দোয়াই ইবাদত

ওমর ফারুক ফেরদৌস
ওমর ফারুক ফেরদৌস ওমর ফারুক ফেরদৌস , আলেম ও লেখক
প্রকাশিত: ১০:৪৫ এএম, ৩১ জুলাই ২০২৪
দোয়ায় আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা প্রকাশ পায়

আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা, প্রার্থনা করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। দোয়ার মাধ্যমে যেমন আল্লাহর আনুগত্য ও রহমত লাভ করা যায়, আল্লাহর আজাব থেকে বাঁচা যায়, শয়তানের ধোঁকা ও দুনিয়াবি বিপদ-আপদ থেকে বেঁচে থাকা যায়, একইভাবে দোয়ার মাধ্যমে ঈমানও প্রকাশ পায়। আল্লাহর প্রতি বান্দার ভরসা ও নির্ভরতা প্রকাশ পায়। বান্দার বিনয় ও অহংকারহীনতা প্রকাশ পায়। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেছেন,

وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ

তোমাদের রব বলেন, তোমরা আমার কাছে দোয়া কর, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব। যারা অহংকারবশত আমার ইবাদত হতে বিমুখ তারা অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে। (সুরা গাফির: ৬০)

এ আয়াতে স্পষ্টভাবেই ইবাদতকেই দোয়া বলা হয়েছে। বিভিন্ন হাদিসেও এ বক্তব্যের অনুরণন আছে। নোমান ইবনে বশির থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

الدُّعَاءُ هُوَ العِبَادَةُ
দোয়াই হলো ইবাদত। (সুনানে আবু দাউদ)

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
الدُّعَاءُ مُخُّ الْعِبَادَةِ

দোয়া হলো ইবাদতের মগজ বা মূলবস্তু। (সুনানে তিরমিজি)

ইমাম শাওকানি (রহ.) বলেন, ওপরের আয়াত স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, দোয়া অন্যতম ইবাদত। দোয়া না করা আল্লাহর সঙ্গে অহংকার করার শামিল। এ অহংকারের চেয়ে নিকৃষ্ট কোনো অহংকার হতে পারে না। কীভাবে মানুষ আল্লাহর সঙ্গে অহংকার করতে পারে যে আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন, তাকে সব ধরনের জীবনোপকরণ দিয়েছেন, যিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান এবং ভাল-মন্দের প্রতিদান দিয়ে থাকেন! (তুহফাতুজ জাকিরীন)

কোরআনের আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বান্দার কাছেই থাকেন এবং বান্দা তাকে ডাকলে তিনি সাড়া দেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَ اِذَا سَاَلَكَ عِبَادِیۡ عَنِّیۡ فَاِنِّیۡ قَرِیۡبٌ اُجِیۡبُ دَعۡوَۃَ الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ فَلۡیَسۡتَجِیۡبُوۡا لِیۡ وَ لۡیُؤۡمِنُوۡا بِیۡ لَعَلَّهُمۡ یَرۡشُدُوۡنَ

যখন আমার বান্দারা আমার সম্পর্কে তোমাকে জিজ্ঞেস করে, আমি তো তাদের নিকটেই, কেউ আমাকে ডাকলে আমি তার ডাকে সাড়া দেই; তাই তাদের উচিত আমার নির্দেশ মান্য করা এবং আমার প্রতি ঈমান আনা, যাতে তারা সরলপথ প্রাপ্ত হয়। (সুরা বাকারা: ১৮৬)

দোয়া কখনও ব্যর্থ হয় না

মুমিন আল্লাহ তাআলার কাছে যে কল্যাণকর দোয়া করে, তা কখনও ব্যর্থ হয় না। দোয়ার বদলা আল্লাহ তাআলা অবশ্যই দান করেন। তবে বিভিন্ন সময় দোয়ার প্রতিদান বিভিন্ন রকম হয়। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

ما من مسلمٍ يدعو بدعوةٍ ليس فيها إثمٌ ولا قطيعةُ رَحِمٍ إلا أعطاه بها إحدى ثلاثَ: إما أن يُعجِّلَ له دعوتَه وإما أن يدَّخِرَها له في الآخرةِ وإما أن يَصرِف عنه من السُّوءِ مثلَها
যখন কোনো মুমিন ব্যক্তি এমন দোয়া করে যে দোয়াতে কোনো পাপ ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয় নেই, তাহলে আল্লাহ তিন পদ্ধতির কোনো এক পদ্ধতিতে তার দোয়া কবুল করে নেন; হয়তো যে দোয়া সে করেছে তা ওইভাবেই কবুল করেন, তার দোয়ার প্রতিদান আখেরাতের জন্য সংরক্ষণ করেন অথবা এ দোয়ার মাধ্যমে তার ওপর আগত কোনো বিপদ তিনি দূর করে দেন।

এ কথা শুনে সাহাবিরা বললেন, আমরা তাহলে অধিক পরিমাণে দোয়া করতে থাকবো। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা যত বেশি দোয়াই করবে আল্লাহ তার চেয়ে অনেক বেশি কবুল করতে পারেন। (বুখারি ফিল আদাবিল মুফরাদ)

ওএফএফ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।