কোরআনে মসজিদ নির্মাণ ও আবাদ করার ফজিলত
মুসলমানদের সমাজের একটি অপরিহার্য ইমারত ও প্রতিষ্ঠান হলো মসজিদ। এটি মুসলমানদের সম্মিলিতভাবে নামাজ আদায়ের স্থান, দীন শেখার স্থান এবং মুসলমানদের সব ধরনের সামাজিক কার্যক্রমের কেন্দ্র।
আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মক্কায় নবি ইবরাহিমের (আ.) প্রতিষ্ঠিত মসজিদুল হারামে নামাজ আদায় করতেন। মক্কা ছেড়ে হিজরতের সময় মদিনায় পৌঁছার আগেই কুবায় যাত্রাবিরতিকালে সেখানে তিনি একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছেন যা মসজিদে কুবা নামে প্রসিদ্ধ। মদিনায় পৌঁছে নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মসজিদে নববি প্রতিষ্ঠা করেন। নিয়মিত নামাজ আদায়, দীনি তালিম-তরবিয়ত ছাড়াও এই মসজিদটি থেকেই তিনি মদিনার প্রশাসনিক সব কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।
কোরআনের বিভিন্ন আয়াত থেকে মসজিদের মর্যাদা, গুরুত্ব ও ফজিলত, মসজিদ নির্মাণকারীদের মর্যাদা বোঝা যায়। এখানে আমরা কয়েকটি আয়াত উল্লেখ করছি।
মসজিদ নির্মাণ নবিদের কাজ
কোরআনে আল্লাহ তার নবি ও খলিল ইবরাহিমের (আ.) কাবা ও মসজিদুল হারাম নির্মাণের ঘটনা বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। যে কাজের তত্ত্বাবধান করেছেন, দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা স্বয়ং। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَ اِذۡ جَعَلۡنَا الۡبَیۡتَ مَثَابَۃً لِّلنَّاسِ وَ اَمۡنًا وَ اتَّخِذُوۡا مِنۡ مَّقَامِ اِبۡرٰهٖمَ مُصَلًّی وَ عَهِدۡنَاۤ اِلٰۤی اِبۡرٰهٖمَ وَ اِسۡمٰعِیۡلَ اَنۡ طَهِّرَا بَیۡتِیَ لِلطَّآئِفِیۡنَ وَ الۡعٰکِفِیۡنَ وَ الرُّکَّعِ السُّجُوۡدِ
আর স্মরণ কর, যখন আমি কাবাকে মানুষের জন্য মিলনকেন্দ্র ও নিরাপদ স্থান বানালাম এবং বললাম ‘তোমরা মাকামে ইবরাহিমকে নামাজের স্থানরূপে গ্রহণ কর’। আর আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম যে, তোমরা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, ইতেকাফকারী ও রুকু-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র কর। (সুরা বাকারা: ১২৫)
মসজিদ নির্মাণের সময় ইবরাহিম ও ইসমাইলের (আ.) দোয়ার কথা বর্ণনা করে আল্লাহ বলেন,
وَ اِذۡ یَرۡفَعُ اِبۡرٰهٖمُ الۡقَوَاعِدَ مِنَ الۡبَیۡتِ وَ اِسۡمٰعِیۡلُ ؕ رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّا ؕ اِنَّکَ اَنۡتَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ رَبَّنَا وَ اجۡعَلۡنَا مُسۡلِمَیۡنِ لَکَ وَ مِنۡ ذُرِّیَّتِنَاۤ اُمَّۃً مُّسۡلِمَۃً لَّکَ ۪ وَ اَرِنَا مَنَاسِکَنَا وَ تُبۡ عَلَیۡنَا ۚ اِنَّکَ اَنۡتَ التَّوَّابُ الرَّحِیۡمُ رَبَّنَا وَ ابۡعَثۡ فِیۡهِمۡ رَسُوۡلًا مِّنۡهُمۡ یَتۡلُوۡا عَلَیۡهِمۡ اٰیٰتِکَ وَ یُعَلِّمُهُمُ الۡکِتٰبَ وَ الۡحِکۡمَۃَ وَ یُزَکِّیۡهِمۡ ؕ اِنَّکَ اَنۡتَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ
আর স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম ও ইসমাঈল কাবার ভিতগুলো ওঠাচ্ছিল এবং বলছিল, হে আমাদের রব, আমাদের পক্ষ থেকে কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী। হে আমাদের রব, আমাদেরকে আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধরের মধ্য থেকে আপনার অনুগত জাতি বানান। আর আমাদেরকে আমাদের ইবাদাতের বিধি-বিধান দেখিয়ে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। হে আমাদের রব, তাদের মধ্যে তাদের থেকে একজন রাসুল প্রেরণ করুন, যে তাদের প্রতি আপনার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবে আর তাদেরকে পবিত্র করবে। নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সুরা বাকারা: ২৭-২৯)
সুরা হজে নবি ইবরাহিমকে (আ.) মসজিদ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের নির্দেশ দেওয়ার কথা বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَ اِذۡ بَوَّاۡنَا لِاِبۡرٰهِیۡمَ مَکَانَ الۡبَیۡتِ اَنۡ لَّا تُشۡرِکۡ بِیۡ شَیۡئًا وَّ طَهِّرۡ بَیۡتِیَ لِلطَّآئِفِیۡنَ وَ الۡقَآئِمِیۡنَ وَ الرُّکَّعِ السُّجُوۡدِ
আর স্মরণ কর, যখন আমি ইবরাহিমকে সে ঘরের (বায়তুল্লাহ) স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম, আমার সাথে কাউকে শরিক করবে না এবং আমার ঘরকে পাক সাফ রাখবে তাওয়াফকারী, রুকু-সিজদা ও দাঁড়িয়ে নামাজ আদায়কারীদের জন্য।
মসজিদ নির্মাণ ও আবাদ মুমিন-মুত্তাকিদের কাজ
সুরা তাওবায় আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়াতাআলা মসজিদকে নিজের দিকে সম্পৃক্ত করে মসজিদ নির্মাণ ও আবাদকারীদের নেক বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে বলেন,
اِنَّمَا یَعۡمُرُ مَسٰجِدَ اللّٰهِ مَنۡ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَ اَقَامَ الصَّلٰوۃَ وَ اٰتَی الزَّکٰوۃَ وَ لَمۡ یَخۡشَ اِلَّا اللّٰهَ فَعَسٰۤی اُولٰٓئِکَ اَنۡ یَّکُوۡنُوۡا مِنَ الۡمُهۡتَدِیۡنَ
একমাত্র তারাই আল্লাহর মসজিদসমূহ আবাদ করবে যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ইমান রাখে, নামাজ কায়েম করে, জাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না। আশা করা যায়, তারা হিদায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সুরা বাকারা: ১৮)
মসজিদে কুবা নির্মাণ ও আবাদকারীদের প্রশংসা
সুরা তাওবায় মসজিদে কুবা নির্মাণ ও আবাদকারীদের প্রশংসা করে আল্লাহ তাআলা বলেন,
لَمَسۡجِدٌ اُسِّسَ عَلَی التَّقۡوٰی مِنۡ اَوَّلِ یَوۡمٍ اَحَقُّ اَنۡ تَقُوۡمَ فِیۡهِ فِیۡهِ رِجَالٌ یُّحِبُّوۡنَ اَنۡ یَّتَطَهَّرُوۡا وَ اللّٰهُ یُحِبُّ الۡمُطَّهِّرِیۡنَ
যে মসজিদ প্রথম দিন থেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাকওয়ার ওপর, তোমার নামাজে দাঁড়ানোর জন্য সেটাই অধিক উপযুক্ত, সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালবাসে আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন। (সুরা তাওবা: ১০৮)
মসজিদ সমুন্নত করার নির্দেশ
সুরা নুরে আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়াতাআলা মসজিদকে মর্যাদায় সমুন্নত করার ও মসজিদে তার নাম স্মরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং মসজিদে ইবাদতকারীদের প্রশংসা করেছেন। আল্লাহ বলেন,
فِیۡ بُیُوۡتٍ اَذِنَ اللّٰهُ اَنۡ تُرۡفَعَ وَ یُذۡکَرَ فِیۡهَا اسۡمُهٗ ۙ یُسَبِّحُ لَهٗ فِیۡهَا بِالۡغُدُوِّ وَ الۡاٰصَال رِجَالٌ لَّا تُلۡهِیۡهِمۡ تِجَارَۃٌ وَّ لَا بَیۡعٌ عَنۡ ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ اِقَامِ الصَّلٰوۃِ وَ اِیۡتَآءِ الزَّکٰوۃِ ۪ۙ یَخَافُوۡنَ یَوۡمًا تَتَقَلَّبُ فِیۡهِ الۡقُلُوۡبُ وَ الۡاَبۡصَارُ
যেসব গৃহকে মর্যাদায় সমুন্নত করতে এবং তাতে তাঁর নাম স্মরণ করতে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, সেখানে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এমন ব্যক্তিরা যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয় বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে, নামাজ কায়েম ও জাকাত প্রদান থেকে বিরত রাখেনা, তারা ভয় করে সেই দিনকে যেদিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। (সুরা নুর: ৩৬, ৩৭)
মসজিদে এক আল্লাহর ইবাদত করার নির্দেশ
মসজিদ শুধু আল্লাহর জন্য উল্লেখ করে মসজিদে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করতে নিষেধ করে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَّ اَنَّ الۡمَسٰجِدَ لِلّٰهِ فَلَا تَدۡعُوۡا مَعَ اللّٰهِ اَحَدًا
নিশ্চয় মসজিদগুলো শুধু আল্লাহর জন্য, কাজেই তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ডেকো না। (সুরা জিন: ১৮)
এ আয়াতগুলো ইসলামে মসজিদের গুরুত্ব ও ফজিলত বোঝার জন্য যথেষ্ট। এ ছাড়া বহু হাদিসে মসজিদ নির্মাণ ও মসজিদে ইবাদতের ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।
ওএফএফ/এএসএম