তারাবিহের আলোচনা

বৃষ্টির জন্য কী আমল করবেন?

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:৫৭ পিএম, ১৭ এপ্রিল ২০২৩

কে আমলের দিক থেকে উত্তম তা পরীক্ষার ঘোষণা দিয়ে সুরা মুলক পড়ার মাধ্যমে শুরু হবে ১৪৪৪ হিজরির ২৬তম তারাবিহ। আজকের তারাবিহতে সুরা মুলক, সুরা আল-ক্বালাম, সুরা আল-হাক্কাহ, সুরা আল-মাআ’রিজ, সুরা নূহ, সুরা জিন, সুরা আল-মুযযাম্মিল, সুরা আল-মুদ্দাছছির, সুরা আল-ক্বিয়ামাহ, সুরা আল-ইনসান ও সুরা আল-মুরসালাত পড়া হবে। সে সঙ্গে ২৯তম পারার তেলাওয়াত শেষ হবে। আজকের তারাবিহের তেলাওয়াতে হাফেজে কোরআনগণ সুরা নুহ-এর মধ্যে ক্ষমা প্রার্থনার পুরস্কারের কথা ঘোষণা করবেন এভাবে-

فَقُلۡتُ اسۡتَغۡفِرُوۡا رَبَّکُمۡ ؕ اِنَّهٗ کَانَ غَفَّارًا  یُّرۡسِلِ السَّمَآءَ عَلَیۡکُمۡ مِّدۡرَارًا  وَّ یُمۡدِدۡکُمۡ بِاَمۡوَالٍ وَّ بَنِیۡنَ وَ یَجۡعَلۡ لَّکُمۡ جَنّٰتٍ وَّ یَجۡعَلۡ لَّکُمۡ اَنۡهٰرًا

'তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দিবেন। তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ত তি বাড়িয়ে দিবেন, তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন। (সুরা নুহ : আয়াত ১০-১২)

এ আয়াতে কারিমায় আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা প্রার্থনা কথা বলেছেন। রোজাদার বান্দারা ক্ষমা প্রার্থনা করলে-

> আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করে দেবেন।

> রহমতের বৃষ্টি দান করবেন।

> যারা সন্তানহীন তাদের সন্তান-সন্তুতি দান করবেন।

> যাদের সহায় সম্বল নেই, তাদের ধন-সম্পদ দান করবেন।

> সবুজ উদ্যান দান করবেন।

> উপকারি নদ-নদী দান করবেন।

আয়াতের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা

আল্লাহ তাআলা নির্দেশ হলো- ঈমান এবং আনুগত্যের পথ অবলম্বন কর এবং তোমাদের প্রভুর কাছে নিজেদের বিগত জীবনের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে নাও।

এই আয়াতের কারণে কোনো কোনো আলেম ইস্তিসক্বার নামাজে সুরা নুহ পাঠ করাকে মোস্তাহাব মনে করেন। বর্ণিত আছে যে, হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু একবার ইস্তিসক্বার নামাজের জন্য মিম্বরে আরোহণ করে কেবলমাত্র ইস্তিগফারের আয়াতগুলি (যাতে এই আয়াতও ছিল) পড়ে মিম্বর হতে নেমে গেলেন এবং বললেন, বৃষ্টির সেই পথসমূহ থেকে বৃষ্টি কামনা করেছি, যা আসমানে রয়েছে এবং যেগুলো হতে বৃষ্টি জমিনে বর্ষিত হয়। (ইবনে কাসীর)

হজরত হাসান বসরি রাহমাতুল্লাহি আলাইহির ব্যাপারে বর্ণিত আছে যে, তাঁর কাছে এসে কেউ অনাবৃষ্টির অভিযোগ জানালে, তিনি তাকে ইস্তিগফার করার কথা শিক্ষা দিতেন। আর একজন তাঁর কাছে দরিদ্রতার অভিযোগ জানালে, তাকেও তিনি এই (ইস্তিগফার করার) কথাই বাতলে দিলেন। অন্য একজন তার বাগান শুকিয়ে যাওয়ার অভিযোগ জানালে, তাকেও তিনি ইস্তিগফার করতে বললেন। এক ব্যক্তি বলল যে, আমার সন্তান হয় না, তাকেও তিনি ইস্তিগফার করতে বললেন। যখন কেউ তাঁকে প্রশ্ন করল যে, আপনি সবাইকে কেবল ইস্তিগফারই করতে কেন বললেন? তখন তিনি এই আয়াতই তেলাওয়াত করে বললেন, ‘আমি নিজের পক্ষ থেকে এ কথা বলিনি, বরং উল্লিখিত সমস্ত ব্যাপারে এই ব্যবস্থাপত্র মহান আল্লাহই দিয়েছেন।’ (আইসারুত তাফাসির)

এ কথাটি পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন স্থানে বলা হয়েছে যে, আল্লাহদ্রোহিতার আচরণ মানুষের জীবনকে শুধু আখেরাতেই নয় দুনিয়াতেও সংকীর্ণ করে দেয়। অপর পক্ষে কোনো জাতি যদি অবাধ্যতার বদলে ঈমান, তাকওয়া এবং আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলার পথ অনুসরণ করে তাহলে তা শুধু আখেরাতের জন্যই কল্যাণকর হয় না, দুনিয়াতেও তার ওপর আল্লাহর অশেষ নেয়ামত বর্ষিত হতে থাকে। অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে তার দুনিয়ার জীবন হবে সংকীর্ণ। আর কেয়ামতের দিন আমি তাকে অন্ধ করে উঠাবো।’ (সুরা ত্বা-হা: আয়াত ১২৪)

আরও বলা হয়েছে, ‘আহলে কিতাব যদি তাদের কাছে তাদের রবের পক্ষ থেকে প্রেরিত তাওরাত, ইঞ্জিল ও অন্যান্য আসমানি কিতাবের বিধানাবলী মেনে চলতো তাহলে তাদের জন্য ওপর থেকেও রিজিক বর্ষিত হতো এবং নীচ থেকেও ফুটে বের হতো।’ (সুরা আল-মায়েদাহ: আয়াত ৬৬)

আরও বলা হয়েছে, ‘জনপদসমূহের অধিবাসীরা যদি ঈমান আনতো এবং তাকওয়ার নীতি অনুসরণ করতো তাহলে আমি তাদের জন্য আসমান ও জমিনের বরকতের দরজাসমূহ খুলে দিতাম।’ (সুরা আল-আরাফ: আয়াত ৯৬)

অনুরূপভাবে হজরত হুদ আলাইহিস সালাম তার কওমের লোকদের বললেন, ‘হে আমার কওমের লোকেরা, তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, তার দিকে ফিরে যাও। তিনি তোমাদের ওপর আসমান থেকে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের শক্তি ও ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে দেবেন।’ (সুরা হূদ: আয়াত ৫২)

স্বয়ং নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দিয়ে মক্কার লোকদের সম্বোধন করে সেখানে আরও বলা হয়েছে ‘আর তোমরা যদি তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং তার দিকে ফিরে আস তাহলে তিনি একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদের উত্তম জীবনোপকরণ দান করবেন।’ (সুরা হুদ: আয়াত ৩)

এ থেকে আলেমগণ বলেন যে, গুনাহ থেকে তওবাহ ও ইস্তেগফার করলে আল্লাহ তাআলা যথাস্থানে বৃষ্টি বর্ষণ করেন, দুর্ভিক্ষ হতে দেন না এবং ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে বরকত হয়। বিভিন্ন হাদিস থেকে এর সপক্ষে প্রমাণ পাওয়া যায়। সালফে সালেহিনও বৃষ্টির জন্য সালাতের সময় এ পদ্ধতির প্রতি জোর দিতেন। কোরআন মজীদের এ নির্দেশনা অনুসারে কাজ করতে গিয়ে একবার দুর্ভিক্ষের সময় হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বৃষ্টির জন্য দোয়া করতে বের হলেন এবং শুধু ইসতিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করেই শেষ করলেন।

সবাই বললো, ‘হে আমিরুল মুমিনিন! আপনি তো আদৌ দোয়া করলেন না। তিনি বললেন, আমি আসমানের ঐ সব দরজায় করাঘাত করেছি যেখানে থেকে বৃষ্টি বর্ষিত হয়। একথা বলেই তিনি সুরা নুহের এ আয়াতগুলো তাদের পাঠ করে শুনালেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম মিল্লাতের ক্ষমা প্রার্থনায় একটি দোয়ার আবেদন তুলে ধরেছেন-

رَبِّ اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِمَن دَخَلَ بَيْتِيَ مُؤْمِنًا وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَلَا تَزِدِ الظَّالِمِينَ إِلَّا تَبَارًا

উচ্চারণ : 'রাব্বিগলিলি ওয়া লিওয়ালিদাইয়্যা ওয়ালিমান দাখালা বাইতিয়া মুমিনাও ওয়া লিলমুমিনিনা ওয়াল মুমিনাতি ওয়া লা তাযিদিজ জ্বালিমিনা ইল্লা তাবারা।' (সুরা নুহ : আয়াত ২৮)

অর্থ : 'হে আমার পালনকর্তা! আপনি আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে , যারা মুমিন হয়ে আমার গৃহে প্রবেশ করে-তাদেরকে এবং মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে ক্ষমা করুন এবং যালেমদের কেবল ধ্বংসই বৃদ্ধি করুন।'

সুরা মুলক : আয়াত ৩০

সুরা মুলক মক্কায় নাজিল হয়েছে। সুরাটিকে তাবারাকা, মুনজিয়াহ ও মানেয়া নামও দেয়া হয়েছে। এ সুরার ফজিলত বর্ণনায় হাদিসে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহ আনহু বলেন, নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কুরআন মাজিদে একটি সুরা আছে, যা ৩০ আয়াত বিশিষ্ট; যে তা তেলাওয়াত করবে কেয়ামতের দিন এ সুরা তার জন্য আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করে জাহান্নাম থেকে বের করাবে এবং বেহেশতে প্রবেশ করাবে। আর সে সুরাটি হলো- تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ

الَّذِیۡ خَلَقَ الۡمَوۡتَ وَ الۡحَیٰوۃَ لِیَبۡلُوَکُمۡ اَیُّکُمۡ اَحۡسَنُ عَمَلًا ؕ وَ هُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡغَفُوۡرُ

‘যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যাতে তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম। আর তিনি মহাপরাক্রমশালী, অতিশয় ক্ষমাশীল।’ (সুরা মুলক: আয়াত ২)

روح (আত্মা) একটি এমন অদৃশ্যমান বস্তু যে, যে দেহের সঙ্গে তার সম্পর্ক বহাল থাকে, তাকে জীবিত বলা হয়। আর যে দেহ হতে তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়, তাকে মৃত্যুর শিকার হতে হয়। জীবনের পর রয়েছে মৃত্যু। আল্লাহ তাআলা ক্ষণস্থায়ী এই জীবনের ব্যবস্থা এই জন্য করেছেন, যাতে তিনি পরীক্ষা করতে পারেন যে, এই জীবনের সদ্ব্যবহার কে করে? যে এ জীবনকে ঈমান ও আনুগত্যের কাজে ব্যবহার করবে, তার জন্য রয়েছে উত্তম প্রতিদান এবং যে এর অন্যথা করবে, তার জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি।

এ সুরায় ইসলামি শিক্ষার মূল বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। আবার যে সব লোক বেপরোয়া এবং অমনোযোগী ছিল তাদেরকে অত্যন্ত কার্যকরভাবে সজাগ করে দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে এ সুরায় মানুষের ঘুমন্ত বিবেক ও অনুভূতিকে জাগ্রত করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

সুরা আল-ক্বালাম : আয়াত ৫২

মক্কায় নাজিল হওয়া সুরা আল-ক্বালাম ২ রুকু এবং ৫২ আয়াতে বিভক্ত। মক্কায় যখন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরোধীতা প্রবল আকার ধারণ করে তখন এ সুরাটি নাজিল হয়। এ সুরা তিন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।

> ইসলাম বিদ্বেষীদের আপত্তি ও সমালোচনার জবাব দেয়া হয়েছে এ সুরার মাধ্যমে।

> তাদেরকে তাদের কাজের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে এবং উপদেশ প্রদান করা হয়েছে।

> ইসলাম বিদ্বেষীদের যাবতীয় নির্যাতন হয়রানি প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ধৈর্যধারণ ও অবিচল থাকার উপদেশ দেয়া হয়েছে।

সুরা আল-হাক্কাহ : আয়াত ৫২

সুরা হাক্কাহ মক্কায় নাজিল হয়েছে। এ সুরায় রয়েছে ২ রুকু এবং ৫২ আয়াত। এ সুরার প্রথম রুকুতে পরকালের বর্ণনা করা হয়েছে। আর দ্বিতীয় রুকতে কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিল হওয়া এবং হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে, আল্লাহ রাসুল; এ কথার সত্যতা বর্ণনা করা হয়েছে।

সুরা আল-মায়ারিজ : আয়াত ৪৪

সুরা মাআ’রিজ মক্কায় নাজিল হয়েছে। এ সুরাটি ৪৪ আয়াত এবং ২ রুকুতে বিভক্ত। এ সুরায় কাফেরদের ওই সব কথা ওঠে এসেছে; যা ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য অশোভণীয়। এ সুরায় মক্কার অবিশ্বাসীরা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কিয়ামত, আখেরাত, দোযখ ও বেহেশত সম্পর্কিত বক্তব্য নিয়ে যখন বিদ্রুপ ও উপহাস করতো।

প্রিয়নবিকে এ মর্মে চ্যালেঞ্জ করতো যে, তুমি যদি সত্যবাদী হয়ে থাকো আর তোমাকে অস্বীকার করার কারণে আমরা যদি জাহান্নামের শাস্তি লাভের উপযুক্ত হয়ে থাকি; তাহলে তুমি আমাদেরকে যে জাহান্নামের ভয় দেখাও তা আমাদের সামনে নিয়ে এসো। এ সুরায় ওই সব বিদ্রেুাপকারী কাফেরদেরকে সতর্ক করা হয়েছে। সত্যের উপদেশবানী শোনানো হয়েছে। মূলত অবিশ্বাসীদের চ্যালেঞ্জের জবাবেই পুরো সুরাটি নাজিল করা হয়েছে।

সুরা নূহ : আয়াত ২৮

সুরা নূহ-এর আয়াত সংখ্যা ২৮ ও ২ রুকুতে বিভক্ত। সুরাটি মক্কায় নাজিল করা হয়। এ সুরায় নবুয়তের সত্যতা প্রমাণে হজরত নূহ আলাইহিস সালামের বিস্তারিত ঘটনা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর নাজিল করা হয়েছে।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে মানুষদেরকে জানানো হয়েছে যে, তোমরা হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর যে আচরণ করছো; হজরত নূহ-এর ওপর তার কাওমও সে রকম আচরণ করতো। তোমরা যদি প্রিয়নবির সঙ্গে তোমাদের আচরণ ভালো না কর; তবে তোমাদের ওপরও নূহ আলাইহিস সালামের কাওমের শাস্তির পতিত হবে। এ সুরায় মানুষের নিকট আল্লাহ তাআলার দাওয়াত পৌছানোর পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে।

সুরা জিন : আয়াত ২৮

সুরা জিন মক্কায় অবতীর্ণ। ২রুকু ও ২৮ আয়াতে সুবিন্যস্ত। এ সুরা নাজিলের একটি চমৎকার ঘটনা রয়েছে। আর তা হলো-

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কয়েকজন সাহাবিকে নিয়ে উকায বাজারে যাচ্ছিলেন। পথে নাখলা নামক স্থানে তিনি ফজরের নামাজে ইমামতি করেন।

সে সময় একদল জিন ওই স্থান অতিক্রম করছিল। তারা প্রিয়নবির কুরআন তেলাওয়াতের শব্দ শুনে সেখানে থেমে যায় এবং গভীর মনোযোগসহ কুরআন শুনতে থাকে। এ সুরাতে এ ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।

সুরা আল-মুযযাম্মিল : আয়াত ২০

মক্কায় নাজিল হওয়া সুরা মুযযাম্মিল ২ রুকু এবং ২০ আয়াতে সুবিন্যস্ত। এ সুরার রুকু ২টি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে নাজিল হয়। এ সুরার মাধ্যমে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাতের বেলায় ওঠে আল্লাহ তাআলার ইবাদত বন্দেগি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যাতে তাঁর মধ্যে নবুয়তের মতো গুরু দায়িত্ব গ্রহণের শক্তি ও সামর্থ্য তৈরি হয়।

তাছাড়া এ সুরার মাধ্যমে অর্ধেক রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের বিষয় এবং বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করার নির্দেশ প্রদান করেছেন আল্লাহ তাআলা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ধৈর্য, সহমর্মিতা প্রদান এবং উপদেশ দেয়া হয়েছে এ সুরায়।

সুরা আল-মুদ্দাছছির : আয়াত ৫৬

সুরা মুদ্দাছছির মক্কায় নাজিল হয়। এ সুরাটি ২ রুকুতে বিভক্ত হলেও এর আয়াত সংখ্যা ৫৬। এ সুরাটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যবহুল সুরা। এ সুরাটি প্রিয়নবির নবুয়তি জীবনের প্রাথমিক কর্মসূচি।

এ সুরায় কিয়ামতে বর্ণনা, কাফের সর্দার ওয়ালিদ ইবনে মুগিরার আলোচনাসহ কুরাইশদের ঈমান আনা ও না আনার কারণ এবং তার ভয়াবহ পরিণতির কথা আলোচিত হয়েছে। ইবনে জারীর বর্ণনা করেন, ‘প্রথম ওহি নাজিলের পর প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট বেশ কিছু দিন ওহি নাজিল হওয়া বন্ধ থাকে। সে সময় প্রিয়নবি এতো কঠিন মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছিলেন যে, কোনো কোনো সময় তিনি পাহাড়ের চূড়ায় ওঠে সেখান থেকে নিজেকে নিচে নিক্ষেপ করতে বা গড়িয়ে ফেলে দিতে উদ্যত হতেন।

কিন্তু যখনই তিনি কোনো চূড়ার পাশাপাশি যেতেন, তখনিই হজরত জিবরিল আলাইহি সালাম তাঁর সামনে এসে বলতেন, ‘আপনি তো আল্লাহর নবি! এতে তার হৃদয় মন প্রশান্তিতে ভরে যেতো এবং তার অশ্বস্তি ও অস্থিরতা ভাব বিদূরিত হয়ে যেতো।

সুরা আল-ক্বিয়ামাহ : আয়াত ৪০

সুরাটি মক্কায় নাজিল হয়েছে। এতে রয়েছে ২ রুকু এবং ৪০ আয়াত। এ সুরায় প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে যে, আপনি ওহি মুখস্ত করতে দ্রুততর জিহ্বা নাড়াবেন না। এ সুরায় অবিশ্বাসীদের কৃতকর্ম এবং মুমিন বান্দার করণীয় ওঠে এসেছে।

সুরা আল-ইনসান : আয়াত ৩১

সুরা আল-ইনসানের আরেক নাম সুরা আদ-দাহর। এ সুরাটি মদিনায় অবতীর্ণ এবং সুরাটিতে ৩১টি আয়াত এবং ২টি রুকু রয়েছে। এ সুরার মূল কথা হলো মানুষকে দুনিয়ায় তার প্রকৃত অবস্থা এবং মর্যাদা অবহিত করা। মানুষ আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হলে ফলাফল কি হবে আর অকৃতজ্ঞ হলে তার ফলাফল কি হবে সে সব বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে এ সুরায়।

সুরা আল-মুরসালাত : আয়াত ৫০

এ সুরাটি মক্কায় নাজিল হয়। সুরাটি ২ রুকু এবং ৫০ আয়াতে সুবিন্যস্ত। এ সুরায় মক্কাবাসীকে সতর্ক করা হয়েছে। পরকালের প্রমাণ এবং সত্য গ্রহণের সুফলের পাশাপাশি সত্যকে মিথ্যা সাব্যস্ত করার যে পরিণতি ভোগ করতে হবে তা এ সুরায় ওঠে এসেছে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের এ গুরুত্বপূর্ণ সুরাগুলো বুঝে পড়ার এবং তাঁর ওপর আমল করার পাশাপাশি নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসকে শিরকমুক্ত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।