ইসলামে তৃতীয় লিঙ্গের পরিচয় ও বিধান
যেসব মানুষের পুলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ উভয়টিই রয়েছে অথবা কোনোটিই নেই, ইসলামে তাদের খুনসা বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ বলা হয়। অর্থাৎ একই শরীরে নারী ও পুরুষ উভয় বৈশিষ্ট্য থাকলে বা কোনো লিঙ্গবৈশিষ্ট্য না থাকলে তারা ইসলামে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ বিবেচিত হয়।
ইসলামি শরিয়তে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়:
এক. পুরুষ তৃতীয় লিঙ্গ
তৃতীয় লিঙ্গের যেসব মানুষের মধ্যে পুরুষ বৈশিষ্ট্য প্রবল থাকে ইসলামে পুরুষ গণ্য করা হয়। যেমন দাড়ি-গোঁফ গজানো, নারী সহবাসে সক্ষমতা, স্বপ্নদোষ হওয়া ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য পাওয়া গেলে তাকে পুরুষ গণ্য করা হয় এবং পুরুষের যাবতীয় বিধিবিধান তার ব্যাপারে প্রযোজ্য হয়। যেমন নারীর সাথে তার বিয়ে বৈধ হয়, পুরুষের সাথে অবৈধ হয়, নারীর সাথে পর্দা জরুরি হয় এবং মিরাসের সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে তাকে পুরুষ বিবেচনা করে সম্পদ বণ্টন করা হয়।
দুই. নারী তৃতীয় লিঙ্গ
তৃতীয় লিঙ্গের যেসব মানুষের মধ্যে নারী বৈশিষ্ট্য প্রবল তাকে নারী গণ্য করা হয়। যেমন যেসব হিজড়ার স্তন, ঋতুস্রাব, সহবাসের উপযোগিতা, গর্ভ সঞ্চার হওয়া ইত্যাদি নারী বৈশিষ্ট্য থাকে, ইসলামে তাদের নারী গণ্য করা হয় এবং নারীদের যাবতীয় বিধিবিধান তার ব্যাপারে প্রযোজ্য হয়। যেমন পুরুষের সাথে তার বিয়ে বৈধ হয়, নারীর সাথে অবৈধ হয়, পুরুষের সাথে পর্দা জরুরি হয় এবং মিরাসের সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে তাকে নারী বিবেচনা করে সম্পদ বণ্টন করা হয়।
তিন. জটিল তৃতীয় লিঙ্গ
তৃতীয় লিঙ্গের যেসব মানুষের মধ্যে নারী-পুরুষের কোনো বৈশিষ্ট্যই পরিলক্ষিত হয় না অথবা উভয় ধরনের বৈশিষ্ট্য সমানভাবে পরিলক্ষিত হয়, তাদের শরিয়তের পরিভাষায় খুনসায়ে মুশকিলা বা জটিল তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ গণ্য করা হয়। তাদের ব্যাপারে শরিয়তের নির্দেশনা হলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিভিন্ন চিহ্ন বা আলামতের ভিত্তিতে তাকে পুরুষ বা নারী শ্রেণিভুক্ত করার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। সাধারণত যে কোনো দিকে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের শারীরিক বৈশিষ্ট্য প্রবল হয়।
যদি তৃতীয় লিঙ্গের বিরল কোনো মানুষকে কোনোভাবেই কোনো একটি শ্রেণিভুক্ত করা না যায়, তাহলে চিকিৎসার মাধ্যমে নারী বা পুরুষের বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হওয়ার চেষ্টা করা তার জন্য জায়েজ। চিকিৎসা নেওয়ার পর শরীরে প্রকাশিত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী তাকে পুরুষ বা নারী বিবেচনা করা হবে। এর আগ পর্যন্ত পর্দা ও বিয়ের ক্ষেত্রে তার ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। অর্থাৎ পুরুষরা তাকে নারী ও নারীরা পুরুষ বিবেচনা করবে। উত্তরাধিকারের সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে যদি নারী ও পুরুষ হিসেবে সে সমান সম্পত্তির অধিকারী হয়, তাহলে ওই পরিমাণ সম্পত্তি তাকে দিতে হবে। যদি নারী বা পুরুষ হিসেবে ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণ সম্পত্তির অধিকারী হয়, তাহলে তাকে যে লিঙ্গের বিবেচনা করলে সে তুলনামূলক কম সম্পত্তি পাবে, তাকে ওই লিঙ্গের বিবেচনা করে সম্পত্তি বণ্টন করতে হবে।
ওএফএফ/জিকেএস