আশুরার রোজা রাখলে কি ৬০ বছর ইবাদতের সওয়াব পাওয়া যায়?
আশুরার দিন রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কে লোকমুখে একটি হাদিস প্রচলিত রয়েছে যে, ‘যে ব্যক্তি আশুরার রোজা রাখে সে ৬০ বছর দিনে রোজা ও রাতে ইবাদত করার সওয়াব লাভ করে।’ আমাদের দেশে ইসলাম বিষয়ক অনেক লেখা ও বইপত্রেও এটিকে হাদিস হিসেবে উল্লেখ করা হয়। হাদিসবিশারদদের মতে এটি হাদিস নয় বরং নবিজির (সা.) নামে বানোয়াট বর্ণনা। হাবিব ইবনে আবি হাবিব নামের এক হাদিস জালকারী থেকে কথাটি বর্ণিত হয়েছে।
ইমাম ইবনুল জাওজি (রহ.) হাদিসটি সম্পর্কে বলেছেন, ‘এটি নিঃসন্দেহে বানোয়াট বর্ণনা।’ (আল-মাউজুআত: ২/২০৩) আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, এটি একটি বাতিল ও ভিত্তিহীন বর্ণনা। হাবিব ইবনে আবি হাবিব এটি বর্ণনা করেছে আর সে হাদিস জাল করত। (আল-মানারুল মুনীফ: ১/৪৭)
তাই এ কথাটি হাদিস হিসেবে বর্ণনা করা নাজায়েজ এবং এ রকম বিশ্বাস রাখাও নাজায়েজ যে আশুরার রোজা রাখলে ৬০ বছর ইবাদতের সওয়াব পাওয়া যাবে।
তবে আশুরার রোজা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আশুরার রোজার ফজিলত সম্পর্কে বিশুদ্ধ সূত্রে যে হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে সেটি হলো, আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِي بَعْدَهُ وَصِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ
আশুরার রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, এ রোজার কারণে আল্লাহ তাআলা পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন। (সহিহ মুসলিম: ২৬১৭)
আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সব সময় আশুরার রোজা রাখতেন। কখনও তিনি আশুরার রোজা বাদ দেননি। উম্মুল মুমিনীন হাফসা (রা.) বলেন, নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কখনো চারটি আমল পরিত্যাগ করেননি। সেগুলো হলো, আশুরার রোজা, জিলহজের প্রথম দশকের রোজা, প্রতি মাসে তিন দিন রোজা, ও ফজরের পূর্বের দুই রাকাত নামাজ। (সুনানে নাসাঈ: ২৪১৬)
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রমজান মাসের রোজা ও আশুরার দিনের রোজার মতো অন্য কোনো রোজাকে এত বেশি গুরুত্ব দিতে দেখিনি। (সহিহ বুখারি: ২০০৬)
ওএফএফ/জেআইএম