অন্যের দোষ খোঁজার শাস্তি

ওমর ফারুক ফেরদৌস
ওমর ফারুক ফেরদৌস ওমর ফারুক ফেরদৌস , আলেম ও লেখক
প্রকাশিত: ০৪:৪৩ পিএম, ২৭ জুলাই ২০২৪

কাউকে অপদস্ত করার জন্য তার পেছনে লেগে থাকা, দোষ খোঁজা ইসলামে একটি বড় গুনাহ। এই গুনাহের শাস্তি দুনিয়াতেই ভোগ করতে হবে, আখেরাতের শাস্তি তো রয়েছেই। কোরআনে আল্লাহ তাআলা অহেতুক কুধারণা, অন্যের দোষ অনুসন্ধান ও গিবত করতে নিষেধ করে বলেন,

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اجۡتَنِبُوۡا كَثِیۡرًا مِّنَ الظَّنِّ ۫ اِنَّ بَعۡضَ الظَّنِّ اِثۡمٌ وَّ لَا تَجَسَّسُوۡا وَ لَا یَغۡتَبۡ بَّعۡضُكُمۡ بَعۡضًا اَیُحِبُّ اَحَدُكُمۡ اَنۡ یَّاۡكُلَ لَحۡمَ اَخِیۡهِ مَیۡتًا فَكَرِهۡتُمُوۡهُ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ اِنَّ اللّٰهَ تَوَّابٌ رَّحِیۡمٌ
হে মুমিনগণ, তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাক। নিশ্চয় কোন কোন অনুমান গুনাহের কাজ। আর তোমরা অন্যের দোষ খোঁজাখুঁজি করো না করো না এবং একে অপরের গিবত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? তোমরা তো তা অপছন্দই করে থাক। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, অসীম দয়ালু। (সুরা হুজুরাত: ১২)

আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ রকম স্বভাবের মানুষদের অত্যন্ত অপছন্দ করেছেন এবং তাদের ব্যাপারে ক্রোধ প্রকাশ করেছেন। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সা.) একদিন মিম্বরে দাঁড়িয়ে উচ্চৈস্বরে বললেন,

يَا مَعْشَرَ مَنْ قَدْ أَسْلَمَ بِلِسَانِهِ وَلَمْ يُفْضِ الإِيمَانُ إِلَى قَلْبِهِ لاَ تُؤْذُوا الْمُسْلِمِينَ وَلاَ تُعَيِّرُوهُمْ وَلاَ تَتَّبِعُوا عَوْرَاتِهِمْ فَإِنَّهُ مَنْ تَتَبَّعَ عَوْرَةَ أَخِيهِ الْمُسْلِمِ تَتَبَّعَ اللهُ عَوْرَتَهُ وَمَنْ تَتَبَّعَ اللهُ عَوْرَتَهُ يَفْضَحْهُ وَلَوْ فِى جَوْفِ رَحْلِه
যারা মুখে মুসলমান হয়েছেন এবং অন্তরে এখনও ঈমান প্রবেশ করেনি তারা শুনুন, মুসলমানদের কষ্ট দেবেন না। মুসলমানদের অপদস্ত করার চেষ্টা ও দোষ খোঁজা থেকে বিরত থাকুন! যে ব্যক্তি তার মুসলমান ভাইয়ের দোষ খোঁজে, আল্লাহ তার দোষ খোঁজেন আর আল্লাহ যার দোষ খোঁজেন (অর্থাৎ গোপন না করেন) সে নিজের ঘরের ভেতরে থাকলেও তিনি তাকে অপদস্থ করে ছাড়েন। (সুনানে তিরমিজি: ২০৩২)

অন্যের ব্যাপারে খারাপ অনুমান করে তা চর্চা করা, দোষ খোঁজা, গিবত করা ইত্যাদি জুলুমের অন্তর্ভুক্ত। এ রকম গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি যাকে কষ্ট দেওয়া হয়েছে, তার কাছেও ক্ষমা চাওয়া কর্তব্য, তার কোনো ক্ষতি হয়ে থাকলে তার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা কর্তব্য। তা না হলে আখেরাতে নিজের সওয়াব দিয়ে এবং অন্যের গুনাহের বোঝা কাঁধে নিয়ে এ রকম গুনাহ থেকে মুক্ত হতে হবে। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,

مَن كانَتْ عِنْدَهُ مَظْلِمَةٌ لأخِيهِ فَلْيَتَحَلَّلْهُ مِنْها، فإنَّه ليسَ ثَمَّ دِينارٌ ولا دِرْهَمٌ، مِن قَبْلِ أنْ يُؤْخَذَ لأخِيهِ مِن حَسَناتِهِ، فإنْ لَمْ يَكُنْ له حَسَناتٌ أُخِذَ مِن سَيِّئاتِ أخِيهِ فَطُرِحَتْ عليه

কারো কাছে তার কোনো ভাইয়ের দাবি থাকলে সে যেন তা থেকে মুক্ত হয়। কারণ কেয়ামতের দিন মানুষের কাছে কোনো টাকা-পয়সা থাকবে না। তখন অন্যায়ের সমপরিমাণ সওয়াব নিয়ে নেওয়া হবে। সওয়াব না থাকলে মজলুম ব্যক্তির গুনাহগুলো তার উপরে চাপিয়ে দেওয়া হবে। ( সহিহ বুখারি ৬৫৩৪)

ওএফএফ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।