যাদের আমলনামা থাকবে ইল্লিয়্যিনে

ওমর ফারুক ফেরদৌস
ওমর ফারুক ফেরদৌস ওমর ফারুক ফেরদৌস , আলেম ও লেখক
প্রকাশিত: ০৯:৪৮ এএম, ১৫ মে ২০২৪

সুরা মুতাফফিফীন‌ কোরআনের ৮৩তম সুরা, এর আয়াত সংখ্যা ৩৬টি। সুরা মুতাফফিফীন‌ মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। ‘মুতাফফিফীন’ শব্দটি ‘মুতাফফিফ’ শব্দের বহুবচন, অর্থ ওজনে কম দেয় এমন ব্যক্তি। ওজনে কম দেয় এমন ব্যক্তিদের শাস্তির ঘোষণা দিয়ে শুরু হয়েছে সুরাটি। সুরাটিতে আরও আলোচিত হয়েছে, কেয়ামতের দিনের ভয়াবহতা, নেক ও বদ আমলকারীদের আখেরাতের ঠিকানা, মুমিনদের আখেরাতের বিভিন্ন নেয়ামত, কাফেরদের শাস্তি ইত্যাদি।

সুরা মুতাফফিফীনের ১৮-২৮ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

(১৮)

كَلَّا إِنَّ كِتَابَ الْأَبْرَارِ لَفِي عِلِّيِّينَ

কাল্লা ইন্না কিতাবাল আবরারি লাফী ইল্লিয়্যিন।
কখনও না, নিশ্চয় সৎলোকদের আমলনামা আছে ইল্লিয়্যিনে।

(১৯)

وَمَا أَدْرَاكَ مَا عِلِّيُّونَ

ওয়ামাআদরাকা মা ইলিলইয়ূন।
আপনি জানেন ইল্লিয়্যিন কি?

(২০)

كِتَابٌ مَرْقُومٌ

কিতা-বুমমারকূম
সিলমোহরকৃত কিতাব।

(২১)

يَشْهَدُهُ الْمُقَرَّبُونَ
ইয়াশহাদুহুল মুকাররাবূন।
আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতারা তার তত্ত্বাবধান করে।

(২২)

إِنَّ الْأَبْرَارَ لَفِي نَعِيمٍ
ইন্নাল আবরারা লাফী নাঈম।
নিশ্চয় নেককাররাই থাকবে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের মধ্যে।

(২৩)
عَلَى الْأَرَائِكِ يَنْظُرُونَ

আলাল আরাইকি ইয়ানজুরুন।
উচ্চ আসনে বসে তারা চারদিকের সবকিছু দেখতে থাকবে।

(২৪)
تَعْرِفُ فِي وُجُوهِهِمْ نَضْرَةَ النَّعِيمِ
তা‘রিফু ফী উজূহিহিম নাদরাতান নাঈম।
তুমি তাদের চেহারায় স্বাচ্ছন্দ্যের দীপ্তি দেখতে পাবে,

(২৫)
يُسْقَوْنَ مِنْ رَحِيقٍ مَخْتُومٍ
ইউসকাওনা মির রাহীকিম মাখতূম।
তাদেরকে মোহর করা বিশুদ্ধ পানীয় পান করানো হবে।

(২৬)
خِتَامُهُ مِسْكٌ وَفِي ذَلِكَ فَلْيَتَنَافَسِ الْمُتَنَافِسُونَ

খিতামুহূ মিছকুওঁ ওয়া ফী যালিকা ফালইয়াতানাফাসিল মুতানাফিসূন।
তার মোহর হবে কস্তুরী। এ বিষয়ে প্রতিযোগীদের প্রতিযোগিতা করা উচিত।

(২৭)
وَمِزَاجُهُ مِنْ تَسْنِيم

ওয়া মিঝাজুহূ মিন তাসনীম।
তার মিশ্রণ হবে তসনীমের পানি। (তাসনীম হল জান্নাতের একটি ঝরণা। তাসনীমের পানি মেলানো হলে ওই পানীয়ের স্বাদ আরও বেড়ে যাবে।)

(২৮)
عَيْناً يَشْرَبُ بِهَا الْمُقَرَّبُونَ

আইনাইঁ ইয়াশরাবু বিহাল মুকাররাবূন।
এটা একটা ঝরণা, যার পানি পান করবে নৈকট্য অর্জনকারীরা।

এ আয়াতগুলো থেকে যে শিক্ষা ও নির্দেশনা আমরা পাই

১. আবরার বা নেক ব্যক্তিদের আমলনামা ইল্লিয়্যিনে আছে। ইল্লিয়্যিন হলো সমস্ত নেক ও কল্যাণকর কাজের নথি বা খাতা; যেখানে মুমিনদের সব নেক কাজের বিবরণ লিপিবদ্ধ রয়েছে।

২. সত্যিকার মুমিন ও মুত্তাকি বান্দাদের জন্য আল্লাহ তাআলা আখেরাতে অপরিসীম নেয়ামত ও সুখময় জীবন প্রস্তুত রেখেছেন।

৩. জান্নাতে মুমিনদের এমন এক পানীয় পান করানো হবে যার সুস্বাদ ও সুঘ্রাণ হবে অত্যন্ত মনোহর। ওই পানীয় তৈরি করা হবে জান্নাতের তাসনীম ঝরণার পানি মিশ্রিত করে।

৪. আখেরাতের নেয়ামত লাভের জন্য আমাদের কর্তব্য নেক কাজে প্রতিযোগিতা করা। মানুষ যদি আখেরাতের নেয়ামত, বিভিন্ন আমলের প্রতিদান যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পারতো, তাহলে তারা ওই নেক আমলগুলো করার জন্য প্রতিযোগিতা করতো। হাদিসে এসেছে, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِي النِّدَاءِ وَالصَّفِّ الأَوَّلِ، ثُمَّ لَمْ يَجِدُوا إِلاَّ أَنْ يَسْتَهِمُوا عَلَيْهِ لاَسْتَهَمُوا، وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِي التَّهْجِيرِ لاَسْتَبَقُوا إِلَيْهِ، وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِي الْعَتَمَةِ وَالصُّبْحِ لأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا

মানুষ যদি আজান ও প্রথম কাতারের সাওয়াবের কথা জানতো এবং লটারি ছাড়া তা লাভের কোন উপায় না থাকতো তবে তারা এর জন্য লটারি করতো। যদি নামাজে দ্রুত মসজিদে উপস্থিত হওয়ার ফজিলত মানুষ জানতো, তবে তারা এর জন্য প্রতিযোগিতা করতো। ইশা ও ফজরের সওয়াব যদি তারা জানতো, তবে তারা এ দুই নামাজের জন্য হামাগুড়ি দিয়ে হলেও মসজিদে আসতো। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)

ওএফএফ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।