আল্লাহ যখন বান্দার হয়ে যায়

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:৩৫ পিএম, ১০ আগস্ট ২০২৩

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বান্দা আমাকে যেমন মনে করে আমি তার জন্য তেমনই হয়ে থাকি। আর ওই বান্দা যখন আমাকে স্মরণ করে; তখন আমি তার হয়ে যাই।’ এ জন্য আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘হে (আমার) বান্দাগণ! তোমরা আমাকে আমার ইবাদাতের মাধ্যমে স্মরণ করো। অর্থাৎ আমার ইবাদাত করতে থাকো; (তাহলে) আমি মাগফেরাত দানের মাধ্যমে তোমাদের স্মরণ করবো। অর্থাৎ তোমাদের গুনাহ ক্ষমা করে দেবো।

ক্ষমা পাওয়ার জন্য শুধু আল্লাহকে স্মরণ করে বা তার ইবাদত-বন্দেগিতেই সীমাবদ্ধ থাকা যাবে না বরং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে এবং তার অবাধ্য হওয়া যাবে না। কোরআনুল কারিমের ছোট্ট একটি আয়াতে আল্লাহ তাআলা এ কথাগুলো সুষ্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন-

فَاذۡکُرُوۡنِیۡۤ اَذۡکُرۡکُمۡ وَ اشۡکُرُوۡا لِیۡ وَ لَا تَکۡفُرُوۡنِ

অতএব তোমরা আমাকেই স্মরণ কর; আমিও তোমাদেরকেই স্মরণ করবো এবং তোমরা আমারই নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর এবং অকৃতজ্ঞ হইও না।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫২)

আল্লাহকে স্মরণ করার মানে হলো জিকির আজকার করা, ইবাদত-বন্দেগি করা, তার হুকুম আহকাম বাস্তবে মেনে চলা। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে কুদসিতে বর্ণনা করেছেন যে, ‘কিভাবে আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করতে হবে। আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় বান্দার অনুগ্রহ পাওয়ার মাধ্যম। বান্দাকে অনুগ্রহ প্রদানে আল্লাহ তাআলা কোন পদ্ধতি অনুসরণ করেন, তাও ওঠে এসেছে এ হাদিসে বর্ণনায়-

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলোচ্য আয়াত সম্পর্কে বলেন, ‌আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে (আমার) বান্দাগণ! তোমরা আমাকে আমার ইবাদাতের মাধ্যমে স্মরণ কর। অর্থাৎ আমার ইবাদাত করতে থাক; (তাহলে) আমি মাগফেরাত দানের মাধ্যমে তোমাদেরকে স্মরণ করব। অর্থাৎ তোমাদের গুনাহ মাফ করে দেব।‘

যারা আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করে, ইবাদত-বন্দেগি, জিকির-আজকার করে; আল্লাহ তাআলা তাদের হয়ে যান। হাদিসে কুদসির অন্য বর্ণনায় এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বান্দা আমাকে যেমন মনে করে আমি তার জন্য তেমনই হয়ে থাকি। আর ওই বান্দা যখন আমাকে স্মরণ করে; তখন আমি তার হয়ে যাই।’

আল্লাহর স্মরণ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের মাধ্যমে তার ক্ষমা পাওয়ার পাশাপাশি শয়তানের ক্ষতি থেকেও মানুষ মুক্তি পায়। আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগি করার বা তার হুকুম-আহকাম পালন করার সবচেয়ে বড় উপকার হলো শয়তান মানুষের কোনো ক্ষতি করতে পারে না। শয়তান ওই বান্দা থেকে দূরে সরে যায়। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবদুল্লাহ শাকিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রত্যেক মানুষের অন্তরে দুটি কক্ষ আছে। একটিতে ফেরেশতা থাকে এবং অপরটিতে শয়তান অবস্থান করে। মানুষ যখন আল্লাহর জিকির-আজকার (ইবাদত-বন্দেগি পালন তথা হুকুম-আহকাম বাস্তবায়নে) মশগুল হয়; তখন শয়তান দূরে সরে যায়। আর যখন জিকির থেকে গাফেল হয়ে যায়, তখন শয়তান (মানুষের) অন্তরে তার ঠোঁট স্থাপন করে এবং কু-মন্ত্রণা দিতে থাকে।’

সুতরাং মানুষের উচিত, আল্লাহকে স্মরণ করা। আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা। তাকে অস্বীকার না করা। জিকির-আজকার থেকে বিমুখ না হওয়া। আর তাতে মিলবে ক্ষমা ও শয়তানের ক্ষতি থেকে মুক্তি।

দুনিয়ার জীবনে মানুষ সব গাফলত তথা অজ্ঞতা থেকে মুক্ত থাকতে আমলি জিন্দেগিতে বিজয়ী হতে নবিজির ছোট্ট একটি হাদিসের আমল খুবই জরুরি। তাহলো-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মোফরাদ’ ব্যক্তিগণ বিজয়ী হয়ে গেছে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! মোফরাদ ব্যক্তি কারা? তিনি বললেন, ‘বেশি জিকিরকারী (আল্লাহর স্মরণকারী) নারী ও পুরুষ।‘

হাদিসে ঘোষিত ফজিলতগুলো অর্জনে আল্লাহ তাআলা মুমিন মুসলমানকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর স্মরণ, হুকুম-আহকাম ও ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।