ওএফএফ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।