হাদিস থেকে শিক্ষা

বাবা-মায়ের অধিকার সবচেয়ে বেশি

ওমর ফারুক ফেরদৌস
ওমর ফারুক ফেরদৌস ওমর ফারুক ফেরদৌস , আলেম ও লেখক
প্রকাশিত: ০৮:১৪ পিএম, ০৫ অক্টোবর ২০২৩

আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি রাসুলের (সা.) কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলো, হে আল্লাহর রাসুল! আমার কাছে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার সবচেয়ে বেশি অধিকার কার? তিনি বললেনঃ তোমার মায়ের, লোকটি বললো তারপর কে? নবিজি (সা.) বললেন, তোমার মা। সে বললো, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বললো, তারপর কে? তিনি বললেন, তারপর তোমার বাবা। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)

এ হাদিস থেকে যে শিক্ষাগুলো আমরা পাই

১. মানুষের সুন্দর সহচর্য ও উত্তম ব্যবহার পাওয়ার সবচেয়ে বেশি অধিকার বন্ধু বা সহকর্মীদের না, স্ত্রী-সন্তানদেরও না। এদের প্রত্যেকের সাথেই ইসলাম উত্তম আচরণের নির্দেশ দেয়। কিন্তু উত্তম আচরণ পাওয়ার সবচেয়ে বেশি অধিকার বাবা-মায়ের যারা তাকে কঠোর পরিশ্রম করে প্রতিপালন করেন, তার জন্য সবচেয়ে বেশি কষ্ট করেন। কোরআনে আল্লাহ নিজের অধিকারের সাথে যুক্ত করে বাবা-মায়ের অধিকারের কথা উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ বলেন,

وَ قَضٰی رَبُّکَ اَلَّا تَعۡبُدُوۡۤا اِلَّاۤ اِیَّاهُ وَ بِالۡوَالِدَیۡنِ اِحۡسَانًا
আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং বাবা-মায়ের সাথে সদাচরণ করবে। (সুরা ইসরা: ২৩)

কোরআনের আরেকটি আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,

قُلۡ تَعَالَوۡا اَتۡلُ مَا حَرَّمَ رَبُّکُمۡ عَلَیۡکُمۡ اَلَّا تُشۡرِکُوۡا بِهٖ شَیۡئًا وَّبِالۡوَالِدَیۡنِ اِحۡسَانًا
বলো, ‘এসো, তোমাদের ওপর তোমাদের রব যা হারাম করেছেন, তা তিলাওয়াত করি; তোমরা তার সাথে কোনো কিছুকে শরীক করবে না এবং মা-বাবার প্রতি ইহসান করবে। (সুরা আনআম: ১৫১)

আল্লাহ ও তার রাসুলের (সা.) নির্দেশনা অনুযায়ী বাবা-মায়ের প্রতি ইহসান করা সন্তানের অবশ্যকর্তব্য। বাবা মায়ের সাথে সদাচরণ আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত লাভের উপায়।

২. হাদিসটি থেকে বোঝা যায় বাবা-মায়ের সাথে সন্তানের থাকা উচিত আন্তরিক সুসম্পর্ক। যে কোনো বড় সিদ্ধান্তের আগে তাদের মত নেওয়া, তাদের সাথে পরামর্শ করা উচিত। তাদেরকে বেশি বেশি হাদিয়া দেওয়া উচিত। হাদিয়া ভালোবাসা বাড়ায়। তাদেরকে নাম ধরে না ডাকা, তাদের আগে না বসা, তাদের সামনে না হাঁটা ইত্যাদি সাধারণ আদবগুলো অবশ্যই রক্ষা করা উচিত তাদের সাথে আচরণের ক্ষেত্রে। বাবা-মায়ের খেদমত করা, তাদের প্রয়োজনে সাড়া দেওয়া, তাদের সাথে নরম স্বরে কথা বলা বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের ওয়াজিব কর্তব্যসমূহের অন্তর্ভুক্ত। একজন মুসলমানের উচিত বাবা-মাকে প্রতিটি বৈধ পন্থায় খুশি করার চেষ্টা করা।

৩. বাবা-মায়ের মর্যাদা ও তাদের অধিকার কত বেশি তা আরেকটি হাদিস থেকেও বোঝা যায়। হাদিসটিতে নবিজি (সা.) নফল জিহাদের ওপর বাবা মায়ের খেদমতকে প্রাধান্য দিয়েছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি নবিজির (সা.) কাছে এসে বললো, আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে সওয়াব লাভের আশায় আপনার হাতে হিজরত ও জিহাদের জন্য বায়াত হলাম। নবিজি (সা.) বললেন, তোমার বাবা-মায়ের মধ্যে কেউ কি বেঁচে আছেন? সে বললো, হ্যাঁ, তারা দুজনই বেঁচে আছেন। নবিজি (সা.) বললেন, তুমি তোমার বাবা-মায়ের কাছে ফিরে যাও এবং তাদের সাথে উত্তম আচরণ করো।

ওএফএফ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।