আজানের আগে দরুদ পাঠ করা কি সুন্নত?
আমাদের দেশে অনেক মসজিদে আজান দেওয়ার আগে মুয়াজ্জিন দরুদ পাঠ করে থাকেন। এটি একটি ভিত্তিহীন আমল। আজানের আগে মুয়াজ্জিনের দরুদ পাঠ করার প্রচলন নবিজি (সা.) ও সাহাবিদের যুগে ছিল না। আজানের আগে এভাবে দরুদ পাঠ করা এবং এটাকে সুন্নত মনে করা বিদআত।
আজানের পর দরুদ পাঠ করা সুন্নত। আজানের সময় অযথা কথাবার্তা না বলে আজান শোনা ও আজানের জবাব দেওয়া এবং আজানের পর নবিজির (সা.) জন্য দোয়া করার বিশেষ ফজিলত ও পুরস্কারের ঘোষণা এসেছে হাদিসে। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
إِذَا سَمِعْتُمُ الْمُؤَذِّنَ فَقُولُوا مِثْلَ مَا يَقُولُ ثُمَّ صَلُّوا عَلَيَّ فَإِنَّهُ مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلَاةً صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا ثُمَّ سَلُوا اللَّهَ لِيَ الْوَسِيلَةَ فَإِنَّهَا مَنْزِلَةٌ فِي الْجَنَّةِ لَا تَنْبَغِي إِلَّا لِعَبْدٍ مِنْ عِبَادِ اللَّهِ وَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَنَا هُوَ فَمَنْ سَأَلَ لِيَ الْوَسِيلَةَ حَلَّتْ عَلَيْهِ الشَّفَاعَةُ
তোমরা মুয়াজ্জিনের আজান শুনলে উত্তরে সে শব্দগুলোরই পুনরাবৃত্তি করবে। আজান শেষে আমার ওপর দরুদ পাঠ করবে। কারণ যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করবে (এর পরিবর্তে) আল্লাহ তার ওপর দশবার রহমত বর্ষণ করবেন। এরপর আমার জন্য আল্লাহর কাছে ’ওয়াসিলা’ প্রার্থনা করবে। ’ওয়াসিলা’ হলো জান্নাতের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান, যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে শুধু একজন পাবেন। আর আমার আশা এ বান্দা আমিই হব। তাই যে ব্যক্তি আমার জন্য ’ওয়াসিলা’র দোয়া করবে, কেয়ামতের দিন তার জন্য সুপারিশ করা আমার জন্য ওয়াজিব হয়ে পড়বে। (সহিহ মুসলিম: ৩৮৪)
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আজান শুনে এ দোয়া পড়ে, তার জন্য সুপারিশ করা আমার অবশ্য করণীয় হয়ে পড়ে। দোয়াটি হলো,
اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রব্বা হাযিহিদ্ দা’ওয়াতিত তাম্মাতি ওয়াস্সলাতিল ক্বায়িমাতি আতি মুহাম্মাদা-নিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাযীলাহ্, ওয়াব্আসহু মাক্বামাম্ মাহমূদানিল্লাযী ওয়াআদতাহ্
অর্থ: হে আল্লাহ! এ পরিপূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠিত নামাজের প্রভু! আপনি মুহাম্মাদকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দান করুন ওয়াসীলা ও সুমহান মর্যাদা এবং প্রশংসিত স্থানে পৌঁছান তাকে যার ওয়াদা আপনি তাকে দিয়েছেন। (সহিহ বুখারি: ৬১৪)
আরেকটি হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, আজান শুনে যে ব্যক্তি নিম্নোক্ত দোয়া পড়ে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়,
وَأَنَا أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبًّا وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولاً وَبِالإِسْلاَمِ دِينًا
উচ্চারণ: ওয়া আনা আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লা-ল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু রাজিতু বিল্লাহি রাব্বা ওয়া বি মুহাম্মাদিন রাসুলা ওয়া বিলইসলামি দীনা।
অর্থ: এবং আমিও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, এক আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই। তার কোনো শরিক নেই, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার বান্দা ও রাসুল, আমি আল্লাহকে রব হিসেবে, মুহাম্মাদকে রাসুল হিসেবে এবং ইসলামকে দীন হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট। (সুনানে আবু দাউদ)
ওএফএফ/জিকেএস