ইসলামে রোগীর সেবা করা সুন্নত

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:৫২ পিএম, ১১ মে ২০২৩

অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করা সুন্নত। এটি মুমিন মুসলমানের পারস্পরিক দ্বীনি অধিকার। রোগীর সেবা সামাজিক কোনো দায়বদ্ধতা নয়। অসুস্থ ব্যক্তির প্রতি সমবেদনা, সহানুভূতি ও সহযোগিতা করা উত্তম এবাদতও বটে। তাই রোগী সেবা করা থেকে বিরত থাকা মানে আল্লাহ থেকে বিরত থাকার শামিল। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তা তুলে ধরেছেন এভাবে-

১. নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম, তুমি আমাকে সেবা করনি। বান্দা বলবে, হে প্রভু! আপনি তো সব সৃষ্টির প্রতিপালক, আমি কীভাবে আপনার সেবা করতাম?

তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, তুমি তার সেবা করোনি, তুমি যদি তার সেবা করতে তাহলে সেখানে আমাকে পেতে!' (মুসলিম)

২. নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

لِلْمُؤْمِنِ عَلَى الْمُؤْمِنِ سِتُّ خِصَالٍ يَعُودُهُ إِذَا مَرِضَ

এক মুমিনের উপর অপর মুমিনের ৬টি হক রয়েছে। কোনো মুসলমান যখন অসুস্থ হয়ে যাবে তখন তার সেবা করা।' (নাসাঈ)

অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজ খবর নেওয়া বা তাকে দেখতে যাওয়া বা তার যে কোনো সহযোগিতায় রয়েছে অনেক ফজিলত ও মর্যাদা। হাদিসে আরও এসেছে-

৩. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন কোনো বান্দা তার অসুস্থ মুসলমান ভাইকে দেখতে যায় অথবা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য যায় তখন একজন ফেরেশতা উচ্চস্বরে আকাশ থেকে চিৎকার করে বলেন- তুমি ভালো থাক, তোমার চলাফেরা ভালো ছিল, তুমি বেহেশতে ঠিকানা করে নিয়েছ।' (তিরমিজি)

অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া

মুমিন ‍মুসরমান রোগী দেখতে গিয়ে তার জন্য দোয়া করেন। দোয়া করাও ইবাদত। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে রোগীর জন্য দোয়া করতেন। অন্যদের দোয়া করার উপদেশ দিতেন। রোগীর সুস্থতায় তিনি দোয়া পড়তেন। রোগীকে সান্ত্বনা দিতেন। হাদিসের বর্ণনায় বিষয়গুলো এভাবে ওঠে এসেছে-

. রোগীর সুস্থতায় পড়তেন-

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যেতেন তখন তার শিয়রে (মাথার পাশে) বসতেন তারপর ৭ বার বলতেন-

أَسْأَلُ اللهَ الْعَظِيْمَ رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ اَن يَشْفِيَكَ

উচ্চারণ : 'আসআলুল্লাহাল আজিমা রাব্বাল আরশিল আজিমি আই-ইয়াশফিয়াকা।'

অর্থ : 'আমি মহান আরশের মালিক আল্লাহর কাছে তোমার সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছি।'

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যদি তার মৃত্যু নির্ধারিত হয়ে না থাকে তবে সে অবশ্যই সুস্থ হয়ে যাবে।' (তিরমিজি ২০৮৩, আবু দাউদ ৩১০৬, মিশকাত ১৫৫৩)

২. রোগীকে সান্ত্বনা দিয়ে বলতেন-

হজরত আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার একজন অসুস্থ বেদুঈনকে দেখতে গেলেন। আর কোনো রোগীকে দেখতে গেলে তিনি (সান্ত্বনা দিয়ে) বলতেন, ‘ভয় নেই, আল্লাহ চান তো তুমি খুব শীঘ্রই ভাল হয়ে যাবে। এ রোগ তোমার পবিত্র হবার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।’ এ নিয়ম অনুযায়ী তিনি বেদুঈনকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন-

لَا بَأْسَ طَهُورٌ إِنْ شَاءَ اللَّهُ

উচ্চারণ : 'লা বাসা তুহুরা ইনশাআল্লাহ'

অর্থ : ‘ভয় নেই, তুমি ভাল হয়ে যাবে। আল্লাহর ইচ্ছায় এটা তোমার পবিত্র হবার কারণ হয়ে যাবে।’

তাঁর কথা শুনে বেদুঈন বলল, কক্ষনো নয়। বরং এটা এমন এক জ্বর, যা একজন বৃদ্ধ লোকের শরীরে ফুঁটছে। এটা তাকে কবরে নিয়ে ছাড়বে। তার কথা শুনে এবার নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আচ্ছা, তুমি যদি তাই বুঝে থাক তবে তোমার জন্য তা-ই হবে। (বুখারি ৩৬১৬, ৫৬৫৬, ৫৬৬২, ইবনু হিব্বান ২৯৫৯, মিশকাত ১৫২৯)

৩. রোগীর কষ্ট লাগলে পড়তেন

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন, আমাদের কারো অসুখ (কষ্ট) হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর ডান হাতে রোগীর গায়ে বুলিয়ে দিয়ে বলতেন-

أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءٌ لَا يُغَادِرُ سَقَمًا

উচ্চারণ : 'আজহিবিল বাসা রাব্বান্নাসি ওয়াশফি আংতাশ শাফি লা শিফাআ ইল্লা শিফাউকা শিফাউ লা ইয়ুগাদিরু সাক্বামা।'

অর্থ: ‘হে মানুষের রব! এ ব্যক্তির রোগ (কষ্ট) দূর করে দিন। তাকে নিরাময় করে দিন। নিরাময় করার মালিক শুধু আপনিই। আপনার নিরাময় ছাড়া আর কোনো নিরাময় নেই। এমন নিরাময় যা কোনো রোগকে বাকি রাখে না।’ (বুখারি ৫৭৫০, মুসলিম ২১৯১, ইবনু মাজাহ ৩৫২০, ইবনু আবি শায়বা ২৯৪৯০, মুসনাদে আহমাদ ২৪৭৭৬, নাসাঈ ৭৪৬৬, ইবনু হিব্বান ২৯৭১, বায়হাকি ৬৫৯০, মেশকাত ১৫৩০)

সুতরাং যারা অসুস্থ তাদের মনোবল বাড়াতে বেশি বেশি খোঁজ খবর নেয়াসহ মানসিকভাবে তাদের সান্ত্বনা দেওয়া সুন্নাত ও ইবাদত। মুমিন মুসলমানের একান্ত করণীয় রোগীর পাশে থাকা। তাদের সেবা করা। রোগীর সেবা করার মাধ্যমে নিজেদের ইবাদতে শামিল করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী রোগীর সেবা করার মতো ইবাদত ও তাদের জন্য দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।