হাদিস থেকে শিক্ষা
মুমিনের আদর্শ সবার কল্যাণ কামনা করা
আবু রুকাইয়াহ তামিম ইনে আওস দারি (রা.) থেকে বর্ণিত নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, দীন হলো নসিহত বা কল্যাণ কামনা করার নাম। আমরা বললাম, কার জন্য? তিনি বললেন, আল্লাহর জন্য, তার কিতাবের জন্য, তার রাসুলের জন্য, মুসলমানদের শাসকদের জন্য এবং মুসলমান জনসাধারণের জন্য। (সহিহ মুসলিম)
এই হাদিস থেকে যে শিক্ষাগুলো আমরা পাই
১. নসিহত ব্যাপক শব্দ। নসিহত অর্থ সার্বিকভাবে কারো ভালো চাওয়া, যে কোনো অকল্যাণ থেকে তাকে রক্ষা করার চেষ্টা করা, তার যে কোনো রকম ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি। সব মুসলমানের নাসেহ কল্যাণকামী হওয়া মুসলমানদের অন্যতম কর্তব্য। জারির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন, আমি রাসুলের (সা.) হাতে বয়াত করেছি নামাজ কায়েম, জাকাত প্রদান এবং সব মুসলিমের জন্য নসিহত বা কল্যাণকামিতার ওপর। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
২. কারো ভালো চেয়ে নসিহত করতে চাইলে সেটা গোপনে করা উচিত। গোপনে নসিহত করলেই সেটা প্রকৃত কল্যাণকামিতা হয়। মানুষের সামনে নসিহত করলে সেটা হয় ভর্ৎসনা ও নিন্দা। ফুজাইল ইবনে আয়াজ (রহ.) বলেন, মুমিন দোষ গোপন করে ও নসিহত করে, পাপচারী দোষ প্রকাশ করে ও লজ্জা দেয়। (জামিউল উলুমি ওয়াল হিকাম)
মিসআর ইবনে কিদাব (রহ.) বলেন, আল্লাহ তার ওপর রহম করুন যে গোপনে আমার দোষত্রুটি আমাকে জানায়। জনসমক্ষে নসিহত করার মানে হলো নিন্দা বা ভর্ৎসনা করা ( বাহজাতুল মাজালিস)
আবু সুলাইমান আদ-দারানী বলেন, যে তার ভাইকে গোপনে উপদেশ দেয়, সে তার কল্যাণকামনা করে, আর যে মানুষের সামনে উপদেশ দেয়, সে তাকে লজ্জা দিতে চায়। (তারিখু মাদিনাতি দিমাশক)
নবিজি (সা.) জনসমক্ষে ওয়াজ করার সময় কাউকে নির্দিষ্ট করে উপদেশ দিতেন না। বরং বিশেষ স্বভাব বা দোষের কথা উল্লেখ করে ওই স্বভাব বা কাজের নিন্দা বা সমালোচনা করতেন। তাতে এ রকম কাজ যারা করে সবাই সংশোধন হয়ে যাওয়ার সুযোগ পেতো এবং কেউ লজ্জা পেতো না।
৩. পারস্পরিক কল্যাণকামিতা মুসলমানদের বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত। সালমান ফারসি (রা.) বলেন, দুজন মুসলমানের তুলনা হলো দুটি হাতের মতো, এক হাতে ময়লা লাগলে অপর হাত তা পরিস্কার করে দেয়। (তারিখু মাদিনাতি দিমাশক)
আবু মুসা আশআরি (রা.) বলেন নবিজি সা.) বলেছেন, মুমিনরা একটি অভিন্ন স্থাপনার মতো; এর এক অংশ অপর অংশকে ধরে রাখে। তারপর তিনি দুই হাত মিলিয়ে দেখালেন।
(সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেন, মুমিন মুমিনের জন্য আয়নার মতো। (সুনানে আবু দাউদ) এ হাদিসটি থেকে যে নসিহত করে ও যাকে নসিহত করা হয় উভয়ের আদব ও কর্তব্য বোঝা যায়। আয়না তার সামনের মানুষের দোষত্রুটি দেখিয়ে দেয় নীরবে, দোষত্রুটির জন্য তাকে লজ্জা দেয় না। আবার আয়নায় নিজের ত্রুটি দেখলে মানুষ সেটাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করার চেষ্টা করে না বরং ত্রুটি সংশোধন করার চেষ্টা করে।
সূত্র: আল-ফাওয়ায়িদুস-সুলাসিয়্যাহ মিনাল-আহাদিসিন-নববিয়্যাহ
ওএফএফ/এএসএম