রাগের মাথায় স্ত্রীকে ‘তুমি আমার জন্য হারাম’ বললে কি তালাক হবে?
স্বামী যদি তালাক দেওয়ার উদ্দেশ্যে স্ত্রীকে বলে, ‘তুমি আমার জন্য হারাম’, তাহলে তা তালাক গণ্য হবে। তবে তালাক দেওয়ার উদ্দেশ্য না থাকলে তালাক হবে না, যেহেতু এটি সরাসরি তালাক বোঝানোর মতো কথা নয়।
স্বামী যদি এ কথা বলার সময় জিহারের নিয়ত করে তাহলে তা জিহার গণ্য হবে। জিহার ইসলামি আইনশাস্ত্রের একটি পরিভাষা। কেউ যদি নিজের স্ত্রীকে নিজের ওপর হারাম করার জন্য নিজের মা অথবা কোনো মাহরাম আত্মীয়ের মতো বলে, তাহলে কাফফারা দেওয়ার আগ পর্যন্ত স্ত্রীর সাথে যৌনসম্পর্ক হারাম হয়ে যায়। জিহারের কাফফারা হলো, একটি দাস মুক্ত করা, লাগাতার ৬০ দিন রোজা রাখা অথবা ৬০ জন দরিদ্র ব্যক্তিকে খাওয়ানো। আল্লাহ বলেন,
وَالَّذِیۡنَ یُظٰهِرُوۡنَ مِنۡ نِّسَآئِهِمۡ ثُمَّ یَعُوۡدُوۡنَ لِمَا قَالُوۡا فَتَحۡرِیۡرُ رَقَبَۃٍ مِّنۡ قَبۡلِ اَنۡ یَّتَمَآسَّا ذٰلِکُمۡ تُوۡعَظُوۡنَ بِهٖ وَ اللّٰهُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرٌ فَمَنۡ لَّمۡ یَجِدۡ فَصِیَامُ شَهۡرَیۡنِ مُتَتَابِعَیۡنِ مِنۡ قَبۡلِ اَنۡ یَّتَمَآسَّا فَمَنۡ لَّمۡ یَسۡتَطِعۡ فَاِطۡعَامُ سِتِّیۡنَ مِسۡکِیۡنًا
আর যারা তাদের স্ত্রীদের সাথে ‘জিহার’ করার পর যা বলেছে তা থেকে ফিরে আসে, তবে একে অপরকে স্পর্শ করার আগে একটি দাস মুক্ত করবে। এর মাধ্যমে তোমাদেরকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে। আর তোমরা যা কর, সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত। কিন্তু যে তা পাবে না, সে লাগাতার দুমাস রোজা রাখবে একে অপরকে স্পর্শ করার আগে। আর যার রোজা রাখার সামর্থ্যও নেই, সে ষাটজন দরিদ্র ব্যক্তিকে খাবার খাওয়াবে। (সুরা মুজাদালা: ৩, ৪)
আর স্বামী যদি রাগের মাথায় কোনো নিয়ত ছাড়া স্ত্রীকে হারাম বলে, তাহলে এটি শপথ গণ্য হবে এবং স্ত্রীর সাথে মিলিত হওয়ার পর শপথের কাফফারা দিতে হবে। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত রয়েছে,
أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ فِي الْحَرَامِ يَمِينٌ يُكَفِّرُهَا.
তিনি স্ত্রীকে নিজের ওপর হারাম করে নেওয়াকে শপথ গণ্য করতেন যার কাফফারা দিতে হয়। (সহিহ মুসলিম: ১৪৭৩)
কসমের কাফফারা হলো দশজন দরিদ্র ব্যক্তিকে দুই বেলা পেটপুরে খাবার খাওয়ানো অথবা দশজন দরিদ্র ব্যক্তিকে এক জোড়া করে কাপড় দেওয়া। এভাবে কাফফারা আদায় করার সামর্থ্য না থাকলে লাগাতার তিন দিন রোজা রাখতে হবে। আল্লাহ বলেন,
لَا یُؤَاخِذُکُمُ اللّٰهُ بِاللَّغۡوِ فِیۡۤ اَیۡمَانِکُمۡ وَ لٰکِنۡ یُّؤَاخِذُکُمۡ بِمَا عَقَّدۡتُّمُ الۡاَیۡمَانَ فَکَفَّارَتُهٗۤ اِطۡعَامُ عَشَرَۃِ مَسٰکِیۡنَ مِنۡ اَوۡسَطِ مَا تُطۡعِمُوۡنَ اَهۡلِیۡکُمۡ اَوۡ کِسۡوَتُهُمۡ اَوۡ تَحۡرِیۡرُ رَقَبَۃٍ ؕ فَمَنۡ لَّمۡ یَجِدۡ فَصِیَامُ ثَلٰثَۃِ اَیَّامٍ
আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না অর্থহীন কসমের ব্যাপারে, কিন্তু যে কসম তোমরা দৃঢ়ভাবে কর সে কসমের জন্য তোমাদেরকে পাকড়াও করেন। সুতরাং এর কাফফারা হল দশ জন মিসকীনকে খাবার দান করা, মধ্যম ধরনের খাবার, যা তোমরা নিজেদের পরিবারকে খাইয়ে থাক, অথবা তাদের বস্ত্র দান করা, কিংবা একজন দাস-দাসী মুক্ত করা। যে সামর্থ্য রাখে না, তার জন্য তিন দিন রোজা রাখা। (সুরা মায়েদা: ৮৯)
ওএফএফ/জেআইএম