বিক্রীত পণ্য ফেরত নেওয়ার প্রতিদান

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:৩৬ পিএম, ১৯ নভেম্বর ২০২৪
ইসলামে দোষযুক্ত পণ্যের দোষ গোপন রেখে বিক্রি করা হারাম

আমাদের দেশে অনেক দোকানেই লেখা থাকে ‘বিক্রীত পণ্য ফেরত নেওয়া হয় না’। লেখা না থাকলেও অলিখিতভাবে এই নিয়মটি থাকেই যে, বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর কোনো পণ্য আর বিক্রতা ফেরত নেবেন না। ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হওয়ার পর ওই ক্রয়-বিক্রয় বাতিল হয়ে যাওয়ার মতো উপযুক্ত কারণ না পাওয়া গেলে (যেমন পণ্যের দোষ-ত্রুটি বের হওয়া ইত্যাদি) বিক্রীত পণ্য ফেরত না নেওয়ার বা ওই ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিটি বাতিল না করার পূর্ণ অধিকার বিক্রেতার আছেও বটে।

এরপরও বিক্রেতা যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিক্রীত পণ্য ফেরত নেয়, তাহলে আল্লাহ তাআলার কাছে এই উদারতার জন্য সে পুরস্কৃত হবে। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

مَنْ أَقَالَ مُسْلِمًا أَقَالَهُ اللَّهُ عَثْرَتَهُ

যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের অনুরোধে তার সাথে সম্পাদিত ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি বাতিল করবে আল্লাহ তার গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। (সুনানে আবু দাউদ: ৩৪৬০)

অনেক সময় মানুষ ভুল করে কোনো কিছু কিনে ফেলে, কোনো জিনিস কেনার পর দেখে সেটার প্রয়োজন ইতোমধ্যে পূরণ হয়েছে অথবা যার জন্য কেনা হয় তার পছন্দ হয় না ইত্যাদি এবং তার প্রয়োজন পড়ে ক্রয়-বিক্রয় বাতিল করে পণ্যটি বিক্রেতাকে ফিরিয়ে দেওয়ার। এই অবস্থায় বিক্রেতা যদি বিক্রীত পণ্য ফেরত নেয়, তাহলে ক্রেতার উপকার হয়।

আর যদি পণ্যের কোনো দোষ-ত্রুটি বের হয় যা ক্রেতার কাছে গোপন ছিল, তাহলে ক্রেতা বিক্রীত পণ্য ফিরিয়ে দিতে পারে এবং বিক্রেতার অবশ্যকর্তব্য ওই ক্রয়-বিক্রয় বাতিল করে বিক্রীত পণ্য ফেরত নেওয়া।

আজকাল অনেক বিক্রেতাই ভালো পণ্যের সঙ্গে ত্রুটিযুক্ত কিংবা নিম্নমানের পণ্য মিশিয়ে বা পণ্যের দোষ গোপন করে বিক্রি করে থাকে যেমন পণ্য ব্যবহারের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পর তা পরিবর্তন করে নতুন মেয়াদকালের ছাপ মেরে দেওয়া ইত্যাদি। ইসলামে এ রকম বেচাকেনা হারাম। নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ وَلَا يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ بَاعَ مِنْ أَخِيهِ بَيْعًا فِيهِ عَيْبٌ إِلَّا بَيَّنَهُ لَهُ

এক মুসলমান অন্য মুসলমানের ভাই। একজন মুসলমানের জন্য তার ভাইয়ের কাছে কোনো ত্রুটিপূর্ণ পণ্য বিক্রি করা বৈধ নয় যদি সে পণ্যের ত্রুটি ক্রেতাকে যথাযথভাবে জানিয়ে না দেয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ২২৪৬)

আরেকটি বর্ণনায় আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,

البَيِّعَانِ بِالخِيَارِ مَا لَمْ يَتَفَرَّقَا أَوْ قَالَ حَتَّى يَتَفَرَّقَا فَإِنْ صَدَقَا وَبَيَّنَا بُورِكَ لَهُمَا فِي بَيْعِهِمَا وَإِنْ كَتَمَا وَكَذَبَا مُحِقَتْ بَرَكَةُ بَيْعِهِمَا

দৈহিকভাবে পৃথক হওয়া কিংবা বিক্রয় প্রস্তাব ও গ্রহণে মতান্তর না হওয়া পর্যন্ত ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েরই বিক্রয় কর্যকর করার কিংবা বাতিল করার অধিকার থাকে। যদি তারা সত্য বলে ও দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করে, তবে তাদের কেনা-বেচায় বরকত হয়। আর যদি দু’জনে মিথ্যা বলে ও পণ্য বা মুদ্রার দোষ গোপন করে, তবে তাদের কেনা-বেচার বরকত নষ্ট হয়ে যায়। (সহিহ বোখারি: ২০৮২)

ওএফএফ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।