যে আমলের পুরস্কার জান্নাত

ওমর ফারুক ফেরদৌস
ওমর ফারুক ফেরদৌস ওমর ফারুক ফেরদৌস , আলেম ও লেখক
প্রকাশিত: ০৪:২০ পিএম, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি বান্দার সবচেয়ে বড় সফলতা

ইসলামে দুনিয়া ও আখেরাতে সফল হওয়ার, জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি ও আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি, ক্ষমা ও জান্নাত লাভ করার উপায় হলো ইমান আনা, আল্লাহ যে আমলগুলো ফরজ করেছেন তা পালন করা এবং গুনাহসমূহ থেকে বেঁচে থাকা। কোরআনে সুরা বাকারার শুরুতে আল্লাহ তাআলা বলেন, যারা অদেখা বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে, নামাজ আদায় করে, আমি তাদেরকে যে রিজিক দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে সেসব বিষয়ের ওপর যা কিছু তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেসব বিষয়ের ওপর যা তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, আর যারা আখেরাতকে নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে, তারাই নিজেদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সুপথ প্রাপ্ত, আর তারাই যথার্থ সফলকাম। (সুরা বাকারা: ৩-৫)

সুরা শুরায় আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমাদেরকে যা কিছু দেয়া হয়েছে তা দুনিয়ার জীবনের ভোগ্য সামগ্রী মাত্র। আল্লাহর কাছে যা আছে তা উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী তাদের জন্য যারা ইমান আনে এবং তাদের রবের ওপর ভরসা করে। যারা গুরুতর পাপ ও অশ্লীল কার্যকলাপ থেকে বেঁচে থাকে এবং যখন রাগান্বিত হয় তখন তারা ক্ষমা করে দেয়। আর যারা তাদের রবের আহ্বানে সাড়া দেয়, নামাজ কায়েম করে, তাদের কার্যাবলি তাদের পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে সম্পন্ন করে এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে তারা ব্যয় করে। তাদের ওপর অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করা হলে তারা তার প্রতিবিধান করে। আর মন্দের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ। অতঃপর যে ক্ষমা করে দেয় এবং আপস নিষ্পত্তি করে, তার পুরস্কার আল্লাহর নিকট রয়েছে। নিশ্চয় আল্লাহ জালিমদের পছন্দ করেন না। (সুরা শুরা: ৩৬-৪০)

এ আয়াতগুলোতে দুনিয়া ও আখেরাতে সাফল্য অর্জনকারীদের বৈশিষ্ট্য হিসেবে ইমান, নামাজ আদায় করা, আল্লাহর দেওয়া সম্পদ থেকে সদকা করা বা জাকাত দেওয়া, বড় গুনাহ ও অশ্লীল কাজসমূহ থেকে বিরত থাকা, কারও ওপর ক্রুব্ধ হলে প্রতিশোধ নেওয়া বা শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা থাকলেও তাকে ক্ষমা করে দেওয়া, জুলুম থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে।

বেশ কিছু হাদিসেও নবিজি (সা.) জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাতে যাওয়ার উপায় হিসেবে এ আমলগুলোর কথা বলেছেন। আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, জনৈক গ্রাম্য আরব নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে এমন একটি কাজের সন্ধান দিন যা করলে আমি সহজে জান্নাতে পৌঁছতে পারবো। নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহর ইবাদাত করতে থাকবে, তার সাথে কাউকে শরিক করবে না, ফরজ নামাজ আদায় করবে, ফরজ জাকাত আদায় করবে এবং রমজানের রোজা পালন করবে- এ কথা শুনে লোকটি বললো, আল্লাহর কসম, যার হাতে আমার জীবন রয়েছে! আমি এর থেকে বেশিও করবো না, কমও করবো না। ওই ব্যক্তি চলে গেলে নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কেউ যদি জান্নাতি কোনো মানুষকে দেখে আনন্দিত হতে চায়, সে যেন এই ব্যক্তিকে দেখে। (সহিহ বুখারি: ১৩৯৭, সহিহ মুসলিম: ১৪)

আবু আইয়ুব (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি নবিজির (সা.) কাছে উপস্থিত হয়ে আরজ করল, এমন একটি আমলের কথা বলে দিন যা আমাকে জান্নাতে পৌঁছে দেবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তার সঙ্গে কোনো কিছু শরিক করবে না, নামাজ কায়েম করবে, জাকাত দেবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখবে। সে ব্যক্তি চলে গেলে আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, তাকে যে আমলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা দৃঢ়তার সাথে পালন করলে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সহিহ মুসলিম: ১৪)

আরেকটি হাদিসে নবিজি (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদত করে এবং তার সঙ্গে শরিক করা থেকে বিরত থাকে, নামাজ আদায় করে, জাকাত দেয় এবং কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে, তার পুরস্কার জান্নাত। (সুনানে নাসাঈ: ৪০০৯)

এ আয়াত ও হাদিসগুলো পাঠ করলে আমরা জান্নাতে যাওয়ার জন্য অপরিহার্য আমলগুলো সম্পর্কে বেশ স্পষ্ট ধারণা পেয়ে যাই। এ আমলগুলোই ইসলামের স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত। যেমন আরেকটি হাদিসে নবিজি (সা.) বলেছেন, পাঁচটি ভিত্তির ওপর দ্বীনে ইসলাম স্থাপিত। ১. এই সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো সত্য উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ তার বান্দা ও রাসুল; ২. নামাজ আদায় করা; ৩. জাকাত আদায় করা; ৪. বায়তুল্লাহর হজ করা এবং ৫. রমজানের রোজা পালন করা। (সহিহ বুখারি: ৮, সহিহ মুসলিম: ১২২)

ওএফএফ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।