বিচার দিবসে যাদের আমলনামা দেওয়া হবে বাম হাতে

ওমর ফারুক ফেরদৌস
ওমর ফারুক ফেরদৌস ওমর ফারুক ফেরদৌস , আলেম ও লেখক
প্রকাশিত: ০৯:৫৮ এএম, ১২ জুন ২০২৪

সুরা হাক্কাহ‌ কোরআনের ৬৯তম সূরা, এর আয়াত সংখ্যা ৫২ এবং রুকু সংখ্যা ২। সুরা হাক্কাহ মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।

সুরা হাক্কাহ শুরু হয়েছে ‘হাক্কাহ’ সম্পর্কে প্রশ্নের মাধ্যমে। ‘হাক্কাহ’ শব্দের মূল অর্থ নিশ্চিত বা বাস্তব বিষয়। এখানে ‘হাক্কাহ’ অর্থ কেয়ামত বা শেষ বিচারের দিন যা অবশ্যম্ভাবি বা নিশ্চিত ঘটনা এবং যেদিন আল্লাহর পুরস্কারের ওয়াদা ও শাস্তির সতর্কবার্তা বাস্তবায়িত হবে এবং মানুষের চূড়ান্ত পরিণতি নির্ধারিত হবে।

সুরা হাক্কাহর আলোচ্যবিষয় কেয়ামতের ভয়াবহতা, কোরআন ও ওহির সত্যতা, নবিজির (সা.) রিসালত, কাফেরদের বিভিন্ন অপবাদ, অবিশ্বাস ও পাপাচারের কারণে পূর্ববর্তী বিভিন্ন জাতির শাস্তি ইত্যাদি।

সুরা হাক্কাহর ২৫-৩৭ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,

(২৫)
وَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِشِمَالِهِ فَيَقُولُ يَا لَيْتَنِي لَمْ أُوتَ كِتَابِيَهْ
ওয়া আম্মা মান ঊতিয়া কিতাবাহূ বিশিমালিহী ফাইয়াকূলু ইয়া লাইতানী লাম ঊতা কিতাবিয়াহ।
আর সেই ব্যক্তি, যার আমলনামা দেওয়া হবে তার বাম হাতে; সে বলবে, হায়! আমাকে যদি আমলনামা দেওয়াই না হত!

(২৬)
وَلَمْ أَدْرِ مَا حِسَابِيَهْ
ওয়া লাম আদরি মা হিসাবিয়াহ।
আর আমি জানতেই না পারতাম, আমার হিসাব কী?

(২৭)
يَا لَيْتَهَا كَانَتِ الْقَاضِيَةَ
ইয়া লাইতাহা কানাতিল কাদিয়াহ।
আহা! মৃত্যুতেই যদি আমার সব শেষ হয়ে যেত!

(২৮)
مَا أَغْنَى عَنِّي مَالِيَهْ
মা আগনা আন্নী মালিয়াহ।
আমার অর্থ-সম্পদ আমার কোন কাজে আসল না!

(২৯)
هَلَكَ عَنِّي سُلْطَانِيَهْ
হালাকা আন্নী সুলতানিয়াহ।
আমার ক্ষমতাও ধ্বংস হয়ে গেছে।

(৩০)
خُذُوهُ فَغُلُّوهُ
খুযূহু ফাগুললূহ।
ফেরেশতাদেরকে বলা হবে, ধর একে, এর গলদেশে বেড়ি পরিয়ে দাও।

(৩১)
ثُمَّ الْجَحِيمَ صَلُّوهُ
সুম্মাল জাহীমা সাললূহ।
তারপর ওকে জাহান্নামে নিক্ষেপ কর।

(৩২)
ثُمَّ فِي سِلْسِلَةٍ ذَرْعُهَا سَبْعُونَ ذِرَاعاً فَاسْلُكُوهُ
সুম্মা ফী সিলসিলাতিন যারউহা সাবঊনা যিরাআন ফাসলুকূহ।
তারপর ওকে এমন শিকলে গেঁথে দাও, যার পরিমাণ হবে সত্তর হাত।

(৩৩)
إِنَّهُ كَانَ لا يُؤْمِنُ بِاللهِ الْعَظِيمِ
ইন্নাহূ কানা লা ইউমিনু বিল্লাহিল আজীম।
সে মহান আল্লাহর উপর ঈমান রাখত না।

(৩৪)
وَلا يَحُضُّ عَلَى طَعَامِ الْمِسْكِينِ
ওয়ালা ইয়াহদ্দু আলা তাআমিল মিসকীন।
এবং দরিদ্রকে খাদ্য দানে উৎসাহ দিত না।

(৩৫)
فَلَيْسَ لَهُ الْيَوْمَ هَاهُنَا حَمِيمٌ
লাইছা লাহুল ইয়াওমা হা-হুনা- হামীম।
তাই আজকের দিন এখানে তার কোন সুহৃদ নাই।

(৩৬)
وَلا طَعَامٌ إِلَّا مِنْ غِسْلِينٍ
ওয়ালা তাআমুন ইল্লা মিন গিসলীন।
এবং কোন খাদ্য থাকবে না ক্ষতনিঃসৃত পুঁজ ছাড়া,

(৩৭)
لا يَأْكُلُهُ إِلَّا الْخَاطِئُونَ
লা ইয়াকুলুহূ ইল্লাল খাতিঊন।
যা পাপিষ্ঠরা ছাড়া কেউ খাবে না।

এ আয়াতগুলো থেকে যে শিক্ষা নির্দেশনা আমরা পাই:

১. কেয়ামতের দিন কাফের ও পাপাচারীদের আমলনামা দেওয়া হবে বাম হাতে। কারো আমলনামা বাম হাতে দেওয়া হলেই সে বুঝে যাবে তার পরিণতি জাহান্নাম। সে তখন চরম হতাশায় বিলাপ করতে থাকবে।

২. দুনিয়ার সম্পদ ও ক্ষমতা আখেরাতে কোনো কাজে আসবে না। সম্পদ ও ক্ষমতার দম্ভে দুনিয়াতে যারা অন্ধ হয়ে ছিল, জুলুম, কুফর, পাপাচারে নিমজ্জিত ছিল, আখেরাতে তাদের কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।

৩. আখেরাতে জাহান্নামে পতিত হওয়ার অন্যতম কারণ হবে মহান আল্লাহর ওপর ইমান না আনা।

৪. দুনিয়াতে সম্পদশালী হওয়ার পরও দরিদ্রদের হক আদায় না করা, জাকাত না দেওয়া একটা বড় পাপ যে কারণে আখেরাতে শাস্তি ভোগ করতে হবে।

ওএফএফ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।