ইসলামে শিক্ষা ও শিক্ষকের মর্যাদা
জ্ঞান ও শিক্ষা যেমন সম্মানিত, জ্ঞান ও শিক্ষার প্রচার প্রসারে যে ব্যক্তিরা জড়িত থাকেন তারাও সম্মানিত, এমন কি যে বস্তু জ্ঞান লিপিবদ্ধকরণ ও সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়, তাও সম্মানিত। হজরত মুহাম্মাদের (সা.) ওপর আল্লাহ তাআলা প্রথম যে পাঁচটি আয়াত নাজিল করেছিলেন, তাতে ছিল জ্ঞান ও শিক্ষার কথা, পড়ার কথা, কলমের কথা। আল্লাহ তাআলা বলেন, পড় তোমার রবের নামে; যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে 'আলাক' থেকে। পড়, আর তোমার রব মহামহিম। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে তা শিক্ষা দিয়েছেন, যা সে জানত না। (সুরা আলাক: ১-৫)
জ্ঞানী ও সুশিক্ষিত ব্যক্তিদের বিশেষ সম্মানের কথা উল্লেখ করে কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় সমুন্নত করবেন। (সুরা মুজাদালা: ১১)
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হজরত মুহাম্মাদকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোরআনে শিক্ষক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মানুষকে শিক্ষাদান ছিল তার অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। আল্লাহ তাআলা বলেন, যেভাবে আমি তোমাদের মধ্যে একজন রাসূল প্রেরণ করেছি তোমাদের মধ্য থেকে, যে তোমাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে, তোমাদেরকে পবিত্র করে এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়। আর তোমাদেরকে শিক্ষা দেয় এমন কিছু যা তোমরা জানতে না। (সুরা বাকারা: ১৫১)
নবিজি (সা.) শিক্ষা কার্যক্রমকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন এবং বলতেন, ‘আমি শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি’। আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রা.) বলেন, একদিন আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার ঘর থেকে বের হয়ে এসে মসজিদে প্রবেশ করলেনন। তখন সেখানে দুটি সমাবেশ চলছিল। একটি সমাবেশে লোকজন কোরআন তিলাওয়াত ও আল্লাহর জিরিরে মশগুল ছিল এবং অপর সমাবেশে লোকজন শিক্ষাগ্রহণ ও শিক্ষাদানে রত ছিল। নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সকলেই কল্যাণকর কাজে রত আছে। এই সমাবেশের লোকজন কোরআন তিলাওয়াত করছে এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করছে। তিনি চাইলে তাদের দান করতেও পারেন আবার চাইলে নাও দিতে পারেন। অন্যদিকে এই সমাবেশের লোকেরা শিক্ষাগ্রহণ ও শিক্ষাদানে রত আছে। আমি শিক্ষক হিসাবেই প্রেরিত হয়েছি। তারপর তিনি শিক্ষক-ছাত্রদের সাথে বসলেন। (সুনানে ইবনে মাজা)
শিক্ষা গ্রহণ করার পর শিক্ষা কার্যক্রমে জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোত্তম ও শ্রেষ্ঠ মানুষ উল্লেখ করে রাসুল (সা.) বলেন, আপনাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ তারা যারা কোরআন শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়। (সহিহ বুখরি)
শিক্ষকের জন্য ফেরেশতারা, মাছ, কীটপতঙ্গসহ সৃষ্টিকুল আল্লাহর কাছে দোয়া করে উল্লেখ করে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, আপনাদের সাধারণ ব্যক্তির ওপর আমার যেমন মর্যাদা, ঠিক তেমনি একজন আলেমের মর্যাদা একজন আবেদের (ইলমহীন ইবাদতকারী) ওপর। নিশ্চয়ই আল্লাহ, তার ফেরেশতাগণ, আসমান-জমিনের অধিবাসীরা, এমনকি গর্তের পিঁপড়া ও পানির মাছ পর্যন্ত সেই ব্যক্তির জন্য দোয়া করে যে মানুষকে কল্যাণকর জ্ঞান শিক্ষা দেয়। (সুনানে তিরমিজি)
শিক্ষা শিক্ষকের জন্য সদকায়ে জারিয়া। যে শিক্ষক কল্যাণমুখী শিক্ষা কার্যক্রমে জড়িত থাকে, সে মৃত্যুর পরও তার সওয়াব লাভ করতে পারে। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আদম সন্তান যখন মারা যায়, তখন তার তিন প্রকার আমল ছাড়া অন্য সব আমলের ধারা বন্ধ হয়ে যায়; ১. সদকায়ে জারিয়া (ফায়েদা অব্যাহত থাকে এ রকম সদকা যেমন মসজিদ নির্মাণ করা, কূপ খনন করে দেওয়া ইত্যাদি) ২. ইলম বা জ্ঞান যা দ্বারা মানুষ উপকৃত হতে থাকে ৩. সুসন্তান যে তার জন্য নেক দোয়া করতে থাকে। (সহিহ মুসলিম)
ওএফএফ/এএসএম