আঁতুড়ঘরে কোরআন তিলাওয়াত করা কি নিষিদ্ধ?

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:২২ এএম, ১১ অক্টোবর ২০২৪
অনেকে আঁতুড়ঘরকে অপবিত্র মনে করেন

আমাদের দেশে অনেক অঞ্চলে আঁতুড়ঘর অর্থাৎ শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার স্থান বা ঘরকে অপবিত্র মনে করা হয়। মনে করা হয়, শিশু যে স্থানে বা ঘরে ভূমিষ্ঠ হয়, ওই ঘর ৪০ দিন পর্যন্ত অপবিত্র থাকে। তাই এ সময় সেখানে নামাজ পড়া, কোরআন তিলাওয়াত করা নিষিদ্ধ।

এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ভুল ধারণা। আঁতুড়ঘর অপবিত্র নয়। আঁতুড়ঘরে কোরআন তিলাওয়াত ও নামাজ পড়তে বাঁধা নেই। আঁতুড়ঘরের কোনো জায়গায় যদি নাপাকি লাগে, তাহলে শুধু ওই জায়গাই নাপাক গণ্য হবে। পুরো ঘর নাপাক হবে না। ওই নাপাক জায়গা নিয়ম অনুযায়ী ধুয়ে ফেললে তাও পবিত্র হয়ে যাবে।

কোথাও কোথাও এ রকম ধারণাও রয়েছে যে, চল্লিশ দিন পর্যন্ত নবজাতক শিশুর মা অপবিত্র থাকে, তার স্পর্শ লাগলেই সবকিছু নাপাক হয়ে যায়, তার রান্না খাওয়া যাবে না ইত্যাদি। এগুলোও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ভুল ধারণা।

সন্তান জন্মদানের পর যতো দিন তার নেফাস চালু থাকবে, তত দিন ওই নারী মাসিক চলাকালীন সময়ের মতো নামাজ, রোজা ও তিলাওয়াত থেকে বিরত থাকবে, কিন্তু তার ব্যবহৃত থালাবাসন, পেয়ালা কিংবা তার হাতের স্পর্শ লাগা কোনো কিছুই নাপাক হয় না। স্বাভাবিক অবস্থার মতোই তার হাতের রান্না-বান্না খাওয়াও বৈধ। তার ব্যবহৃত বাসনকোসন অন্যরাও ব্যবহার করতে পারবে।

সন্তান জন্মদানের পর কি ৪০ দিন নামাজ বন্ধ রাখতে হবে?

সন্তান জন্মদানের পর নারীদের যোনি থেকে যে রক্তস্রাব হয়, শরিয়তের পরিভাষায় তাকে নেফাস বলা হয়। সাধারণ ডেলিভারি পরবর্তী রক্তস্রাব যেমন নেফাস, সিজার পরবর্তী রক্তস্রাবও নেফাস গণ্য হয়। নেফাস চলাকালীন সময়ে যৌনমিলন, নামাজ, তাওয়াফ, রোজা, কোরআন তিলাওয়াত, কোরআন স্পর্শ করা নিষিদ্ধ। এ সময় জিকির করা যাবে, কোরআনে উল্লিখিত দোয়াসহ যে কোনো দোয়া পড়া যাবে। এ সময়ের নামাজের কাজা করতে হবে না, তবে রমজান মাস হলে রোজার কাজা করতে হবে।

নেফাস সর্বোচ্চ ৪০ দিন থাকতে পারে। এর সর্বনিম্ন সময়ের কোনো সীমা নেই; এক ঘণ্টা বা এক দিন পর নেফাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে আবার বিশ দিন বা ত্রিশ দিন পরও বন্ধ হতে পারে। নেফাসের রক্তস্রাব বন্ধ হয়ে গেলে গোসল করে পবিত্র হতে হবে। তারপর যৌন-মিলন, নামাজ ও অন্যান্য আমল করতে পারবে। অর্থাৎ নেফাসের কারণে যে কাজগুলো নিষিদ্ধ হয়েছিল, সেগুলো নিষিদ্ধ থাকবে না। যৌনমিলনের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি থাকলে, চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে বিধিনিষেধ থাকলে তা মেনে চলতে হবে।

অনেকে মনে করে রক্তস্রাব থাকুক বা না থাকুক সন্তান জন্মদানের পর চল্লিশ দিন পর্যন্ত নামাজ পড়া যায় না। এ ধারণাটি সঠিক নয়। কারো রক্তস্রাব বন্ধ না হলে তার জন্য সর্বোচ্চ মেয়াদ হলো চল্লিশ দিন, এর আগে যে দিন বা যে সময় থেকে রক্তস্রাব বন্ধ হবে, সেদিন সে সময় থেকেই থেকে নামাজ পড়া শুরু করতে হবে।

সন্তান জন্ম নেওয়ার ৪০ দিন পরও যদি রক্তস্রাব বন্ধ না হয়, তাহলে তা আর নেফাস নয়, বরং ইস্তেহাজা বা রোগ মনে করতে হবে। ৪০ দিন অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর গোসল করে পবিত্র হয়ে যাবে এবং যৌনমিলন, নামাজ ও অন্যান্য আমল করতে পারবে। রক্তস্রাব চলতে থাকলে প্রতি ওয়াক্তে পরিচ্ছন্ন হয়ে, নতুন অজু করে নামাজ পড়বে, রোজাও রাখবে।

ওএফএফ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।