বদর যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন যে ১৪ সাহাবি
নবিজি হজরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নবুয়ত লাভের পর মক্কায় প্রায় ১৩ বছর ইসলাম প্রচার করেন। মানুষকে সত্যের দাওয়াত দেন। সত্য দীন গ্রহণ করতে বলেন। আল্লাহর দীন গ্রহণ না করলে দুনিয়া ও আখেরাতের শাস্তির ব্যাপারে সাবধান করেন।
কিছু মানুষ নবিজির (সা.) দাওয়াতে সাড়া দিয়ে ইসলাম গ্রহণ করলেও মক্কার বেশিরভাগ মানুষ বিশেষত নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা ইসলাম গ্রহণ করেনি। তারা বরং ইসলামের দাওয়াতি কার্যক্রমে যথাসাধ্য বাঁধা সৃষ্টি করেছে। মুসলমানদের আল্লাহর দীন পালন করতে বাঁধা দিয়েছে। তাদেরকে নানাভাবে কষ্ট দিয়েছে।
মুসলমানদের নিপীড়িত অবস্থা দেখে নবিজি (সা.) প্রথম পর্যায়ে মুসলমানদের হাবাশায় হিজরতের অনুমতি দেন। কিছু মুসলমান হাবাশায় হিজরতও করেন। তারপর মদিনাবাসীর সাথে আলোচনা ও চুক্তি হলে নবিজি (সা.) মুসলমানদের মদিনায় হিজরত করার নির্দেশ দেন। নিজেও মদিনায় চলে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকেন।
নবিজি (সা.) মক্কা ছেড়ে চলে যাবেন বুঝতে পেরে আবু জেহেলের নেতৃত্বে মক্কার কাফেররা নবিজিকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাদের সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেন এবং নবিজিকে নিরাপদে মদিনায় পৌঁছে দেন।
মদিনায় যাওয়ার পথেই মক্কার সীমালংনকারী অত্যাচারী কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হল তাদেরকে, যাদেরকে আক্রমণ করা হচ্ছে। কারণ তাদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে বিজয় দানে সক্ষম। (সুরা হজ: ৩৯)
নবিজির (সা.) মদিনায় হিজরতের পর থেকেই মক্কার কাফেরদের সাথে মুসলমানদের যুদ্ধ শুরু হয়। প্রথম এক বছর কাফেরদের সাথে মুসলমানদের বেশ কিছু খণ্ড যুদ্ধ হয়। তারপর দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজান বদর প্রান্তরের সংঘটিত হয় কাফেরদের সাথে মুসলমানদের প্রথম বড় যুদ্ধ যা ইতিহাসে বদরের যুদ্ধ হিসেবে প্রসিদ্ধ।
এ যুদ্ধে মুসলমানরা অস্ত্রশস্ত্র ও সৈন্য সংখ্যার বিচারে মক্কার কাফেরদের চেয়ে বেশ দুর্বল ছিল। মক্কার কাফেরদের বাহিনীতে ছিল এক হাজার যোদ্ধা যারা সবাই উন্নত অস্ত্র-শস্ত্রে সুসজ্জিত ছিল। বিপরীতে মুসলমানদের বহিনীতে ছিল মাত্র ৩১৩ জন যোদ্ধা, সবার হাতে অস্ত্রও ছিল না। এরপরও আল্লাহ তাআলার বিশেষ সাহায্যে মুসলমানরা বিজয় লাভ করে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, আর অবশ্যই আল্লাহ তোমাদেরকে বদরে সাহায্য করেছেন অথচ তোমরা ছিলে হীনবল। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, আশা করা যায়, তোমরা শোকরগুজার হবে। (সুরা আলে ইমরান: ১২৩)
বদর যুদ্ধে মক্কার কাফেরদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরাসহ ৭০ জন সৈন্য নিহত হয়, ৭০ জন বন্দী হয়। নিহত নেতৃস্থানীয়দের মধ্যে ছিলেন আবু জাহল (আমর ইবনে হিশাম),উতবা ইবনে রাবিআ, উমাইয়া ইবনে খালাফ, শায়বা ইবনে রাবিআ, ওয়ালিদ ইবনে উতবা প্রমুখ। বন্দীদের মধ্যে ছিলেন উকবা ইবনে আবু মুঈত, সুহাইল ইবনে আমর, আবুল আস প্রমুখ।
বিপরীতে নবিজির (সা.) ১৪ জন সাহাবি শাহাদাতের গৌরব লাভ করেন। তাদের মধ্যে ছয়জন ছিলেন মুহাজির অর্থাৎ মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতকারী সাহাবি, আটজন ছিলেন আনসার অর্থাৎ মদিনাবাসী সাহাবি।
মুহাজির ছয়জন হলেন:
১. হজরত মাহজা ইবনে সালেহ (রা.)
২. হজরত উবায়দা ইবনে হারেস (রা.)
৩. হজরত উমায়ের ইবনে আবি ওয়াককাস (রা.)
৪. হজরত আকিল ইবন বুকায়র (রা.)
৫. হজরত উমায়ের ইবনে আবদে আমর (রা.)
৬. হজরত সাফওয়ান ইবনে ওয়াহাব (রা.)
আনসার আটজন হলেন:
১. হজরত সাদ ইবনে খায়সামা (রা.)
২. হজরত মুবাশশির ইবনে আবদিল মুনযির (রা.)
৩. হজরত ইয়াজিদ ইবনে হারেস (রা.)
৪. হজরত উমায়ের ইবনে হাম্মাম (রা.)
৫. হজরত রাফে ইবনে মুআল্লা (রা.)
৬. হজরত হারেস ইবনে সোরাকা (রা.)
৭. হজরত মুওয়ায়িজ ইবনে হারেস (রা.)
৮. হজরত আওফ ইবনে হারেস (রা.)
ওএফএফ/এমএস