অণু পরিমাণ ভালো-মন্দেরও হিসাব হবে
ইসলামে যে আমল ও কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায়, আখেরাতে মুক্তি লাভের উপায়, যে কাজ নেক, ভালো, কল্যাণকর ও সুন্দর, তা যত ছোটই হোক না কেন, তুচ্ছ নয়, ফেলনা নয়। ছোট বা তুচ্ছ ভেবে কোনো কল্যাণকর নেক কাজ ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। ছোট বা তুচ্ছ মনে করা কোনো নেক কাজও আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ হতে পারে। আর কোনো গুনাহ, মন্দ কাজ যত ছোটই হোক তা তুচ্ছ বা অবহেলা করার মতো নয়।
কেয়ামতের দিন মানুষের প্রত্যেকটা বড় ও ছোট কাজের হিসাব হবে। অণু পরিমাণ নেক কাজ করে থাকলে তাও মানুষ দেখবে, অণু পরিমাণ মন্দ কাজ করে থাকলে তাও মানুষ দেখবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, সেদিন মানুষ বিক্ষিপ্তভাবে বের হয়ে আসবে যাতে দেখানো যায় তাদেরকে তাদের নিজদের কৃতকর্ম। কেউ অণু পরিমাণ ভালো কাজ করলে তা সে দেখবে, আর কেউ অণু পরিমাণ মন্দ কাজ করলে তাও সে দেখবে। (সুরা জিলজাল: ৬-৮)
আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত নবিজি (সা.) বলেছেন, তোমরা কোনো ভালো কাজকেই তুচ্ছ ভেবো না; যদি সেটা তোমার ভাইয়ের সাথে হাসি মুখে দেখা করাও হয়। (সহিহ মুসলিম) আদি ইবনে হাতেম (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে নবিজি (সা.) বলেছেন, আগুন থেকে আত্মরক্ষা করো যদি তা এক টুকরো খেজুর দিয়েও হয়, যদি তাও সম্ভব না হয়, তাহলে একটি সুন্দর কথা দিয়ে হলেও। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
অর্থাৎ একজন ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে এক টুকরো খেজুর দিয়ে সাহায্য করা এমন কি কারো সাথে হাসিমুখে কথা বলা, সুন্দর কথা বলাও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের কারণ হতে পারে, আখেরাতে জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ হতে পারে।
সহজ নেক আমলও আল্লাহর কাছে আমলকারী বা আমলের অবস্থার কারণে বড় হতে পারে। অনেক সময় নেক নিয়তের কারণে আমল বড় হয়ে যায়। যেমন আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক বলেছেন, অনেক ছোট আমল নিয়তের কারণে বড় হয়ে যায়, আবার অনেক বড় আমলও নিয়তের কারণে ছোট হয়ে যায়। (সিয়ারু আ’লামিন-নুবালা) অনেক সময় দেখা যায় আমলকারী তার সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে অথবা নিজের প্রয়োজন সত্ত্বেও আরেকজনকে প্রাধান্য দিয়েছে -এ কারণে তার সওয়াব বহুগুণ বেড়ে গেছে। অনেক সময় এমন অবস্থায়, এমন জায়গায় বা এমন সময় কেউ কারো সাহায্য করে, যখন যে মুহূর্তে তার সাহায্যের খুব প্রয়োজন ছিলো। এভাবে স্থান, কাল ও পাত্র হিসেবে অনেক সময় আল্লাহর কাছে ছোট আমলের সওয়াবও বহুগুণ বেড়ে যায়।
অন্যদিকে মানুষ ছোট ভেবে যদি গুনাহে জড়িয়ে পড়ে, তওবা না করে গুনাহ করে যেতে থাকে এক পর্যায়ে অনেক ছোট গুনাহ জমা হয়ে বড় ও ধ্বংসাত্মক হয়ে ওঠে। সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আপনারা ছোট ছোট তুচ্ছ পাপ থেকেও দূরে থাকুন। ছোট ও তুচ্ছ গোনাহসমূহের উপমা হল এ রকম যে, একদল লোক সফরে গিয়ে এক উপত্যকায় বিশ্রাম নিতে নামল। তারপর এ একটা কাঠ, ও একটা কাঠ এনে জমা করল। এভাবে অবশেষে তারা এত কাঠ জমা করল, যাতে আগুন জ্বালিয়ে তারা তাদের রুটি বানিয়ে নিতে পারে। ছোট ও তুচ্ছ পাপের কারণে পাপীকে যখন ধরা হবে তখন তা তাকে ধ্বংস করে ছাড়বে। (মুসনাদে আহমদ)
আয়েশা (রা.) বলেন, একদিন আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে আয়েশা! তুমি ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র তুচ্ছ পাপ হতেও সাবধান থেকো। কারণ আল্লাহর পক্ষ হতে তা (লিপিবদ্ধ করার জন্য ফেরেশতা) নিযুক্ত আছেন। (মুসনাদে আহমদ, সুনানে ইবনে মাজা)
ওএফএফ/এএসএম