সুরা হাক্কাহয় কোরআনের পরিচয়
সুরা হাক্কাহ কোরআনের ৬৯তম সূরা, এর আয়াত সংখ্যা ৫২ এবং রুকু সংখ্যা ২। সুরা হাক্কাহ মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।
সুরা হাক্কাহ শুরু হয়েছে ‘হাক্কাহ’ সম্পর্কে প্রশ্নের মাধ্যমে। ‘হাক্কাহ’ শব্দের মূল অর্থ নিশ্চিত বা বাস্তব বিষয়। এখানে ‘হাক্কাহ’ অর্থ কেয়ামত বা শেষ বিচারের দিন যা অবশ্যম্ভাবি বা নিশ্চিত ঘটনা এবং যেদিন আল্লাহর পুরস্কারের ওয়াদা ও শাস্তির সতর্কবার্তা বাস্তবায়িত হবে এবং মানুষের চূড়ান্ত পরিণতি নির্ধারিত হবে।
সুরা হাক্কাহর আলোচ্যবিষয় কেয়ামতের ভয়াবহতা, কোরআন ও ওহির সত্যতা, নবিজির (সা.) রিসালত, কাফেরদের বিভিন্ন অপবাদ, অবিশ্বাস ও পাপাচারের কারণে পূর্ববর্তী বিভিন্ন জাতির শাস্তি ইত্যাদি।
সুরা হাক্কাহর ৩৮-৫২ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
(৩৮)
فَلا أُقْسِمُ بِمَا تُبْصِرُونَ
ফালা উকসিমু বিমা তুবসিরূন।
আমি কসম করছি তোমরা যা দেখতে পাও তার
(৩৯)
وَمَا لا تُبْصِرُونَ
ওয়ামা-লা-তুবসিরূন।
এবং যা তোমরা দেখতে পাও না তারও;
(৪০)
إِنَّهُ لَقَوْلُ رَسُولٍ كَرِيمٍ
ইন্নাহূ লাকাওলু রাসূলিন কারীম।
নিশ্চয়ই এই কুরআন এক সম্মানিত রাসূলের বহনকৃত বার্তা।
(৪১)
وَمَا هُوَ بِقَوْلِ شَاعِرٍ قَلِيلاً مَا تُؤْمِنُونَ
এটা কোন কবির রচনা নয়; তোমরা অল্পই বিশ্বাস কর,
(৪২)
وَلا بِقَوْلِ كَاهِنٍ قَلِيلاً مَا تَذَكَّرُونَ
ওয়ালা বিকাওলি কাহিনিন কালীলাম মা তাযাক্কারূন।
এটা কোন গণকের কথাও নয়, তোমরা অল্পই অনুধাবন কর।
(৪৩)
تَنْزِيلٌ مِنْ رَبِّ الْعَالَمِينَ
তানঝীলুম মির রাব্বিল আলামীন।
এটা জগতসমূহের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ।
(৪৪)
وَلَوْ تَقَوَّلَ عَلَيْنَا بَعْضَ الْأَقَاوِيلِ
ওয়ালাও তাকাওওয়ালা আলাইনা বাদাল আকাবীল।
সে (নবি আল্লাহর অবাধ্য হয়ে) যদি আমার নামে কোন কথা রচনা করে চালাতে চেষ্টা করত,
(৪৫)
لَأَخَذْنَا مِنْهُ بِالْيَمِينِ
লাআখাযনা মিনহু বিলইয়ামীন।
তবে আমি তার ডান হাত ধরে ফেলতাম
(৪৬)
ثُمَّ لَقَطَعْنَا مِنْهُ الْوَتِينَ
সুম্মা লাকাত‘না মিনহুল ওয়াতীন।
তারপর তার জীবন-ধমনি কেটে দিতাম।
(৪৭)
فَمَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ عَنْهُ حَاجِزِينَ
ফামা মিনকুম মিন আহাদিন আনহু হাজিঝীন।
তখন তোমাদের কেউ তাকে রক্ষা করার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারতে না।
(৪৮)
وَإِنَّهُ لَتَذْكِرَةٌ لِلْمُتَّقِينَ
ওয়া ইন্নাহূ লাতাযকিরাতুল লিলমুত্তাকীন।
নিশ্চয়ই কোরআন মুত্তাকিদের জন্য উপদেশবাণী।
(৪৯)
وَإِنَّا لَنَعْلَمُ أَنَّ مِنْكُمْ مُكَذِّبِينَ
ওয়া ইন্না লানা‘লামু আন্না মিনকুম মুকাযযিবীন।
আমি জানি যে, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ মিথ্যারোপ করবে।
(৫০)
وَإِنَّهُ لَحَسْرَةٌ عَلَى الْكَافِرِينَ
ওয়া ইন্নাহূ লাহাসরাতুন আলাল কাফিরীন।
এবং এই কোরআন নিশ্চয়ই কাফেরদের অনুশোচনার কারণ হবে,
(৫১)
وَإِنَّهُ لَحَقُّ الْيَقِينِ
ওয়া ইন্নাহূ লাহাক্কুল ইয়াকীন।
এবং এটাই নিশ্চিত সত্য বাণী।
(৫২)
فَسَبِّحْ بِاسْمِ رَبِّكَ الْعَظِيمِ
এই আয়াতগুলো থেকে যে শিক্ষা ও নির্দেশনা আমরা পাই:
১. আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়াতাআলা তার সৃষ্টিকুলের যে কোনো কিছুর শপথ করতে পারেন। তবে বান্দাদের ওপর শুধু আল্লাহর নামে শপথ করা আবশ্যক, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো কিছুর শপথ করা নাজায়েজ।
২. মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসুল। তার কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি নিজের পক্ষ থেকে কিছুই রচনা করেননি, গণকদের মতো অশুভ শক্তির সাহায্যও নেননি, বরং আল্লাহর বাণী তার নির্দেশক্রমে তার বান্দাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।
৩. আল্লাহর নবিরা নিজেদের মনগড়া কোনো কথা আল্লাহর নামে চালাননি। এ রকম কাজ করার ক্ষমতা তাদের ছিল না। আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরোপ করলে তারা ছাড় পেতেন না বরং আল্লাহর কঠিন শাস্তি তাদের পাকড়াও করতো।
৪. নামাজের রুকুতে আমরা যে তাসবিহ পাঠ করে থাকি `সুবাহনা রাব্বিআল আযীম’ তা সুরা হাক্কাহর শেষ আয়াত থেকে গৃহীত হয়েছে। উকবাহ ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যখন অবতীর্ণ হলো, ‘ফাসাবিবহ বিসমি রব্বিকাল আযীম’ আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা এটা রুকুতে পাঠ করবে। তারপর ‘সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আলা’ অবতীর্ণ হলে তিনি বললেন, তোমরা এটা সিজদাতে পাঠ করবে। (সুনানে আবু দাউদ: ৮৬৯)
ওএফএফ/এএসএম