নামাজে আঙুল ফোটানোর বিধান
নামাজের বাইরে বিনা প্রয়োজনে আঙুল ফোটানো অনুত্তম আর নামাজে আঙুল ফোটানো মাকরুহে তাহরিমি বা হারামের কাছাকাছি পর্যায়ের অপছন্দনীয় কাজ। তাই নামাজে আঙুল ফোটানো থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।
নামাজ ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ৮২ বার সরাসরি নামাজের কথা বলেছেন। নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে বহু হাদিস বর্ণিত রয়েছে। সুরা বাকারার শুরুতে মুত্তাকিদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হিসেবে ইমান, নামাজ আদায় ও জাকাত প্রদানের কথা উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা বলেন, এই সেই কিতাব, যাতে কোনো সন্দেহ নেই, মুত্তাকিদের জন্য হেদায়াত। যারা গায়েবের প্রতি ইমান আনে, নামাজ আদায় করে এবং আমি তাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। (সুরা বাকারা: ৩, ৪)
নামাজ মহান আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্কের মাধ্যম। নামাজে বান্দা সরাসরি আল্লাহ তাআলার দরবারে দাঁড়ায়। তার প্রতি প্রশংসা নিবেদন করে, তার কাছে প্রার্থনা করে। বান্দা যখন নামাজ আদায়ের জন্য দাঁড়ায়, তখন সে মহান আল্লাহর সঙ্গে একান্তে কথা বলে। রাসুলে কারিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যখন আপনাদের কেউ নামাজে দাঁড়ায়, তখন সে তার রবের সাথে একান্তে কথা বলে। (সহিহ বুখারি: ৪০৫)
তাই বান্দার অবশ্যকর্তব্য নামাজে অত্যন্ত বিনয়ী ও বিনম্র থাকা। নিজের আত্মা ও অন্তরকে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহমুখী করা। নামাজে যিনি যত বেশি আল্লাহমুখী তার নামাজ ততই প্রাণবন্ত। খুশুখুজু বা বিনয় ও একাগ্রতা নামাজের সৌন্দর্য। নামাজে যার মনোযোগ যত বেশি, তার নামাজ ততই গ্রহণযোগ্য।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয়ই সফলতা অর্জন করেছে মুমিনগণ, যারা নিজেদের নামাজে বিনয়ী ও একাগ্র। (সুরা মুমিনুন: ১, ২)
নামাজে অমনোযোগিতা ও লোক দেখানোর প্রবণতার জন্য শাস্তির ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, সেই নামাজ আদায়কারীদের জন্য দুর্ভোগ, যারা নিজেদের নামাজে অমনোযোগী, যারা লোক দেখানোর জন্য তা করে। (সুরা মাউন: ৪-৬)
নামাজে যথাযথ বিনয় ও একাগ্রতা না থাকলে, একাগ্র মনে আল্লাহমুখী হয়ে নামাজ না পড়লে নামাজের সওয়াব পুরোপুরি পাওয়া যায় না। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, এমন অনেক লোক আছে যারা নামাজ পড়ে কিন্তু তাদের নামাজ পুরাপুরি কবুল না হওয়ায় পূর্ণ সওয়াব তারা পায় না। তাদের কেউ দশ ভাগের এক ভাগ, কেউ নয় ভাগের এক ভাগ, আট ভাগের এক ভাগ, সাত ভাগের এক ভাগ, ছয় ভাগের এক ভাগ, পাঁচ ভাগের এক ভাগ, চার ভাগের এক ভাগ, তিন ভাগের এক ভাগ বা দুই ভাগের এক ভাগ সওয়াব পেয়ে থাকে। (সুনানে আবু দাউদ)
নামাজ যে কোনোভাবে আদায় করে ফেললেই হয়ে যায় না। যথাযথ মনোযোগ ও প্রাণ না থাকলে হতে পারে ওই নামাজের এক দশমাংশ সওয়াবও আপনি পাচ্ছেন না।
এ জন্য নামাজে সর্বতোভাবে মহান আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করতে হবে; আঙুল ফোটানো বা নখ কামড়ানোর মতো অনর্থক কাজে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। নামাজ আদায়কালে আঙুল ফোটানো, নখ কামড়ানো ও সব ধরনের অনর্থক কাজ থেকে বেঁচে থাকা কর্তব্য।
ওএফএফ/এমএস