শহীদ আবু সালামার (রা.) জন্য যে দোয়া করেছিলেন নবিজি (সা.)

ওমর ফারুক ফেরদৌস
ওমর ফারুক ফেরদৌস ওমর ফারুক ফেরদৌস , আলেম ও লেখক
প্রকাশিত: ০৪:৫১ পিএম, ২৬ আগস্ট ২০২৪
সৌদি আরবের মদিনায় অবস্থিত ওহুদ পাহাড়

সাহাবি আবু সালামার (রা.) পূর্ণ নাম আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল আসাদ। তিনি ছিলেন নবিজির (সা.) ফুফাতো ভাই; নবিজির ফুফু বাররা বিনতে আব্দুল মুত্তালিবের সন্তান। তিনি নবিজির (সা.) দুধ ভাইও ছিলেন।

ইসলামের প্রাথমিক যুগে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। বলা হয় দশজন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করার পরই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণের পর মক্কার কাফেরদের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি তার স্ত্রী উম্মে সালামাকে (রা.) নিয়ে হাবাশায় হিজরত করেছিলেন। পরে তিনি আবার মক্কায় ফিরে আসেন এবং পরবর্তীতে মদিনায় হিজরত করেন।

দ্বিতীয় হিজরিতে মক্কার কাফেরদের বিরুদ্ধে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তৃতীয় হিজরিতে ওহুদের যুদ্ধেও তিনি অংশগ্রহণ করেন এবং বাহুতে আঘাত পান। চতুর্থ হিজরির জুমাদাল উখরা মাসে ওহুদ যুদ্ধের প্রায় আট মাস পর ওই আঘাতের কারণেই তিনি শাহাদাত বরণ করেন।

তার ওফাতের পর নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে দেখতে তার বাড়িতে যান এবং তার জন্য দোয়া করেন। ঘটনাটি বর্ণনা করে তার স্ত্রী উম্মে সালামা (রা.) বলেন, আবু সালামর ওফাতের পর আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের বাড়িতে এলেন। আবু সালামার কাছে এসে তিনি দেখলেন যে, তার দুই চোখ খুলে আছে। তিনি তার চোখ বন্ধ করে দিলেন। তারপর বললেন, যখন রুহ কবজ করে নেয়া হয় তখন চোখ রুহের অনুগামী হয়।

ওই সময় তার পরিবারের কয়েকজন চিৎকার করে কেঁদে উঠলে নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা নিজের জন্য যা কল্যাণকর, শুধু সেটাই চাও। কারণ তোমরা যা বল তার জন্য ফেরেশতারা এ সময় আমিন, আমিন বলতে থাকেন।

তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করলেন,

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لأَبِي سَلَمَةَ وَارْفَعْ دَرَجَتَهُ فِي الْمَهْدِيِّينَ وَاخْلُفْهُ فِي عَقِبِهِ فِي الْغَابِرِينَ وَاغْفِرْ لَنَا وَلَهُ يَا رَبَّ الْعَالَمِينَ وَافْسَحْ لَهُ فِي قَبْرِهِ ‏.‏ وَنَوِّرْ لَهُ فِيهِ

হে আল্লাহ আবু সালামাকে ক্ষমা করুন এবং হেদায়াতপ্রাপ্তদের মধ্যে তার মর্যাদা উঁচু করে দিন। আপনি তার বংশধরদের অভিভাবক হয়ে যান। হে রাব্বুল আলামিন তাকে ও আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন। তার কবরকে প্রশস্ত করুন এবং তা আলোকজ্জ্বল করে দিন। (সহিহ মুসলিম: ৯২০)

এ বর্ণনা থেকে বোঝা যায় কেউ মারা যাওয়ার পর তার চোখ খোলা থাকলে আমাদের কর্তব্য তা বন্ধ করে দেওয়া এবং তার জন্য দোয়া করা। উপরোক্ত দোয়াটি যে কোনো মৃতের জন্য আমরা করতে পারি এভাবে:

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْفَعْ دَرَجَتَهُ فِي الْمَهْدِيِّينَ وَاخْلُفْهُ فِي عَقِبِهِ فِي الْغَابِرِينَ وَاغْفِرْ لَنَا وَلَهُ يَا رَبَّ الْعَالَمِينَ وَافْسَحْ لَهُ فِي قَبْرِهِ ‏.‏ وَنَوِّرْ لَهُ فِيهِ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফির লাহু ওয়ারফা’ দারাজাতাহু ফিল মাহদিয়্যিন ওয়াখলুফহু ফি আকিবিহি ফিল গাবিরিনা ওয়াগফির লানা ওয়া লাহু ইয়া রাব্বাল আলামিন।

অর্থ: হে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন এবং হেদায়াতপ্রাপ্তদের মধ্যে তার মর্যাদা উঁচু করে দিন। আপনি তার বংশধরদের অভিভাবক হয়ে যান। হে রাব্বুল আলামিন তাকে ও আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন। তার কবরকে প্রশস্ত করুন এবং তা আলোকজ্জ্বল করে দিন।

এ ছাড়া মৃত্যুর পর শোকে আকুল হয়ে মানুষ অনেক রকম কথা বলে, বিলাপ করে, অভিশাপ দেয়। নবিজি (সা.) এগুলো পরিহার ভালো দোয়া করার নির্দেশ দিয়েছেন।

ওএফএফ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।