ফেরাউনের ঘটনা খোদাভীরুদের জন্য শিক্ষণীয়
সুরা নাজিআত কোরআনের ৭৯তম সুরা, এর আয়াত সংখ্যা ৪৬ এবং রুকু তথা অনুচ্ছেদ সংখ্যা ২। সুরা নাজিআত মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এ সুরায় আল্লাহ তাআলা সুনিশ্চিতভাবে মানুষকে অবহিত করেছেন কেয়ামত সংঘটিত হবেই। মৃত্যুর পর মানুষকে আবার জীবিত করে হবে এবং নিজেদের কাজের প্রতিফল মানুষকে ভোগ করতেই হবে। সুরাটির শুরুতে মানুষের প্রাণ হরণকারী, আল্লাহর বিধানসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নকারী এবং আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী সারা বিশ্ব জাহানের ব্যবস্থাপনা পরিচালনাকারী ফেরেশতাদের শপথ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়াতাআলার অসীম ক্ষমতার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে; যে সর্বশক্তিমান স্রষ্টা সুনিপুনভাবে গোটা বিশ্বজাহান পরিচালনা করছেন, তিনি অবশ্যই পৃথিবী ধ্বংস করে দিতে এবং মানুষকে পুনরায় জীবিত করে হিসাব নিকাশের জন্য জমা করতে সক্ষম।
সুরা নাজিআতের ১৫-২৬ আয়াতে নবি মুসা (আ.) ও ফেরাউনের ঘটনা দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করে আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়াতাআলা বলেন,
(১৫)
هَلْ أَتاكَ حَدِيثُ مُوسى
হাল আতাকা হাদীসু মূসা।
মুসার বৃত্তান্ত আপনার কাছে পৌছেছে কি?
(১৬)
إِذْ ناداهُ رَبُّهُ بِالْوادِ الْمُقَدَّسِ طُوىً
ইয নাদাহু রাব্বুহূ বিলওয়াদিল মুকাদ্দাছি তুওয়া।
যখন তার পালনকর্তা তাকে পবিত্র তুয়া উপ্যকায় আহবান করেছিলেন,
(১৭)
اِذْهَبْ إِلى فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغى
ইযহাব ইলা ফিরআউনা ইন্নাহূ তাগা।
ফেরাউনের কাছে যাও, নিশ্চয় সে সীমালংঘন করেছে।
(১৮)
فَقُلْ هَلْ لَكَ إِلى أَنْ تَزَكّى
ফাকুল হাল্লাকা ইলাআন তাঝাক্কা।
তাকে বল, তোমার পবিত্র হওয়ার আগ্রহ আছে কি?
(১৯)
وَأَهْدِيَكَ إِلى رَبِّكَ فَتَخْشى
ওয়া আহদিয়াকা ইলা-রাব্বিকা ফাতাখশা-।
আমি তোমাকে তোমার রবের দিকে পথ দেখাব, যাতে তুমি তাকে ভয় কর।
(২০)
فَأَراهُ الْآيَةَ الْكُبْرى
ফাআরাহুল-আয়াতাল-কুবরা।
সে তাকে মহা-নিদর্শন দেখাল।
(২১)
فَكَذَّبَ وَعَصى
ফাকাযযাবা ওয়া আসা।
কিন্তু সে মিথ্যারোপ করল এবং অমান্য করল।
(২২)
ثُمَّ أَدْبَرَ يَسْعى
সুম্মা আদবারা ইয়াসআ।
তারপর প্রতিকার চেষ্টায় প্রস্থান করল।
(২৩)
فَحَشَرَ فَنادى
ফাহাশারা ফানাদা।
সে সকলকে সমবেত করল এবং সজোরে চিৎকার করল,
(২৪)
فَقالَ أَنَا رَبُّكُمُ الْأَعْلى
ফাকালা আনা রাব্বুকুমুল আলা।
বলল, আমিই তোমাদের সেরা রব।
(২৫)
فَأَخَذَهُ اللهُ نَكالَ الْآخِرَةِ وَالْأُولى
ফাআখাযাহুল্লা-হু নাকা-লাল আ-খিরাতি ওয়াল ঊলা-।
ফলে আল্লাহ তাকে পরকালের ও ইহকালের শাস্তি দিলেন।
(২৬)
إِنَّ فِي ذلِكَ لَعِبْرَةً لِمَنْ يَخْشى
ইন্না ফী যা-লিকা লা‘ইবরাতাল লিমাইঁ ইয়াখশা।
যে ভয় করে তার জন্যে অবশ্যই এতে শিক্ষা রয়েছে।
এ আয়াতগুলো থেকে যে শিক্ষা ও নির্দেশনা আমরা পাই
১. আল্লাহর দীনের দাঈদের কর্তব্য হলো অবিশ্বাসীদের কাছে আল্লাহর দাওয়াত পৌঁছানো এবং ধৈর্যের সাথে সত্যের কথা বলে যাওয়া। আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়াতাআলা তার ইচ্ছা অনুযায়ী যথাসময়ে তার দাওয়াতকে সফল করবেন।
২. মুসা (আ.) দুনিয়ার জীবনেই আল্লাহর সাথে সরাসরি কথা বলেছেন। এটা তার বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
৩. মানুষের পবিত্র ও পরিশুদ্ধ হওয়ার একমাত্র উপায় হলো ইসলাম গ্রহণ করে আল্লাহ প্রদত্ত শরিয়ত অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। এ ছাড়া পরিশুদ্ধির আর কোনো পথ নেই।
৪. যারা আল্লাহর পরিচয় লাভ করে, তারা আল্লাহকে ভয় করে। আল্লাহর ব্যাপারে যাদের জ্ঞান নেই, তারাই হয় উদ্ধত ও বেপরোয়া।
৫. আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়াতাআলা অনেক নবিদের মুজিজা বা অলৌকিক নিদর্শন দান করেছেন যেন মানুষ বুঝতে পারে তারা আল্লাহর রাসুল। কিন্তু যারা উদ্ধত ও অহংকারী তারা মুজিজা দেখার পরও সত্য গ্রহণ করে না। যেমন নবি মুসাকে (আ.) দেওয়া মহানিদর্শন দেখেও ফেরাউন ইমান আনেনি।
ওএফএফ/এএসএম