কল্যাণকর হলে শপথ ভেঙে ফেলা মুস্তাহাব

ওমর ফারুক ফেরদৌস
ওমর ফারুক ফেরদৌস ওমর ফারুক ফেরদৌস , আলেম ও লেখক
প্রকাশিত: ০৮:১১ পিএম, ০৪ অক্টোবর ২০২৩

আবদুর রহমান ইবনে সামুরা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন,

إِذَا حَلَفْتَ عَلَى يَمِينٍ فَرَأَيْتَ غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْهَا، فَكَفِّرْ عَنْ يَمِينِكَ وَأْتِ الَّذِي هُوَ خَيْرٌ
কোনো কিছুর ব্যাপারে শপথ করার পরে সেটা ছাড়া অন্য কিছুতে যদি কল্যাণ দেখতে পাও তাহলে কসমের কাফফারা আদায় করে যা কল্যাণকর হয় তাই করো। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)

এ হাদিস থেকে যে শিক্ষাগুলো আমরা পাই

১. আল্লাহর নামে কৃত শপথকে কোনো কল্যাণকর কাজের জন্য প্রতিবন্ধক বানানো উচিত নয়। কোনো কাজ করা বা না করার শপথ করার পর যদি মনে হয়, শপথের বিপরীত কাজটিই কল্যাণকর, তাহলে তার কর্তব্য শপথ ভেঙে কল্যাণকর কাজটি করা এবং শপথের জন্য কাফফারা দিয়ে দেওয়া। যেমন কেউ শপথ করলো, স্ত্রীকে তালাক দেবে, গাড়ি বিক্রি করে দেবে, বাড়ি পরিবর্তন করবে, তার ভাইয়ের বাড়িতে প্রবেশ করবে না অথবা কারো সাথে কথা বলবে না, তারপর তার কাছে স্পষ্ট হলো যে তার শপথের বিপরীত কাজই তার জন্য কল্যাণকর, তাহলে ওই শপথ ভেঙে কল্যাণকর কাজটি করবে। নবিজি (সা.) নিজেও এ রকমই করতেন। আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত নবিজি (সা.) বলেছেন,
إِنِّي وَاللَّهِ إِنْ شَاءَ اللَّهُ لاَ أَحْلِفُ عَلَى يَمِينٍ فَأَرَى غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْهَا إِلاَّ كَفَّرْتُ عَنْ يَمِينِي وأَتَيْتُ الَّذِي هُوَ خَيْرٌ
আল্লাহর কসম! ইনশাআল্লাহ কোন বিষয়ে কসম করার পর তার বিপরীত কাজ উত্তম মনে হলে আমি কাফফারা দেই এবং উত্তমটিই করি। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)

২. এ হাদিসের মাধ্যমে নবিজি (সা.) উম্মতকে আহ্বান জানিয়েছেন, শপথ করার পর বিপরীত কাজে কল্যাণ দেখতে পেলে তারা যেন শপথের ওপর অটল না থাকে। আবু হোারয়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন,

والله لأن يلج أحدكم بيمينه في أهله آثم له عند الله من أن يعطي كفارته التي افترض الله عليه

আল্লাহর কসম! তোমাদের মধ্যে কেউ আপন পরিজনের ব্যাপারে নেতিবাচক শপথে অটল থাকলে আল্লাহর কাছে ওই ব্যক্তির চেয়ে বেশি গুনাহগার হবে, যে কাফফারা আদায় করে তা-ই করে যা আল্লাহ তায়ালা অপরিহার্য করে দিয়েছেন। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম) অর্থাৎ বিপরীত কাজ কল্যাণকার হলেও শপথে অটল থাকার চেয়ে শপথ ভেঙে কাফফারা দেওয়া উত্তম। শপথে অটল থাকা অনেক ক্ষেত্রে গুনাহের কারণ হতে পারে।
৩. এই হাদিসগুলো আল্লাহর কথার অনুরণন। আল্লাহ বলেছেন,
وَلَا تَجۡعَلُوا اللّٰهَ عُرۡضَۃً لِّاَیۡمَانِکُمۡ اَنۡ تَبَرُّوۡا وَ تَتَّقُوۡا وَ تُصۡلِحُوۡا بَیۡنَ النَّاسِ وَ اللّٰهُ سَمِیۡعٌ عَلِیۡمٌ
তোমরা সৎকাজ, তাকওয়া অবলম্বন এবং মানুষের মধ্যে শান্তি স্থাপন হতে বিরত থাকবে- আল্লাহর নামে এমন শপথ করে তাকে অজুহাত করে নিও না। আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞাতা। (সুরা বাকারা: ২২৪)

বাগাবী (রহ.) বলেন, এ আয়াতের অর্থ হলো, আল্লাহর শপথকে নেক কাজের জন্য প্রতিবন্ধক বানিও না যে আত্মীয়তার দাবি পূরণ করা বা অন্য কোনো নেক কাজ করতে বলা হলে বলবে, আমি সেটা করবো না বলে আল্লাহর নামে শপথ করেছি! আল্লাহর নামে শপথের অজুহাতে নেক কাজ থেকে বিরত থেকো না। (তাফসিরে বাগাবী)

ওএফএফ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।