সুদের ভয়াবহতা

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:১৫ পিএম, ১৬ জুলাই ২০২৩

ইসলামে সুদ খাওয়া হারাম। সুদ যেমন মারাত্মক অপরাধ তেমনি এর শাস্তিও মারাত্মক। মূলধনের অতিরিক্ত কোনো কিছু গ্রহণ করাই সুদ। সুদের গুনাহ এতই মারাত্মক যে, এর সর্বনিম্ন অপরাধটি হচ্ছে নিজ মায়ের সঙ্গে জেনা করার সমান। (নাউজুবিল্লাহ)

মানব সমাজের জন্য সুদ এক ব্যাধি। সুদের আরবি পরিভাষা ‘রিবা’। এ সুদের অপরাধ ও শাস্তি কত মারাত্মক হতে পারে তা একটি হাদিস থেকেই অনুমান করা যায়। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
‘সুদের ৭০ প্রকার গুনাহ রয়েছে। এর সর্বনিম্নটি হলো নিজ মায়ের সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার সমপর্যায়ের গুনাহ।’ (মুসতাদরেকে হাকেম, আন-নিহায়া ফি গারিবিল হাদিস)

সুদ খাওয়ার শাস্তি
ইসলামে সুদ খাওয়া হারাম। কোরআনে সুদ খাওয়াকে শুধু হারামই ঘোষণা করা হয়নি বরং সুদের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির অবস্থান কেমন হবে তা-ও উদাহরণসহ কোরআনুল কারিমের একাধিক আয়াতে ওঠে এসেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
১. الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لاَ يَقُومُونَ إِلاَّ كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُواْ إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا وَأَحَلَّ اللّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا فَمَن جَاءهُ مَوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّهِ فَانتَهَىَ فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللّهِ وَمَنْ عَادَ فَأُوْلَـئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
‘যারা সুদ খায়, তারা কেয়ামতের দিন দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ওই ব্যক্তি; যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছে, ক্রয়-বিক্রয়ও তো সুদ নেয়ারই মত! অথচ আল্লাহ তাআলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। এরপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, আগে যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপার আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই জাহান্নামে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৭৫)

২. يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَأْكُلُواْ الرِّبَا أَضْعَافًا مُّضَاعَفَةً وَاتَّقُواْ اللّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে পারো।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৩০)

৩. يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَذَرُواْ مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে সমস্ত বকেয়া আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৭৮)

৪. يَمْحَقُ اللّهُ الْرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ وَاللّهُ لاَ يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ أَثِيمٍ
আল্লাহ তাআলা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান খয়রাতকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ পছন্দ করেন না কোন অবিশ্বাসী পাপীকে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৭৬)

মনে রাখা জরুরি
শুধু সুদ খাওয়াই নয় বরং সুদ দেওয়া এবং সুদের লেনদেনে সাহায্য-সহযোগিতা করা, সবই হারাম এবং অভিশপ্ত কাজ। এ সম্পর্কে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে পাকে বিশেষভাবে সতর্ক করেছেন-
হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লানত করেছেন- সুদখোর, সুদের হিসাব রক্ষক এবং তার সাক্ষীদ্বয়ের প্রতি। তিনি আরও বলেছেন, (সুদের সঙ্গে জড়িত) তারা সবাই সমান অপরাধী।’ (বাইহাকি, মিশকাত)

যেহেতু সুদ ইসলামে হারাম এবং কবিরা গুনাহসমূহের মধ্যে অন্যতম। তাই সুদ থেকে বিরত থাকা মুমিন মুসলমানের জন্য একান্ত আবশ্যক। সুদ থেকে বিরত থাকলে একদিকে যেমন হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা যাবে অন্যদিকে সুদের অপরাধ থেকেও মুক্ত থাকা যাবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুদের মতো মারাত্মক হারাম কাজ ও কবিরা গুনাহ ও অপরাধ থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। সুদমুক্ত জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমআইএইচএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।