প্রাচীন ইবাদত কোরবানি যেভাবে শুরু হয়

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:৩৬ পিএম, ০৭ জুন ২০২৩

কোরবানি একটি ইবাদত। এর ইতিহাস অতি প্রাচীন। জগৎ সৃষ্টির শুরুর দিকেই এ ইবাদতের প্রচলন শুরু হয়। কোরবানি শুরুর সে ঘটনা কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা এভাবে তুলে ধরেছেন-

وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ ابْنَيْ آدَمَ بِالْحَقِّ إِذْ قَرَّبَا قُرْبَاناً فَتُقُبِّلَ مِنْ أَحَدِهِمَا وَلَمْ يُتَقَبَّلْ مِنْ الآخَرِ قَالَ لأَقْتُلَنَّكَ قَالَ إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللهُ مِنْ الْمُتَّقِينَ

আদম (আলাইহিস সালাম)-এর দুই পুত্রের (হাবিল ও কাবিলের) বৃত্তান্ত তুমি তাদেরকে যথাযথভাবে শোনাও যখন তারা উভয়ে কোরবানি করেছিল তখন একজনের কুরবানী কবুল হল এবং অন্য জনের কোরবানি কবুল হল না। (তাদের একজন) বলল, আমি তোমাকে অবশ্যই হত্যা করব। (অপরজন) বলল, আল্লাহ তো সংযমীদের কোরবানিই কবুল করে থাকেন।’ (সুরা মায়েদা: আয়াত ২৭)

لَئِنۡۢ بَسَطۡتَّ اِلَیَّ یَدَکَ لِتَقۡتُلَنِیۡ مَاۤ اَنَا بِبَاسِطٍ یَّدِیَ اِلَیۡکَ لِاَقۡتُلَکَ ۚ اِنِّیۡۤ اَخَافُ اللّٰهَ رَبَّ الۡعٰلَمِیۡنَ

সে (হাবিল) বলল, যদি তুমি আমাকে হত্যা করতে আমার দিকে হস্ত প্রসারিত কর, তবুও আমি তোমাকে হত্যা করতে তোমার প্রতি হস্ত প্রসারিত করব না। কেননা আমি বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি।’ (সুরা মায়েদা: আয়াত ২৮)

এরপর থেকেই প্রত্যেক যুগে ধারাবাহিকভাবে কোরবানির এ বিধান সব শরিয়তে প্রচলিত হয়। মানব সভ্যতার সুদীর্ঘ ইতিহাস থেকে জানা যায়, যুগে যুগে সব জাতি ও সম্প্রদায়ের মানুষ কোনো না কোনোভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তার প্রিয় বস্তু উৎসর্গ করতেন। আর আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে প্রিয়বস্তু উৎসর্গই আজকের কোরবানি। এ কথার প্রমাণে মহান আল্লাহ বলেন-

وَلِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنْسَكاً لِيَذْكُرُوا اسْمَ اللهِ عَلَى مَا رَزَقَهُمْ مِنْ بَهِيمَةِ الأَنْعَامِ فَإِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَلَهُ أَسْلِمُوا وَبَشِّرْ الْمُخْبِتِينَ

‘আমি প্রতিটি সম্প্রদায়ের জন্য (কোরবানির) নিয়ম করে দিয়েছি। তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হতে যে রিজিক দেওয়া হয়েছে সেগুলোর উপর তারা যেন আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে (এই বিভিন্ন নিয়ম-পদ্ধতির মূল লক্ষ্য কিন্তু এক- আল্লাহর নির্দেশ পালন) কারণ তোমাদের মাবুদই একমাত্র উপাস্য কাজেই তাঁর কাছেই আত্মসমর্পণ কর আর সুসংবাদ দাও সেই বিনীতদেরকে’ (সুরা হজ: আয়াত ৩৪)

বর্তমান কোরবানির ইতিহাস

আরবি বছরের ১০ জিলহজ কোরবানির নির্ধারিত প্রথম দিন। এরপরও দুইদিন কোরবানি করা যায়। এ কোরবানির প্রচলন আসছে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম থেকে। আল্লাহ তাআলা তাকে তার সন্তান কোরবানির নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি সে হুকুম পালন করে সফল হয়েছিলেন। তার পর থেকে উম্মতে মুসলিমাহ আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে কোরবানির বিধান পালন করে আসছেন। কোরবানির এ নির্দেশের বর্ণনাও কোরআনে এভাবে ওঠে এসেছে-

فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعۡیَ قَالَ یٰبُنَیَّ اِنِّیۡۤ اَرٰی فِی الۡمَنَامِ اَنِّیۡۤ اَذۡبَحُکَ فَانۡظُرۡ مَاذَا تَرٰی ؕ قَالَ یٰۤاَبَتِ افۡعَلۡ مَا تُؤۡمَرُ ۫ سَتَجِدُنِیۡۤ اِنۡ شَآءَ اللّٰهُ مِنَ الصّٰبِرِیۡنَ

‘অতঃপর যখন সে তার সাথে চলাফেরা করার বয়সে পৌঁছল, তখন সে বলল, ‘হে প্রিয় বৎস, আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবেহ করছি, অতএব দেখ তোমার কী অভিমত?; সে বলল, ‘হে আমার পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, আপনি তাই করুন। আমাকে ইনশাআল্লাহ আপনি অবশ্যই ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন’ (সুরা সাফফাত : আয়াত ১০২)

فَلَمَّاۤ اَسۡلَمَا وَ تَلَّهٗ لِلۡجَبِیۡنِ

‘অতঃপর বাবা-ছেলে উভয়েই যখন আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইবরাহিম (আলাইহিস সালাম) তাকে জবেহ করার জন্য তাকে কাত করে শুইয়ে দিলেন।’ (সুরা সাফফাত : আয়াত ১০৩)

قَدۡ صَدَّقۡتَ الرُّءۡیَا ۚ اِنَّا کَذٰلِکَ نَجۡزِی الۡمُحۡسِنِیۡنَ - وَ نَادَیۡنٰهُ اَنۡ یّٰۤاِبۡرٰهِیۡمُ

‘তখন আমি ডেকে বললাম, ‘হে ইবরাহিম! তুমি তো স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করে দেখালে। নিশ্চয়ই আমি এইভাবে সৎকর্মপরায়ণদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।’  (সুরা সাফফাত : আয়াত ১০৪-১০৫)

اِنَّ هٰذَا لَهُوَ الۡبَلٰٓـؤُا الۡمُبِیۡنُ  -  وَ فَدَیۡنٰهُ بِذِبۡحٍ عَظِیۡمٍ

‘নিশ্চয়ই এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আর আমি তার (সন্তান কোরবানির) পরিবর্তে জবেহযোগ্য এক মহান জন্তু দিয়ে (কোরবানি করিয়ে) তাকে (সন্তানকে) মুক্ত করে নিলাম।’ (সুরা সাফফাত : আয়াত ১০৬-১০৭)

وَ تَرَکۡنَا عَلَیۡهِ فِی الۡاٰخِرِیۡنَ

আর এ (কোরবানির) বিষয়টি পরবর্তীদের জন্য স্মরণীয় করে রাখলাম। (সুরা সাফফাত : আয়াত ১০৮)

সুবহানাল্লাহ! আল্লাহ তাআলা কতই না মহান! যিনি তার বন্ধু হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে প্রিয় সন্তান কোরবানির নির্দেশ দিয়েছেন। তিনিও তাঁর নির্দেশ পালন নিজ সন্তানকে জবেহ করার জন্য শুইয়ে দিয়েছেন। আর তিনি এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তারপর থেকেই মুসলিম উম্মাহ কোরবানির এ বিধান পালন করে আসছেন।

কোরবানির পরিচয়

আরবি করব বা কুরবান (قرب বা قربان) শব্দটি উর্দু ও ফার্সিতে (قربانى) কোরবানি নামে রূপান্তরিত। এর অর্থ হলো-নৈকট্য বা সান্নিধ্য। কোরআনুল কারিমের কোরবানির একাধিক সমার্থক শব্দের ব্যবহার দেখা যায়। তাহলো-

১. نحر অর্থে। আল্লাহ বলেন, فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ ‘সুতরাং আপনি আপনার প্রতিপালকের জন্য নামাজ এবং কোরবানি আদায় করুন। এ কারণে কোরবানির দিনকে يوم النحر বলা হয়।

২. نسك অর্থে। আল্লাহ বলেন, قُلْ إِنَّ صَلاَتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‘আপনি বলুন, নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মৃত্যু; সবই বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহ তাআলার জন্য।’ (সুরা আনআ’ম : আয়াত ১৬২)

৩. منسك অর্থে। আল্লাহ বলেন, ‘ لِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنْسَكاً ‘আমি প্রত্যেক উম্মাতের জন্য কোরবানির বিধান রেখেছি।’ (সুরা হজ্জ : আয়াত ৩৪)।

৪. الاضحى অর্থে। হাদিসের ভাষায় অর্থে কোরবানির ঈদকে (عيد الاضحى) ‘ঈদ-উল-আজহা’ বলা হয়।

মনে রাখতে হবে

হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের সঙ্গে মহান আল্লাহর বন্ধুত্ব ছিল গভীর। তাই ১০০ বছরের বৃদ্ধ পিতাকে তার চলাফেরার উপযোগী সন্তানকে কোরবানির নির্দেশ দিয়ে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি করেন। এ কঠিন পরীক্ষা মিনা প্রান্তরে তিনি হাসিমুখে পালন করেছিলেন। আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে তাঁর মানসিকতা আল্লাহর কাছে কবুল হয়েগিয়েছিল। যা আজও মুসলিম উম্মাহ প্রতিবছর জিলহজ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখ এ তিন দিনের যে কোনো একদিন পালন করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে লোক দেখানোর জন্য কোরবানি নয় বরং পশুকে জবাইয়ের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে মনের পশু ও আমিত্বকে জবাই করার তাওফিক দান করুন। কোরবানির মাধ্যমে নিজেকে তাকওয়াবান হিসেবে তৈরি করার তাওফিক দান করুন। কোরবানিকে ইবাদত হিসেবে গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।