যে দরিদ্র শিশুকে জাকাত দেওয়া যায়
অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুর ভরণপোষণের দায়িত্ব থাকে তার বাবার ওপর। যে শিশুর বাবা সম্পদশালী সে দরিদ্র গণ্য হয় না এবং তাকে জাকাত দেওয়া যায় না। বাবা দরিদ্র হলে শিশুকে জাকাত দেওয়া যায়।
তবে শিশু যেহেতু সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করতে অক্ষম, তাই জাকাতের অর্থ শিশুর হাতে দেওয়া যাবে না। সরাসরি শিশুর হাতে জাকাতের অর্থ দিলে জাকাত আদায় হবে না। জাকাতের অর্থ দিতে হবে শিশুর অভিভাবকের হাতে। শিশুর বাবা বা তার অভিভাবকের হাতে শিশুর জন্য খরচ করার দায়িত্ব দিয়ে জাকাতের টাকা দিলে জাকাত আদায় হয়ে যাবে।
যে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা দরিদ্র শিশুদের পড়াশোনা বা লালন-পালনের দায়িত্ব নেয়, তাদের কাছেও দরিদ্র শিশুর জন্য জাকাত দেওয়া যাবে।
কেউ যদি কোনো এতিম বা দরিদ্র শিশুর লালনপালনের দায়িত্ব নেয়, তাহলে নিজের জাকাতের অর্থ তার ভরণপোষণে ব্যয় করতে পারবে। জাকাতের টাকায় খাবার কিনে শিশুকে খাইয়ে দিলে, বা পোশাক কিনে পরার জন্য দিলেও জাকাত আদায় হবে।
জাকাত ইসলামের পাঁচ রোকনের একটি। প্রত্যেক সম্পদশালী মুসলমানের অন্যতম ফরজ কর্তব্য হলো, প্রতি বছর তার বর্ধনশীল সম্পদের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ দান করে দেওয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَمَا تُقَدِّمُوا لِأَنفُسِكُم مِّنْ خَيْرٍ تَجِدُوهُ عِندَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
আর তোমরা নামাজ কায়েম কর ও জাকাত দাও এবং যে নেক আমল তোমরা নিজদের জন্য আগে পাঠাবে, তা আল্লাহর কাছে পাবে। তোমরা যা করছ নিশ্চয় আল্লাহ তা দেখেন। (সুরা বাকারা: ১১০)
ইসলামে জাকাত দেওয়ার কিছু নির্দিষ্ট খাত আছে। যে কোনো নেক কাজে খরচ করলে জাকাত আদায় হয় না। যেমন মসজিদ নির্মাণের কাজে ব্যয় করলে জাকাত আদায় হবে না। জাকাত ব্যয়ের খাতগুলো বর্ণনা করে আল্লাহ বলেন,
اِنَّمَا الصَّدَقٰتُ لِلۡفُقَرَآءِ وَ الۡمَسٰکِیۡنِ وَ الۡعٰمِلِیۡنَ عَلَیۡهَا وَ الۡمُؤَلَّفَۃِ قُلُوۡبُهُمۡ وَ فِی الرِّقَابِ وَ الۡغٰرِمِیۡنَ وَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ وَ ابۡنِ السَّبِیۡلِ فَرِیۡضَۃً مِّنَ اللّٰهِ وَ اللّٰهُ عَلِیۡمٌ حَکِیۡمٌ
নিশ্চয় সদাকা হচ্ছে দরিদ্র ও অভাবীদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য; তা বণ্টন করা যায় দাস আজাদ করার ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের মধ্যে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত, আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। (সুরা তওবা: ৬০)
হিজরি ক্যালেন্ডার হিসেবে প্রতি বছর একবার জাকাতের হিসাব করতে হয়। আমাদের দেশে অনেকে রমজান মাসে জাকাতের হিসাব করে থাকেন। জাকাতের হিসাব করার পর সাথে সাথে পুরো অর্থ আদায় করা জরুরি নয়, বরং ওই অর্থ সারা বছরই অল্প অল্প করে আদায় করা যায়।
ওএফএফ/এমএস