মক্কার নিরাপত্তার জন্য হজরত ইবরাহিমের (আ.) দোয়া

ওমর ফারুক ফেরদৌস
ওমর ফারুক ফেরদৌস ওমর ফারুক ফেরদৌস , আলেম ও লেখক
প্রকাশিত: ০৪:১৪ পিএম, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪
মক্কার নিরাপত্তার জন্য দোয়া করেছিলেন হজরত ইবরাহিম (আ.)

ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর নবি এবং তার অত্যন্ত নেক ও প্রিয় একজন বান্দা। তার ইমানের দৃঢ়তা, আল্লাহমুখিতা, একনিষ্ঠতা ছিল অতুলনীয়। কোরআনে আল্লাহ তাআলা নবি ইবরাহিমের (আ.) আনুগত্য ও একনিষ্ঠতার প্রশংসা করেছেন এবং নবিজিকে নির্দেশ দিয়েছেন তার মিল্লাত বা আদর্শ অনুসরণ করতে। আল্লাহ বলেন,

إِنَّ إِبْرَاهِيمَ كَانَ أُمَّةً قَانِتًا لِلَّهِ حَنِيفًا وَلَمْ يَكُ مِنَ الْمُشْرِكِينَ شَاكِرًا لِأَنْعُمِهِ اجْتَبَاهُ وَهَدَاهُ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ وَآتَيْنَاهُ فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَإِنَّهُ فِي الْآخِرَةِ لَمِنَ الصَّالِحِينَ ثُمَّ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ أَنِ اتَّبِعْ مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا

নিশ্চয় ইবরাহিম ছিলেন এক উম্মত, আল্লাহর একান্ত অনুগত ও একনিষ্ঠ। তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন না। তিনি ছিলেন আল্লাহর অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞ; আল্লাহ তাকে মনোনীত করেছিলেন এবং তাকে পরিচালিত করেছিলেন সঠিক পথে। আমি তাকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান করেছিলাম, আর আখেরাতেও তিনি অবশ্যই সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত। তোমার প্রতি ওহি করছি যে, তুমি একনিষ্ঠ ইবরাহিমের মতাদর্শ অনুসরণ কর। (সুরা নাহল: ২০-২৪)

আরেকটি আয়াতে যারা নবি ইবরাহিমের (আ.) মিল্লাত থেকে বিমুখ হয়, তাদেরকে নির্বোধ বলা হয়েছে। একইসাথে বলা হয়েছে তিনি আল্লাহর নেক ও নির্বাচিত বান্দা। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَ مَنۡ یَّرۡغَبُ عَنۡ مِّلَّۃِ اِبۡرٰهٖمَ اِلَّا مَنۡ سَفِهَ نَفۡسَهٗ وَ لَقَدِ اصۡطَفَیۡنٰهُ فِی الدُّنۡیَا وَاِنَّهٗ فِی الۡاٰخِرَۃِ لَمِنَ الصّٰلِحِیۡنَ

আর যে নিজকে নির্বোধ বানিয়েছে, সে ছাড়া কে ইবরাহীমের আদর্শ থেকে বিমুখ হতে পারে? আর অবশ্যই আমি তাকে দুনিয়াতে বেছে নিয়েছি এবং নিশ্চয় সে আখিরাতে নেককারদের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। (সুরা বাকারা: ১৩০)

হজরত ইবরাহিমের (আ.) জন্ম হয়েছিল ইরাকের বাবেল শহরে। সেখানেই তিনি নবুয়্যত লাভ করেন এবং বেশ কিছুদিন তার পরিবার-পরিজন ও তার জাতির অন্যান্যদের আল্লাহর দীনের দাওয়াত দেন। কিন্তু বেশ কিছু দিনের প্রচেষ্টার পরও তার জাতির বেশিরভাগ আল্লাহর দীন থেকে দূরে থাকে। এক পর্যায়ে তিনি মূর্তি পূজার অসারতা বোঝাতে তাদের পূজার মূর্তিগুলো ভেঙে ফেললে তারা তাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করতে উদ্যত হয়। আল্লাহ তাআলার দয়ায় তিনি বেঁচে যান এবং নিজের জন্মভূমি থেকে হিজরত করে শামে অর্থাৎ বর্তমান সিরিয়া-ফিলিস্তিন অঞ্চলে চলে যান। সেখানেই তিনি বসবাস করতে থাকেন।

মক্কা তখনও বিজন মরূভূমি ছিল। ইবরাহিমের (আ.) প্রথম সন্তান ইসমাইলের (আ.) জন্মের পর আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দেন ইসমাইল (আ.) ও তার মা হাজেরাকে (আ.) মক্কায় রেখে আসতে। সে অনুযায়ী তিনি তাদেরকে মক্কার বিজন প্রান্তরে নিয়ে যান।

ইবরাহিম (আ.) আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে অনেক পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন। এটিও ছিল তার জন্য একটি পরীক্ষা।

নিজের শিশু সন্তানকে মক্কায় রেখে ইবরাহিম (আ.) যখন ফিরে যাচ্ছিলেন তখন তিনি মক্কার নিরাপত্তা এবং নিজের ও সন্তানের হেদায়াতের ওপর অবিচলতা প্রার্থনা করে দোয়া করেন,

رَبِّ اجۡعَلۡ هٰذَا الۡبَلَدَ اٰمِنًا وَّ اجۡنُبۡنِیۡ وَ بَنِیَّ اَنۡ نَّعۡبُدَ الۡاَصۡنَامَ
হে আমার রব, আপনি এ শহরকে নিরাপদ করে দিন এবং আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে মূর্তি পূজা থেকে দূরে রাখুন। (সুরা ইবরাহিম: ৩৫)

দোয়ায় তিনি আরও বলেছিলেন,

رَبَّنَاۤ اِنِّیۡۤ اَسۡكَنۡتُ مِنۡ ذُرِّیَّتِیۡ بِوَادٍ غَیۡرِ ذِیۡ زَرۡعٍ عِنۡدَ بَیۡتِكَ الۡمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِیُـقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ فَاجۡعَلۡ اَفۡئِدَۃً مِّنَ النَّاسِ تَهۡوِیۡۤ اِلَیۡهِمۡ وَارۡ زُقۡهُمۡ مِّنَ الثَّمَرٰتِ لَعَلَّهُمۡ یَشۡكُرُوۡنَ

হে আমাদের রব, নিশ্চয় আমি আমার কিছু বংশধরদেরকে ফসলহীন উপত্যকায় আপনার পবিত্র ঘরের নিকট বসতি স্থাপন করালাম, হে আমাদের রব, যাতে তারা নামাজ কায়েম করে। কিছু মানুষের হৃদয় আপনি তাদের দিকে ঝুঁকিয়ে দিন এবং তাদেরকে রিজিক প্রদান করুন ফল-ফলাদি থেকে, হয়তো তারা শুকরিয়া আদায় করবে। (সুরা ইবরাহিম: ৩৭)

পরবর্তীতে আল্লাহ তাআলা ইসমাইল (আ.) ও তার মা হাজেরাকে (আ.) জমজম কূপ দান করেন। অন্যান্য জায়গা থেকে আরও বহু মানুষ এসে মক্কায় বসতি স্থাপন করে। ইবরাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.) আল্লাহ তাআলার নির্দেশে কাবা ঘর নির্মাণ করেন। ধীরে ধীরে জনমানবহীন অনুর্বর পাথুরে ভূমি মক্কা একটি বড় শহরে রূপান্তরিত হয়।

এর দীর্ঘকাল পর মক্কায় হজরত ইসমাইলের (আ.) বংশধরদের মধ্যে আল্লাহ তাআলা তার শেষ নবী হজরত মুহাম্মাদকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পাঠান।

ওএফএফ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।