উম্মুল মুমিনীন জয়নবের (রা.) উপার্জন ও সদকা
জয়নব বিনতে জাহাশ ছিলেন মুহাম্মদ এর ফুফাতো বোন। তার বাবা জাহাশ ইবনে রিয়াব আর মা নবিজির ফুফু উমাইমা বিনতে আব্দুল মুত্তালিব। তার ভাই আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশও প্রখ্যাত সাহাবি ছিলেন।
আল্লাহর রাসুলের (সা.) হিজরতের আগে মক্কায়ই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। বলা হয় তিনি হাবাশায়ও হিজরত করেছেন। পরে আবার মক্কায় ফিরে যান এবং মদিনায় হিজরতের অনুমতি দেওয়া হলে তিনি মদিনায় হিজরত করেন।
মদিনায় হিজরতের পর নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম) জয়নবকে নিজের আজাদপ্রাপ্ত দাস সাহাবি জায়েদ ইবনে হারেসার (রা.) সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের বিবাহিত জীবন সুখের হয়নি। জয়নবের সাথে জায়েদের সামাজিক অবস্থানের তারতম্য ছিল। জয়নব ছিলেন মক্কার সবচেয়ে সম্ভান্ত বংশের মেয়ে, অন্যদিকে জায়েদ ছিলেন মুক্তিপ্রাপ্ত দাস। জয়নব নবিজির (সা.) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জায়েদকে বিয়ে করেছিলেন বটে, কিন্তু জায়েদের সাথে তার মনের মিল হয়নি।
রাসুল (সা.) অনেক বার তাদের সমস্যা মিটমাট করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের সম্পর্কে ঝামেলা থেকেই যায়। এক পর্যায়ে জায়েদ তাকে তালাক দেন এবং আল্লাহ তাআলা নবিজির (সা.) সাথে তার বিয়ে দিয়ে দেন।
জায়েদ যেহেতু নবিজির (সা.) পালিত পুত্র ছিলেন, তাই নবিজি (সা.) তাকে বিয়ে করতে ইতস্তত করছিলেন। যেহেতু আরবরা পালিত্র পুত্রদের প্রকৃত পুত্রের মতোই মনে করতো এবং তাদের স্ত্রীদের বিয়ে করা নিন্দনীয় মনে করতো। আল্লাহ তাআলা এই বিয়ের মাধ্যমে আরবদের ওই ভুল রীতি দূর করে দেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, জায়েদ যখন তার (জয়নবের) সাথে বিয়ের সর্ম্পক ছিন্ন করল তখন আমি তাকে তোমার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করে দিলাম, যাতে মুমিনদের পোষ্য পুত্ররা নিজ স্ত্রীর সাথে বিবাহ ছিন্ন করলে সেই সব নারীকে বিয়ে করায় মুমিনদের জন্য কোন বিঘ্ন না হয়। আল্লাহর আদেশ কার্যকর হয়েই থাকে। (সুরা আহজাব: ৩৭)
উম্মুল মুমিনীন জয়নব (রা.) অত্যন্ত ন্যায়নিষ্ঠ ও তাকওয়ার অধিকারী নারী ছিলেন। রাতে দীর্ঘক্ষণ নামাজে দাঁড়াতেন, প্রচুর রোজা রাখতেন এবং প্রচুর দান-সদকা করতেন। তিনি হস্তশিল্প জানতেন। হাতের কাজ করে নিজে উপার্জন করতেন এবং নিজের পরিশ্রমে উপার্জিত অর্থ থেকেই সদকা করতেন।
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আমার মৃত্যুর পর তোমাদের মাঝে সর্বপ্রথম সে-ই আমার সঙ্গে মিলিত হবে হাত অধিক দীর্ঘ। এ কথা শুনে সব স্ত্রীরা নিজেদের হাত মেপে দেখতে লাগলাম কার হাত বেশি লম্বা। (তারা ভেবেছিলেন নবিজি (সা.) হাতের বাহ্যিক দৈর্ঘ্যের কথা বলেছেন) আয়েশা (রা.) বলেন, পরবর্তীতে বোঝা গেল (যখন নবিজির (সা.) ওফাতের পর জয়নব সবচেয়ে দ্রুত মারা গেলেন, তখন আমরা বুঝতে পারলাম নবিজি (সা.) বাহ্যিক দৈর্ঘ্য বোঝাননি, বরং রূপক অর্থে দীর্ঘ বলেছেন) আমাদের মাঝে জয়নবের হাতই সবচেয়ে দীর্ঘ ছিল। কারণ তিনি নিজের হাতে কাজ করে উপার্জন করতেন এবং সদকা করতেন। (সহিহ মুসলিম: ২৪৫২)
আয়েশা (রা.) বলেন, আমি দ্বীনের ক্ষেত্রে জয়নবের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কোনো নারী দেখিনি। তিনি ছিলেন খোদাভীরু, সত্যবাদী ও আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী। প্রচুর সদকা করতেন। সম্পদ উপার্জনের জন্য খুব পরিশ্রম করতেন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের উপার্জিত সম্পদ থেকে সদকা করতেন।
ওএঢএফ/এমএস