জুমার প্রথম খুতবা: কোরবানির শিক্ষা অটুট থাকুক হৃদয়ে

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:১০ পিএম, ০৭ জুলাই ২০২৩

আজ শুক্রবার। বরকতময় হজের মাস জিলহজের তৃতীয় জুমা আজ। ০৭ জুলাই ২০২৩ ইংরেজি, ২৩ আষাঢ় ১৪৩০ বাংলা, ১৮ জিলহজ ১৪৪৪ হিজরি। আজকের জুমার আলোচ্য বিষয়- কোরবানির শিক্ষা অটুট থাকুক হৃদয়ে।

প্রিয় মুসল্লিগণ!
কোরবানি মহান আল্লাহর নির্দেশ। মুসলিম উম্মাহ যথাযথ ভাবগাম্বীর্য ও মর্যাদার সঙ্গে পবিত্র কোরবানি উদযাপন করেছেন। আল্লাহ তাআলা যাদের কবুল করেছেন, তারা কোরবানি সম্পন্ন করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ! এটা মহান আল্লাহ তাআলার একান্ত অনুগ্রহ। মুসলিম উম্মাহ মহান আল্লাহর নির্দেশ পালন করেছেন। এ কোরবানির শিক্ষা অটুট থাকুক মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে।

আমরা জানি, কোরবানি হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের একটা সুন্নত বা রীতি। তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মহান রবের নির্দেশ নিজ সন্তান হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে কোরবানি করার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। তিনি আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পেরেছিলেন। কোরবানির এ রীতিই এখন দুনিয়াব্যাপী ছড়িয়ে আছে। এখন প্রয়োজন এর তাৎপর্য ও শিক্ষাকে হৃদয়ে ধারণ করা।

কোরবানি আল্লাহর নির্দেশ
আল্লাহর প্রিয় ও কাছাকাছি হওয়ার মাধ্যম কোরবানি। ইসলামের বিধান, ধর্মীয় ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার। যা মহান রবের নির্দেশ। কোরআনের একাধিক আয়াতে বিভিন্নভাবে এ দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এভাবে-
১. وَ اَتِمُّوا الۡحَجَّ وَ الۡعُمۡرَۃَ لِلّٰهِ ؕ فَاِنۡ اُحۡصِرۡتُمۡ فَمَا اسۡتَیۡسَرَ مِنَ الۡهَدۡیِ ۚ وَ لَا تَحۡلِقُوۡا رُءُوۡسَکُمۡ حَتّٰی یَبۡلُغَ الۡهَدۡیُ مَحِلَّهٗ ؕ فَمَنۡ کَانَ مِنۡکُمۡ مَّرِیۡضًا اَوۡ بِهٖۤ اَذًی مِّنۡ رَّاۡسِهٖ فَفِدۡیَۃٌ مِّنۡ صِیَامٍ اَوۡ صَدَقَۃٍ اَوۡ نُسُکٍ ۚ فَاِذَاۤ اَمِنۡتُمۡ ٝ فَمَنۡ تَمَتَّعَ بِالۡعُمۡرَۃِ اِلَی الۡحَجِّ فَمَا اسۡتَیۡسَرَ مِنَ الۡهَدۡیِ ۚ فَمَنۡ لَّمۡ یَجِدۡ فَصِیَامُ ثَلٰثَۃِ اَیَّامٍ فِی الۡحَجِّ وَ سَبۡعَۃٍ اِذَا رَجَعۡتُمۡ ؕ تِلۡکَ عَشَرَۃٌ کَامِلَۃٌ ؕ ذٰلِکَ لِمَنۡ لَّمۡ یَکُنۡ اَهۡلُهٗ حَاضِرِی الۡمَسۡجِدِ الۡحَرَامِ ؕ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰهَ شَدِیۡدُ الۡعِقَابِ
‘আর হজ ও উমরা আল্লাহর জন্য পূর্ণ কর। এরপর যদি তোমরা আটকে পড় তবে যে পশু সহজ হবে (তা জবাই কর)। আর তোমরা তোমাদের মাথা মুন্ডন করো না, যতক্ষণ না পশু তার যথাস্থানে পৌঁছে। আর তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ কিংবা তার মাথায় যদি কোনো কষ্ট থাকে তবে রোজা কিংবা সদাকা অথবা পশু জবাই এর মাধ্যমে ফিদয়া দেবে। আর যখন তোমরা নিরাপদ হবে তখন যে ব্যক্তি ওমরার পর হজ সম্পাদনপূর্বক তামাত্তু করবে, তবে যে পশু সহজ হবে, তা জবাই করবে। কিন্তু যে তা পাবে না তাকে হজে তিন দিন এবং যখন তোমরা ফিরে যাবে, তখন সাত দিন রোজা পালন করবে। এই হল পূর্ণ দশ। এই বিধান তার জন্য, যার পরিবার মাসজিদুল হারামের অধিবাসী নয়। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখো! নিশ্চয়ই আল্লাহ শাস্তিদানে কঠোর।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৯৬)

২. وَ اتۡلُ عَلَیۡهِمۡ نَبَاَ ابۡنَیۡ اٰدَمَ بِالۡحَقِّ ۘ اِذۡ قَرَّبَا قُرۡبَانًا فَتُقُبِّلَ مِنۡ اَحَدِهِمَا وَ لَمۡ یُتَقَبَّلۡ مِنَ الۡاٰخَرِ ؕ قَالَ لَاَقۡتُلَنَّکَ ؕ قَالَ اِنَّمَا یَتَقَبَّلُ اللّٰهُ مِنَ الۡمُتَّقِیۡنَ
’আর তুমি তাদের কাছে আদমের দুই ছেলের (হাবিল-কাবিল) সংবাদ যথাযথভাবে বর্ণনা কর, যখন তারা উভয়ে কোরবানি পেশ করলো। এরপর তাদের একজন থেকে (কোরবানি) গ্রহণ করা হলো আর অপরজন থেকে গ্রহণ করা হলো না। সে বললো, ‘অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করবো’। অন্যজন বলল, ‘আল্লাহ কেবল মুত্তাকিদের থেকে (কোরবানি) গ্রহণ করেন’।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ২৭)

৩. قُلۡ اِنَّ صَلَاتِیۡ وَ نُسُکِیۡ وَ مَحۡیَایَ وَ مَمَاتِیۡ لِلّٰهِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ - لَا شَرِیۡکَ لَهٗ ۚ وَ بِذٰلِکَ اُمِرۡتُ وَ اَنَا اَوَّلُ الۡمُسۡلِمِیۡنَ
‘বলুন, নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু আল্লাহর জন্য, যিনি সব সৃষ্টির রব’। ‘তাঁর কোনো শরিক নেই এবং আমাকে এরই নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। আর আমি মুসলমানদের মধ্যে প্রথম’। (সুরা আনআম : আয়াত ১৬২-১৬৩)

৪. وَ لِکُلِّ اُمَّۃٍ جَعَلۡنَا مَنۡسَکًا لِّیَذۡکُرُوا اسۡمَ اللّٰهِ عَلٰی مَا رَزَقَهُمۡ مِّنۡۢ بَهِیۡمَۃِ الۡاَنۡعَامِ ؕ فَاِلٰـهُکُمۡ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ فَلَهٗۤ اَسۡلِمُوۡا ؕ وَ بَشِّرِ الۡمُخۡبِتِیۡنَ- الَّذِیۡنَ اِذَا ذُکِرَ اللّٰهُ وَجِلَتۡ قُلُوۡبُهُمۡ وَ الصّٰبِرِیۡنَ عَلٰی مَاۤ اَصَابَهُمۡ وَ الۡمُقِیۡمِی الصَّلٰوۃِ ۙ وَ مِمَّا رَزَقۡنٰهُمۡ یُنۡفِقُوۡنَ
‘প্রত্যেক জাতির জন্য আমি কোরবানির নিয়ম করে দিয়েছি; যাতে তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে, যেসব জন্তু তিনি রিজিক হিসেবে দিয়েছেন তার উপর। তোমাদের ইলাহ তো এক ইলাহ; অতএব তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণ কর; আর অনুগতদেরকে সুসংবাদ দাও, যাদের কাছে আল্লাহর কথা উল্লেখ করা হলে তাদের অন্তর কেঁপে ওঠে, যারা তাদের বিপদ-আপদে ধৈর্যধারণ করে, যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে।’ (সুরা হজ : আয়াত ৩৪-৩৫)

৫. وَ الۡبُدۡنَ جَعَلۡنٰهَا لَکُمۡ مِّنۡ شَعَآئِرِ اللّٰهِ لَکُمۡ فِیۡهَا خَیۡرٌ ٭ۖ فَاذۡکُرُوا اسۡمَ اللّٰهِ عَلَیۡهَا صَوَآفَّ ۚ فَاِذَا وَجَبَتۡ جُنُوۡبُهَا فَکُلُوۡا مِنۡهَا وَ اَطۡعِمُوا الۡقَانِعَ وَ الۡمُعۡتَرَّ ؕ کَذٰلِکَ سَخَّرۡنٰهَا لَکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ
‘আর কোরবানির উটকে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন বানিয়েছি; তোমাদের জন্য তাতে রয়েছে কল্যাণ। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান অবস্থায় সেগুলির উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর যখন সেগুলো কাত হয়ে পড়ে যায় তখন তা থেকে খাও। যে অভাবী, মানুষের কাছে হাত পাতে না এবং যে অভাবী চেয়ে বেড়ায়- তাদেরকে খেতে দাও। এভাবেই আমি ওগুলোকে তোমাদের অনুগত করে দিয়েছি; যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।’ (সুরা হজ : আয়াত ৩৬)

৬. فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعۡیَ قَالَ یٰبُنَیَّ اِنِّیۡۤ اَرٰی فِی الۡمَنَامِ اَنِّیۡۤ اَذۡبَحُکَ فَانۡظُرۡ مَاذَا تَرٰی ؕ قَالَ یٰۤاَبَتِ افۡعَلۡ مَا تُؤۡمَرُ ۫ سَتَجِدُنِیۡۤ اِنۡ شَآءَ اللّٰهُ مِنَ الصّٰبِرِیۡنَ
‘এরপর যখন সে তার (ইবরাহিম) সঙ্গে চলাফেরা করার বয়সে পৌঁছলো, তখন সে বললো, ‘হে প্রিয় ছেলে!, আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে জবাই (কোরবানি) করছি, অতএব দেখ (এতে) তোমার কী অভিমত’; সে (ইসমাঈল) বললো, ‘হে আমার বাবা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, আপনি তাই করুন। ইনশাআল্লাহ, আপনি আমাকে অবশ্যই ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন।’ (সুরা আস-সাফফাত : আয়াত ১০২)

৭. اِنَّ هٰذَا لَهُوَ الۡبَلٰٓـؤُا الۡمُبِیۡنُ - وَ فَدَیۡنٰهُ بِذِبۡحٍ عَظِیۡمٍ - وَ تَرَکۡنَا عَلَیۡهِ فِی الۡاٰخِرِیۡنَ - سَلٰمٌ عَلٰۤی اِبۡرٰهِیۡمَ - کَذٰلِکَ نَجۡزِی الۡمُحۡسِنِیۡنَ
‘নিশ্চয় এটা সুস্পষ্ট পরীক্ষা’। আর আমি এক মহান জবেহের (কোরবানির) বিনিময়ে তাকে মুক্ত করলাম। আর তার জন্য আমি পরবর্তীদের মধ্যে সুখ্যাতি রেখে দিয়েছি। ইবরাহীমের প্রতি সালাম।এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করে থাকি।’ (সুরা আস-সাফফাত : আয়াত ১০৬-১১০)

৮. لَنۡ یَّنَالَ اللّٰهَ لُحُوۡمُهَا وَ لَا دِمَآؤُهَا وَ لٰکِنۡ یَّنَالُهُ التَّقۡوٰی مِنۡکُمۡ ؕ کَذٰلِکَ سَخَّرَهَا لَکُمۡ لِتُکَبِّرُوا اللّٰهَ عَلٰی مَا هَدٰىکُمۡ ؕ وَ بَشِّرِ الۡمُحۡسِنِیۡنَ - اِنَّ اللّٰهَ یُدٰفِعُ عَنِ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ کُلَّ خَوَّانٍ کَفُوۡرٍ
‘কিন্তু মনে রেখো! কোরবানির গোশত বা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না, আল্লাহর কাছে পৌঁছায় শুধু তোমাদের নিষ্ঠাপূর্ণ আল্লাহ সচেতনতা। এই লক্ষ্যেই কোরবানির পশুগুলোকে তোমাদের অধীন করে দেওয়া হয়েছে। অতএব আল্লাহ তোমাদের সৎপথ প্রদর্শনের মাধ্যমে যে কল্যাণ দিয়েছেন, সেজন্যে তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করো। হে নবি! আপনি সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ দিন যে, আল্লাহ বিশ্বাসীদের রক্ষা করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো বিশ্বাসঘাতক, অকৃতজ্ঞকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা হজ : আয়াত ৩৭-৩৮)
৯. فَصَلِّ لِرَبِّکَ وَ انۡحَرۡ
‘অতএব আপনার রবের উদ্দেশ্যেই নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন।’ (সুরা কাউছার : আয়াত ২)

কোরআনের এসব আয়াতের ঘোষণা ও নির্দেশে সর্বোত্তম ফজিলত পেতে মুসলিম উম্মাহ কোরবানি সম্পন্ন করেছেন। কেননা কোরবানির অর্থ হচ্ছে, রবের কাছে যাওয়া, তার নৈকট্য অর্জন করা ও তার জন্য জীবন উৎসর্গ করা। কোরবানির শিক্ষাই হলো আত্মত্যাগের শিক্ষা।

পশু কোরবানি ছিল শুধু একটি প্রতীক মাত্র। মহান রবের জন্য সবকিছু বিসর্জন দেওয়ার নামই কোরবানি। মুসলিম উম্মাহ পুশু কোরবানির মাধ্যমে নিজেদের মনের পশুত্বকে কোরবানি দিয়েছে। মনের মধ্যে যে পশুত্ব থাকে, তা থেকে নিজেদের মুক্ত করাই হলো কোরবানির মূল শিক্ষা। এর মাধ্যমেই কোরবানি দাতার মনের সব কালিমা ও চরিত্রিক বদ স্বভাব চিরতরে দূর হয়। তৈরি হয় পুতপবিত্র সত্ত্বা। কেননা মহান আল্লাহ কোরআনুল কারিমে এ ঘোষণা এভাবে দিয়েছেন-
لَنۡ یَّنَالَ اللّٰهَ لُحُوۡمُهَا وَ لَا دِمَآؤُهَا وَ لٰکِنۡ یَّنَالُهُ التَّقۡوٰی مِنۡکُمۡ ؕ
‘আল্লাহর কাছে ওদের (কোরবানির পশুর) গোশত ও রক্ত পৌঁছায় না; বরং পৌঁছায় তাঁর কাছে তোমাদের তাকওয়া।’ (সুরা হজ: আয়াত ৩৭)

এ আয়াতে মহান আল্লাহ বান্দাকে কোরবানি দিয়ে তাকওয়া অর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। কোরবানির মাধ্যমেই মুসলিম উম্মাহ তাকওয়া অর্জন করেছেন। রবের সন্তুষ্টি অর্জন করেছেন। যেভাবে নিজের কোরবানি কবুল হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেলেন হাবিল। কোরআনে তা এভাবে ওঠে এসেছে-
وَ اتۡلُ عَلَیۡهِمۡ نَبَاَ ابۡنَیۡ اٰدَمَ بِالۡحَقِّ ۘ اِذۡ قَرَّبَا قُرۡبَانًا فَتُقُبِّلَ مِنۡ اَحَدِهِمَا وَ لَمۡ یُتَقَبَّلۡ مِنَ الۡاٰخَرِ ؕ قَالَ لَاَقۡتُلَنَّکَ ؕ قَالَ اِنَّمَا یَتَقَبَّلُ اللّٰهُ مِنَ الۡمُتَّقِیۡنَ
‘আপনি তাদের আদমের দুই ছেলের বৃত্তান্ত শোনান। যখন তারা উভয়ে কোরবানি করেছিল, তখন একজনের (হাবিলের) কোরবানি কবুল হলো, অন্যজনেরটা কবুল হলো না। (যার কোরবানি কবুল হলো না) সে বলল, ‘অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করব’। (আর হাবিল বলল) অবশ্যই আল্লাহ মুত্তাকিদের কোরবানিই কবুল করেন।’ (সুরা মায়েদা: আয়াত ২৭)

আল্লাহর আনুগত্য ও আত্মসমর্পনের চূড়ান্ত প্রকাশ হচ্ছে কোরবানি। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর কাছে বান্দার আতসমর্পনই কোরবানির অনুপম শিক্ষা। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুকরণীয় আদর্শও এটি।

কোরবানি আমাদের চূড়ান্ত ধৈর্যের শিক্ষা দেয়। তাই সব সময় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করতে হবে। যে ধৈর্যের কথা শিশুকালে হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালামের মুখ থেকে বেরিয়েছিল। তিনি নিজেকে কোরবানি হতে হবে জেনে বলেছিলেন-
فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعۡیَ قَالَ یٰبُنَیَّ اِنِّیۡۤ اَرٰی فِی الۡمَنَامِ اَنِّیۡۤ اَذۡبَحُکَ فَانۡظُرۡ مَاذَا تَرٰی ؕ قَالَ یٰۤاَبَتِ افۡعَلۡ مَا تُؤۡمَرُ ۫ سَتَجِدُنِیۡۤ اِنۡ شَآءَ اللّٰهُ مِنَ الصّٰبِرِیۡنَ
‘এরপর যখন সে (ইসমাইল) তার (ইবরাহিম) সঙ্গে চলাফেরা করার বয়সে পৌঁছলো, তখন সে বললো, ‘হে প্রিয় ছেলে!, আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে জবাই (কোরবানি) করছি, অতএব দেখ (এতে) তোমার কী অভিমত’; সে (ইসমাঈল) বললো, ‘হে আমার বাবা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, আপনি তাই করুন। ইনশাআল্লাহ, আপনি আমাকে অবশ্যই ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন।’ (সুরা আস-সাফফাত : আয়াত ১০২)

এ আয়াত থেকে যেমন জীবন ত্যাগের শিক্ষা পাওয়া যায় তেমনি ধৈর্যেরও শিক্ষা পাওয়া যায়। যা হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম দেখিয়েছেন। তার সুমহান ত্যাগ ও চরম ধৈর্যের পরীক্ষায় নিজেদের উত্তীর্ণ করতে পারলেই জীবন হবে সফল।

মনে রাখতে হবে
সবর ও ত্যাগ অনেক মহৎগুণ। যুগে যুগে নবি-রাসুলগণ নিজেদের জীবনে এ সবর ও ত্যাগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন। সব নবি-রাসুলকেই মহান আল্লাহ ত্যাগ ও সবরের পরীক্ষার সম্মুখীন করেছেন। আর এসবই ছিল নিজ নিজ উম্মতকে সবর ও ত্যাগের শিক্ষা দেওয়া। মুসলিম উম্মাহর জন্য এ কোরবানি উদযাপনই সবর ও ত্যাগের শিক্ষা। এ জন্য মহান আল্লাহ কোরআনুল কারিমের অনেক আয়াতে সবর ও ত্যাগের শিক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এভাবে-
وَ الۡعَصۡرِ اِنَّ الۡاِنۡسَانَ لَفِیۡ خُسۡرٍ اِلَّا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ وَ تَوَاصَوۡا بِالۡحَقِّ ۬ۙ وَ تَوَاصَوۡا بِالصَّبۡرِ
‘মহাকালের শপথ, মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে আছে; কিন্তু তারা নয়, যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়।’ (সুরা আসর: আয়াত ১-৩)

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اصۡبِرُوۡا وَ صَابِرُوۡا وَ رَابِطُوۡا ۟ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ
‘হে ইমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ধারণ করো, ধৈর্যের প্রতিযোগিতা করো এবং সুসম্পর্ক স্থাপনে আত্মনিয়ন্ত্রণের সংগ্রামে অবিচল থাকো, আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।’ (সুরা আল-ইমরান: আয়াত ২০০)

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اسۡتَعِیۡنُوۡا بِالصَّبۡرِ وَ الصَّلٰوۃِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ مَعَ الصّٰبِرِیۡنَ
‘হে মুমিনগণ! ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা বাকারা: আয়াত ১৫৩)

فَاصۡبِرۡ لِحُکۡمِ رَبِّکَ وَ لَا تَکُنۡ کَصَاحِبِ الۡحُوۡتِ ۘ اِذۡ نَادٰی وَ هُوَ مَکۡظُوۡمٌ
‘অতএব, তুমি ধৈর্য ধারণ করো তোমার প্রতিপালকের নির্দেশের অপেক্ষায়, তুমি মৎস্য-সহচর (ইউনুছ আ.)–এর মতো অধৈর্য হোয়ো না, সে বিষাদ আচ্ছন্ন অবস্থায় কাতর প্রার্থনা করেছিল।’ (সুরা আল-কলম: আয়াত ৪৮)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বছরজুড়ে কোরবানির শিক্ষা নিজেদের মধ্যে লালন করার তাওফিক দান করুন। সবর ও ত্যাগের শিক্ষা নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।