মুনাফিকরা যেমন হয়

ওমর ফারুক ফেরদৌস
ওমর ফারুক ফেরদৌস ওমর ফারুক ফেরদৌস , আলেম ও লেখক
প্রকাশিত: ০৮:৪৯ পিএম, ১৬ জানুয়ারি ২০২৪

সুরা বাকারার ১৭-২০ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের উপমা ওই ব্যক্তির মতো, যে আগুন জ্বালাল। এরপর যখন আগুন তার চারপাশ আলোকিত করল, আল্লাহ তাদের আলো কেড়ে নিলেন এবং তাদেরকে ছেড়ে দিলেন এমন অন্ধকারে যে তারা দেখতে পায় না। তারা বধির-মূক-অন্ধ; তাই তারা ফিরে আসবে না। কিংবা আকাশের বর্ষণমুখর মেঘের মতো, যাতে রয়েছে ঘন অন্ধকার, বজ্রধ্বনি ও বিদ্যুৎচমক। বজ্রের গর্জনে তারা মৃত্যুর ভয়ে তাদের কানে আঙুল দিয়ে রাখে। আর আল্লাহ কাফেরদের পরিবেষ্টন করে আছেন। বিদ্যুৎচমক তাদের দৃষ্টিশক্তি প্রায় কেড়ে নেয়; যখনই বিদ্যুৎচমক তাদের সামনে প্রকাশিত হয়, তারা পথ চলতে থাকে এবং যখন তাদের ওপর অন্ধকার ছেয়ে যায়, তখন তারা থমকে দাঁড়ায়, আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদের শ্রবণ ও দৃষ্টি শক্তি হরণ করতে পারতেন, আল্লাহ সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।’

এ আয়াতগুলোর মর্ম ও বিধান

এ আয়াতগুলোতে আল্লাহ উদাহরণ দিয়ে মুনাফিকদের অবস্থা বর্ণনা করেছেন। তারা যখন ইমান আনে, ইমানের আলোয় তাদের অন্তর কিছুটা আলোকিত হয় যেমন কেউ আগুন জ্বালালে আগুনের আলোতে তাদের চারপাশ আলোকিত হয়। তারপর যখন তারা কুফরি করে, আল্লাহর ওই আলো নিভিয়ে দেন।

মুনাফিকরা যেহেতু প্রকাশ্যে মুমিন ছিল, তাই দুনিয়ায় মুসলমানদের রাষ্ট্রে তাদের সাথে মুসলমানদের মতোই আচরণ করা হতো। তাদের বিয়ে মুসলমানদের নিয়মে হতো। তাদের মৃতদের সম্পদ মুসলমানদের নিয়মে বণ্টন করা হতো। যুদ্ধলব্ধ সম্পদের একটা অংশও তারা পেতো। অর্থাৎ মুসলমানদের রাষ্ট্রে তারা নিরাপত্তা ও সব রকম সুযোগ সুবিধা পেতো। কিন্তু আখেরাতে তারা রেহাই পাবে না। আখেরাতে তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। যেমন আল্লাহর কোরআনে বলেছেন, ‘মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে।’ (সুরা নিসা: ১৪৫) তাই তাদের মুখে ইসলাম স্বীকার করা ও অন্তরে কুফরি পুষে রাখা আগুনের ক্ষণস্থায়ী আলোর মতো। তারপর তাদের জন্য অন্ধকার ছাড়া কিছুই থাকবে না।

মুনাফিকরা বধির, বোবা ও অন্ধের মতো সত্য না শুনে, সত্য না বলে ও সত্য না দেখে সত্যিকার জ্ঞান ও দৃঢ় ইমান থেকে দূরে থাকে। আল্লাহ জানেন তারা ফিরবে না। এটা আল্লাহর জ্ঞান, তাদেরকে সত্যিকার ইমান থেকে দূরে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে এমন নয়।

কোরআনের আয়াতগুলো তাদের জন্য হয় বর্ষণমুখর মেঘের মতো; তাতে বজ্রের মতো সাবধানবাণী আছে, বিদ্যুত চমকের মতো শক্তিশালী দলিল আছে যা মাঝে মাঝে মুনাফিকদের দ্বিধান্বিত করে।

আল্লাহ পুরো সৃষ্টিজগতকে পরিবেষ্টন করে আছেন। তাতে কাফেররাও অন্তর্ভুক্ত। তার হিসাব, ক্ষমতা বা ইচ্ছা থেকে কেউ বের হতে পারে না। আল্লাহর যদি চান, তাহলে মুমিনরা মুনাফিকদের চিনে ফেলতো। তাদের শাস্তি দিতো বা মুমিনদের সমাজ থেকে বের করে দিতো। কিন্তু আল্লাহ তা চাননি।

তাদের নেফাকের পরও আল্লাহ দুনিয়াতে তাদের শাস্তি দেননি। হানাফি আইনবিশারদ আবু বকর আল জাসসাস এ আয়াতগুলোর আলোকে বলেছেন, দুনিয়ার শাস্তি সব ক্ষেত্রে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী আসে না। আল্লাহর ইচ্ছা ও জ্ঞান অনুযায়ী যে ক্ষেত্রে যে পরিমাণ শাস্তি কল্যাণকর, সে ক্ষেত্রে ততটুকু শাস্তি তিনি নির্ধারণ করেন। (আহকামুল কোরআন: ১/ ২৬-২৭)

সুরা বাকারার প্রথম বিশ আয়াতের মধ্যে দশটি আয়াত মুমিনদের ব্যাপারে, দুটি আয়াত কাফেরদের ব্যাপারে এবং বাকি আটটি আয়াত মুনাফিকদের ব্যাপারে।

উৎস: আত-তাফসিরুল মুনির

ওএফএফ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।