ইসলামে সন্তানকে ত্যাজ্য করা কি জায়েজ?
ইসলামে নিজের সন্তানকে ত্যাজ্য করা বা তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার কোনো সুযোগ নেই। কেউ নিজের কোনো সন্তানকে মৌখিকভাবে লিখিতভাবে ত্যাজ্য করলে ইসলামি আইনে তা বাস্তবায়িত হয় না। তার মৃত্যুর পর ত্যাজ্য সন্তানও অন্যান্য সন্তানদের মতোই তার পরিত্যক্ত সম্পদের উত্তরাধিকারী হয়।
বাবা যদি বিশেষ কোনো সন্তানকে তার পরিত্যাক্ত সম্পদ না দেওয়ার মৌখিক বা লিখিত নির্দেশনা দিয়ে মারা যান, তাহলেও তার ওই নির্দেশনা কার্যকর করা যায় না। কারণ মিরাস বা মৃতের পরিত্যক্ত সম্পদ কে কতটুকু পাবে তা আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কারো নির্দেশনা বা কথার কারণে আল্লাহর বিধান পরিবর্তিত হয় না।
সন্তানকে সম্পদ থেকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে মৃত্যুর আগে সব সম্পদ দান করে দেওয়া বা এ রকম যে কোনো কৌশল অবলম্বন করা গুনাহের কাজ। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ওয়ারিসকে মিরাস থেকে বঞ্চিত করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের মিরাস থেকে বঞ্চিত করবেন। (সুনানে ইবনে মাজা: ২৭০৩)
কোনো সন্তানকে পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে জীবিত অবস্থায় পুরো সম্পদ অন্যান্য সন্তানদের নামে লিখে দেওয়াও ইসলামের দৃষ্টিতে গুনাহের কাজ। উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রে ইসলাম সন্তানদের মধ্যে সমতা রক্ষা করার নির্দেশ দেয়। নবিজি (সা.) সন্তানদের মধ্যে বৈষম্য করে উপহার দেওয়াকে ‘জুলুম’ বলেছেন। নোমান ইবনে বশির (রা.) বলেন, একবার আমার বাবা আমার মায়ের অনুরোধে আমাকে কিছু সম্পদের মালিক বানিয়ে দিতে চাইলেন। তখন মা বললেন, এ ব্যাপারে আল্লাহর রাসুলকে (সা.) সাক্ষী রাখুন। আমি তখন ছোট বালক। বাবা আমার হাত ধরে আল্লাহর রাসুলের (সা.) কাছে নিয়ে গেলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, তার মা তাকে দেওয়া সম্পদের জন্য আপনাকে সাক্ষী রাখতে চাচ্ছেন। রাসুল (সা.) বললেন, এই ছেলে ছাড়া কি তোমার আরও সন্তান আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। নবিজি (সা.) বললেন, তাদের সবাইকে কি তুমি এ পরিমাণ সম্পদ দিয়েছ? তিনি বললেন, না। রাসুল (সা.) বললেন, তাহলে এ ক্ষেত্রে আমাকে সাক্ষী রেখো না। আমি জুলুমের সাক্ষী হতে চাই না। (সহিহ মুসলিম: ১২৪৩)
কোনো সন্তান যদি বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়, শরিয়তের বিধি-বিধানের প্রতি যত্নবান না হয়, গুনাহের পেছনে সম্পদ ব্যয় করে, তবুও তাকে সম্পদ থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করা যাবে না। বরং তার সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে। তার হেদায়াতের জন্য দোয়া করতে হবে।
ইসলামে যে কোনো রকম আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা হারাম। বাবা-মায়ের জন্য সন্তানের সঙ্গে বা সন্তানের জন্য বাবা-মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করাও হারাম। মুমিনের একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা। কোরআনে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন,
وَ الَّذِیۡنَ یَصِلُوۡنَ مَاۤ اَمَرَ اللّٰهُ بِهٖۤ اَنۡ یُّوۡصَلَ وَ یَخۡشَوۡنَ رَبَّهُمۡ وَ یَخَافُوۡنَ سُوۡٓءَ الۡحِسَابِ
আর আল্লাহ যে সম্পর্ক অটুট রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, যারা তা অটুট রাখে এবং তাদের রবকে ভয় করে, আর মন্দ হিসাবের আশঙ্কা করে। (সুরা রা’দ: ২১)
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা, আত্মীয়তার হক আদায় না করা কাফের ও পাপাচারীদের বৈশিষ্ট্য। কোরআনে আল্লাহ তাআলা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীদের সাবধান করে বলেছেন,
الَّذِیۡنَ یَنۡقُضُوۡنَ عَهۡدَ اللّٰهِ مِنۡۢ بَعۡدِ مِیۡثَاقِهٖ وَ یَقۡطَعُوۡنَ مَاۤ اَمَرَ اللّٰهُ بِهٖۤ اَنۡ یُّوۡصَلَ وَ یُفۡسِدُوۡنَ فِی الۡاَرۡضِ اُولٰٓئِكَ هُمُ الۡخٰسِرُوۡنَ
যারা আল্লাহর সঙ্গে সুদৃঢ় অঙ্গীকার করার পর তা ভঙ্গ করে এবং যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখার নির্দেশ আল্লাহ করেছেন, তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। (সুরা বাকারা: ২৭)
নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (সহিহ বুখারি: ৫৯৮৪, সহিহ মুসলিম: ২৫৫৬)
ওএফএফ/জিকেএস