কাফেররা যে কারণে সত্য গ্রহণ করে না

ওমর ফারুক ফেরদৌস
ওমর ফারুক ফেরদৌস ওমর ফারুক ফেরদৌস , আলেম ও লেখক
প্রকাশিত: ০৮:৫২ পিএম, ০৮ জানুয়ারি ২০২৪

সুরা বাকারার ৬ ও ৭ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, নিশ্চয় যারা কুফরি করেছে, তুমি তাদেরকে সতর্ক কর বা না কর, সবই তাদের জন্য সমান, তারা ইমান আনবে না। আল্লাহ তাদের অন্তরে এবং তাদের কানে মোহর লাগিয়ে দিয়েছেন এবং তাদের চোখসমূহে রয়েছে পর্দা। আর তাদের জন্য অপেক্ষা করছে ভয়ানক আজাব।

এ দুটি আয়াতের মর্ম ও বিধান

এ দুটি আয়াতে নবিজিকে (সা.) সান্তনা দেওয়া হয়েছে। তিনি যেন কাফেরদের জন্য বেশি দুঃখ না করেন এবং তাদের ইমানের পথে আনার জন্য ব্যস্ত না হয়ে পড়েন। তাদের ইমান না আনার দায় তার নয়।

কাফেরদের অন্তরে মোহর মেরে দেওয়া হয়েছে মানে তাদের অন্তর সত্য গ্রহণ করতে অক্ষম হয়ে পড়েছে। কানে মোহর মারা ও চোখে পর্দা ঝুলিয়ে দেওয়ার মানে হলো তাদের সামনে কোরআন পড়া হলে তারা বোঝে না। আল্লাহর সৃষ্টি দেখেও তার পরিচয় ও ক্ষমতা তারা উপলব্ধি করতে পারে না। অথবা এর অর্থ হলো তাদেরকে আল্লাহর দিকে ডাকা হলেও তারা ইমান আনে না। এটা তাদের নিজেদের অবাধ্যতা। কোরআনের ত্রুটি নয়, নবিজি (সা.) বা অন্য কারো চেষ্টার ত্রুটিও নয়। তারা নিজেরাই নিজেদের কুফরির কারণ। তারা নিজেদের সুস্থ বৃদ্ধি কাজে লাগিয়ে সত্য উপলব্ধি করেনি এবং সে অনুযায়ী কাজও করেনি।

আয়াতে ‘আল্লাহ মোহর মেরে দিয়েছেন’ বলে বোঝানো হয়েছে, এটা আল্লাহর নীতি যে বারবার সত্য প্রত্যাখ্যান করলে অন্তর সত্য গ্রহণে অক্ষম হয়ে যায়। এ রকম নয় যে তারা কুফুরি করতে বাধ্য বা আল্লাহ তাদেরকে ইমান থেকে ফিরিয়ে রেখেছেন। বরং অনবরত কুফরের প্রভাবে তাদের অন্তর কুফরির দ্বারা বশীভূত ও একাকার হয়ে যায় এবং এবং অন্য কিছু গ্রহণ করার যোগ্যতাই আর তার মধ্যে থাকে না। তাদেরকে এ অবস্থা থেকে উদ্ধার করা আল্লাহর অনুগ্রহ, এ অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া আল্লাহর ন্যায় আচরণ। কারণ তাদের কৃতকর্মের কারণে তৈরি হওয়া শাস্তি থেকে তাদেরকে বের করা আল্লাহর কর্তব্য নয়। তিনি তাদেরকে তাদের কোনো হক থেকে বঞ্চিত করেননি। বরং তিনি শুধু তাদের ওপর অনুগ্রহ করা থেকে বিরত থেকেছেন।

অন্য দুটি আয়াত থেকে এ আয়াতের বক্তব্য স্পষ্ট হয়। আল্লাহ বলেন, আর তারা বলল, আমাদের অন্তরসমূহ আচ্ছাদিত; বরং তাদের কুফরীর কারণে আল্লাহ তাদেরকে লানত করেছেন। তারপর তারা খুব কমই ইমান আনে। (সুরা বাকারা: ৮৮)

আরেকটি আয়াতে আল্লাহ বলেন, তারপর তাদের অধিকাংশই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, অতএব তারা শুনবে না। তারা বলে, ‘তুমি আমাদেরকে যে দিকে আহবান করছ সে বিষয়ে আমাদের অন্তরসমূহ আচ্ছাদিত, আমাদের কানের মধ্যে রয়েছে বধিরতা আর তোমার ও আমাদের মধ্যে রয়েছে অন্তরায়। (সুরা ফুসসিলাত: ৪-৫)

কাফেররা তাদের অহমিকা ও অবাধ্যতার পরও আল্লাহর কর্তৃত্ব থেকে বের হতে পারে না। মহান আল্লাহর সৃষ্ট জগতে হেদায়াত ও ভ্রান্তির স্রষ্টা তিনি, কুফর ও ইমানের স্রষ্টা তিনি। মানুষ নিজের ইচ্ছা ‍অনুযায়ী যে কোনো একটি বেছে নেয়।

সূত্র: আত-তাফসিরুল-মুনির

ওএফএফ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।