জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ আমল
মুসলমানের জন্য জুমার নামাজ অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। এটি ইসলামের অন্যতম একটি ইবাদত। জুমার দিন অনান্য ইবাদাতের জন্যও রয়েছে অতিরিক্ত সওয়াবের হুকুম। তাই এই দিনটিকে সঠিকভাবে পালন করা জরুরি। প্রত্যেক মুসল্লির জন্য এদিন পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে। আমলগুলো কী?
১. জুমার জন্য পরিচ্ছন্ন হওয়া
জুমার নামাজে যাওয়ার আগে গোসল করা জরুরি। অনেকে এই দিনে এত বেশি ব্যস্ত থাকেন যে, কোনো রকম জুমার ফরজ দুই রাকাত আদায় করে চলে আসেন। অথচ হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু সাইদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আমি এ মর্মে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জুমার দিন প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্কের জন্য গোসল করা ওয়াজিব (জরুরি)। আর মিসওয়াক করবে এবং সম্ভব হলে সুগন্ধি ব্যবহার করবে। ’ (বুখারি, মুসলিম ৮৪৬)
তাই সবার উচিত জুমার দিন গোসল করা এবং মিসওয়াক করা। যদি সামর্থ্য থাকে, সুগন্ধি ব্যবহার করা। এছাড়াও ভাল ও পরিচ্ছন্ন জামা পড়ে মসজিদে যাওয়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও এই দিন ভালো ও পরিচ্ছন্ন পোশাক পরতেন।
২. দ্রুত মসজিদে যাওয়া
জুমার নামাজ কেবল দুই রাকাত নামাজ আদায়ই যথেষ্ট নয়, বরং জুমার খুতবা শোনাও জরুরি। তাই জুমার খুতবা শোনা এবং নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে দ্রুত যাওয়া আবশ্যক। এতে মিলবে কোরবানির সওয়াব। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন জানাবাত (সহবাস পরবর্তীকালে) গোসলের মতো গোসল করে এবং নামাজের জন্য আগমন করে, সে যেন একটি উট কোরবানি করলো। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমন করে, সে যেন একটি গাভী কোরবানি করলো। তৃতীয় পর্যায়ে যে আগমন করে, সে যেন একটি শিং-বিশিষ্ট দুম্বা কোরবানি করলো। চতুর্থ পর্যায়ে যে আগমন করলো সে যেন একটি মুরগি কোরবানি করলো। পঞ্চম পর্যায়ে যে আগমন করলো, সে যেন একটি ডিম কোরবানি করলো। (বুখারি ৮৮১)
তাই জুমার নামাজের দিন পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়া উত্তম। তাহলে সময়মতো ও সঠিকভাবে দ্রুত নামাজ আদায়ে মসজিদে যাওয়া সম্ভব।
৩. জুমার নামাজের সময় অন্য কাজ না করা
জুমার নামাজের সময় অন্য কাজ করা নিষিদ্ধ। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মসজিদের দিকে যাওয়া জরুরি। জুমার প্রথম আজান শোনার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায় কিংবা অন্য কাজ বন্ধ করে দেওয়া অথবা নামাজের জন্য বিরতি দেওয়া উচিত। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত ইয়াহ্ইয়া ইবনু সাইদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন, লোকজন নিজেদের কাজকর্ম নিজেরাই করতেন। যখন তারা দুপুরে জুমার জন্য যেতেন, তখন সে অবস্থায়ই চলে যেতেন। তাই তাদের বলা হলো, যদি তোমরা গোসল করে নিতে ভালো হতো...। (বুখারি ৯০৩, মুসলিম ৮৪৭)
৪. মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনা
খুতবা শোনা জুমার নামাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই ঠিকভাবে খুতবা শোনাও জরুরি। তবে যদি মুসল্লি বেশি হওয়ার কারণে অথবা অন্য কোনো কারণে খুতবার আওয়াজ না শোনা যায়, তবে নিরব থাকা নিয়ম। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি উত্তমভাবে ওজু করে জুমার নামাজে এলো, নীরবে মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনলো, তাহলে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত এবং আরও অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি (অহেতুক) কঙ্কর স্পর্শ করলো, সে অনর্থক, বাতিল, ঘৃণিত ও প্রত্যাখ্যানযোগ্য কাজ করলো। (মুসলিম ১৮৭৩)
প্রসঙ্গত আরবি ও বাংলায় দেওয়া উভয় খুতবাই মনোযোগ দিয়ে শোনা জরুরি।
৫. খুতবার সময় কথা না বলে চুপ থাকা
খুতবা শোনা ওয়াজিব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুতবার সময় কথা বলতে নিষেধ করেছেন। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জুমার দিন যখন তোমার পাশের মুসল্লিকে চুপ থাকো বলবে, অথচ ইমাম খুতবা দিচ্ছেন, তা হলে তুমি একটি অনর্থক কথা বললে।’ (বুখারি ৯৩৪, মুসলিম ৮৫১)
তাই জুমার খুতবা চলাকালিন পাশে কেউ কথা বললেও তাকে থামাতে চুপ থাকার কথা বলাও নিষেধ। খুতবার সময় কেউ কথা বললে তাকে চুপ থাকতে বলাও উচিত নয়। অর্থাৎ খুতবার সময় মুখ পুরোপুরি বন্ধ রাখা চাই।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত পাঁচটি আমল যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস