তারাবিহের আলোচনা

কেয়ামত কবে হবে?

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:৫৯ পিএম, ১৩ এপ্রিল ২০২৩

কেয়ামত কখন সংঘটিত হবে? এ খবর শুধু আল্লাহ তাআলাই জানেন। দুনিয়ার সব কাজ মহান আল্লাহর হুকুমেই সংঘটিত হয়। এ আলোচনায় শুরু হবে ১৪৪৪ হিজরির ২২তম তারাবিহ। আজকের তারাবিহতে সুরা হা-মিম আস-সাজদা (৪৭-৫৪), সুরা শুরা, সুরা যুখরুফ, সুরা দুখান, সুরা জাসিয়া পড়া হবে। আর সে সঙ্গে ২৫তম পাড়ার তেলাওয়াত শেষ হবে। আজকের তারাবিহতে সুরা দুখানে কোরআন ও কদর সম্পর্কে রয়েছে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। আবার কুরাইশদের পক্ষ থেকে নবিজির প্রতি লোভনীয় প্রস্তাবের বিষয়টিও তেলাওয়াত করা হবে আজ।

রহমতের বার্তাবাহী মাস মানুষকে জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত দেওয়ার মাধ্যমে শেষ হতে চলেছে। দেখতে দেখতে ২১ রমজান বিদায় নিয়েছে। ২২ তারাবিহ শুরু হবে আজ। আল্লাহ তাআলার সুন্দর সুন্দর কথা ও ঘটনার বর্ণনাগুলো তেলাওয়াত করবেন হাফেজে কোরআনগণ। এর সবই মানুষের জন্য হেদায়েত ও জীবন চলার পাথেয়। আল্লাহ তাআলার ক্ষমতার বর্ণনায় শুরু হবে আজকের তারাবিহ। আল্লাহ তাআলা বলেন-

اِلَیۡهِ یُرَدُّ عِلۡمُ السَّاعَۃِ ؕ وَ مَا تَخۡرُجُ مِنۡ ثَمَرٰتٍ مِّنۡ اَکۡمَامِهَا وَ مَا تَحۡمِلُ مِنۡ اُنۡثٰی وَ لَا تَضَعُ اِلَّا بِعِلۡمِهٖ ؕ وَ یَوۡمَ یُنَادِیۡهِمۡ اَیۡنَ شُرَکَآءِیۡ ۙ قَالُوۡۤا اٰذَنّٰکَ ۙ مَا مِنَّا مِنۡ شَهِیۡدٍ

'কেয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহর কাছেই আছে; তাঁর অজ্ঞাতসারে (জানার বাইরে) কোনো ফল আবরণ মুক্ত হয় না, কোন নারী গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসব করে না। যেদিন আল্লাহ ওদেরকে ডেকে বলবেন, ‘আমার অংশীদাররা কোথায়?’ তখন ওরা বলবে, ‘আমরা আপনার কাছে নিবেদন করেছি যে, (এ ব্যাপারে) আমাদের মধ্যে কেউ সাক্ষী নয়।’ (সুরা হামিম আস-সাজদা : আয়াত ৪৭)

সুরা হা-মিম আস-সাজদা: আয়াত ৪৭-৫৪

মক্কায় অবতীর্ণ সুরাটি ‘সিজদা, হা-মিম আস-সিজদা, মাসাবিহ ও ফুসসিলাত’ নামে পরিচিত। এ সুরায় নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রিসালাতের বর্ণনা এসেছে। পাশাপাশি মৃত্যুর পর মানুষের যে জীবন আসবে, সে সম্পর্কেও আলোকপাত করা হয়েছে।

কেয়ামত কবে হবে?

কেয়ামতের জ্ঞান শুধু আল্লাহই জানেন। আবার কোনো গাছের ফল হবে বা কোনো নারীর গর্ভের সন্তান কী হবে? এ সম্পর্কে জ্ঞান শুধু মহান আল্লাহর-ই রয়েছে। তিনি মহা ক্ষমতাবান। এ কথা আল্লাহ তাআলা এভাবে ঘোষণা করেন-

 اِلَیۡهِ یُرَدُّ عِلۡمُ السَّاعَۃِ ؕ وَ مَا تَخۡرُجُ مِنۡ ثَمَرٰتٍ مِّنۡ اَکۡمَامِهَا وَ مَا تَحۡمِلُ مِنۡ اُنۡثٰی وَ لَا تَضَعُ اِلَّا بِعِلۡمِهٖ ؕ وَ یَوۡمَ یُنَادِیۡهِمۡ اَیۡنَ شُرَکَآءِیۡ ۙ قَالُوۡۤا اٰذَنّٰکَ ۙ مَا مِنَّا مِنۡ شَهِیۡدٍ

'কেয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহর কাছেই আছে; তাঁর অজ্ঞাতসারে (জানার বাইরে) কোনো ফল আবরণ মুক্ত হয় না, কোন নারী গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসব করে না। যেদিন আল্লাহ ওদেরকে ডেকে বলবেন, ‘আমার অংশীদাররা কোথায়?’ তখন ওরা বলবে, ‘আমরা আপনার কাছে নিবেদন করেছি যে, (এ ব্যাপারে) আমাদের মধ্যে কেউ সাক্ষী নয়।’ (সুরা হামিম আস-সাজদা : আয়াত ৪৭)

উল্লেখিত আয়াতে মানুষকে দুটি বিষয় বুঝানো হয়েছে। একটি হচ্ছে, শুধু কেয়ামত নয়, বরং সমস্ত গায়েবি বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট। গায়েবি বিষয়ে জ্ঞানের অধিকারী আর কেউ নেই। অপরটি হচ্ছে, যে আল্লাহ খুঁটিনাটি বিষয়সমূহের এত বিস্তারিত জ্ঞান রাখেন যে, কোনো ব্যক্তির কাজ কর্ম তাঁর দৃষ্টি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। অতএব তার সার্বভৌম ক্ষমতার আওতায় নিৰ্ভয়ে যা ইচ্ছা তাই করা ঠিক নয়।

কেয়ামতের তারিখ সম্পর্কে প্ৰশ্নকারী এক ব্যক্তিকে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথার মাধ্যমেই জবাব দিয়েছিলেন। একবার সফরে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোথাও যাচ্ছিলেন। পথিমথ্যে এক ব্যক্তি দূর থেকে ডাকলো, হে মুহাম্মাদ! (ডাক শুনে) নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, কি বলতে চাও, বল। সে বললো, কেয়ামত কবে হবে? তিনি জবাবে বললেন, হে আল্লাহর বান্দা, কেয়ামত তো আসবেই। তুমি সে জন্য কি প্রস্তুতি গ্ৰহণ করেছো?' (বুখারি,মুসলিম)

আল্লাহ তাআলা ছাড়া কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময়-জ্ঞান কারো কাছে নেই। এই জন্য যখন জিবরিল আলাইহিস সালাম নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তা কখন ঘটবে?’ নবিজি উত্তরে বললেন, ‘এ ব্যাপারে আমার ততটুকুই জ্ঞান আছে, যতটুটু জ্ঞান তোমার আছে।’

অন্য স্থানে আল্লাহ তাআলা বলেন- اِلٰی رَبِّکَ مُنۡتَهٰىهَا ‘এর চরম জ্ঞান তো তোমার পালনকর্তার কাছে।’ (সুরা নাযিআত : আয়াত ৪৪)

অন্য আয়াতে তিনি আরও বলেন-

یَسۡـَٔلُوۡنَکَ عَنِ السَّاعَۃِ اَیَّانَ مُرۡسٰهَا ؕ قُلۡ اِنَّمَا عِلۡمُهَا عِنۡدَ رَبِّیۡ ۚ لَا یُجَلِّیۡهَا لِوَقۡتِهَاۤ اِلَّا هُوَ ؕ ثَقُلَتۡ فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ لَا تَاۡتِیۡکُمۡ اِلَّا بَغۡتَۃً ؕ یَسۡـَٔلُوۡنَکَ کَاَنَّکَ حَفِیٌّ عَنۡهَا ؕ قُلۡ اِنَّمَا عِلۡمُهَا عِنۡدَ اللّٰهِ وَ لٰکِنَّ اَکۡثَرَ النَّاسِ لَا یَعۡلَمُوۡنَ

'তারা তোমাকে কেয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করে, ‘তা কখন ঘটবে’? তুমি বল, ‘এর জ্ঞান তো রয়েছে আমার রবের কাছে। তিনিই এর নির্ধারিত সময়ে তা প্রকাশ করবেন। আসমানসমূহ ও জমিনের উপর তা (কেয়ামত) কঠিন হবে। তা তোমাদের কাছে হঠাৎ এসে পড়বে। তারা তোমাকে প্রশ্ন করছে যেন তুমি এ সম্পর্কে বিশেষভাবে অবহিত। বল, ‘এ বিষয়ের জ্ঞান কেবল আল্লাহর কাছে আছে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ১৮৭)

এ আয়াতে আল্লাহর পরিপূর্ণ ও সর্বব্যাপী জ্ঞানের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। তাঁর এই জ্ঞান-বৈশিষ্ট্যে কেউ অংশীদার নেই। এইরূপ পরিপূর্ণ ও সর্বব্যাপী জ্ঞান তিনি ছাড়া আর কারো কাছে নেই। নবিদের কাছেও নেই। তাঁরা সেই পরিমাণ জ্ঞান লাভ করে থাকেন, যে পরিমাণ আল্লাহ তাআলা তাঁদের অহি মারফত দান করে থাকেন।

আবার তাঁদের এই অহিলব্ধ জ্ঞানও নবুয়তের মর্যাদা ও তার দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সম্পৃক্ত; অন্যান্য বিদ্যা ও বিষয়ের সঙ্গে নয়। এই জন্য কোনো নবি বা রাসুল; তাঁরা যত বড়ই মর্যাদাবান হোক না কেন; তাঁর জন্য এ কথা বলা বা বিশ্বাস রাখা বৈধ নয় যে, সৃষ্টিজগতে যা ঘটেছে এবং ঘটবে, তিনি/তাঁরা সব জানেন। কারণ, এ গুণ ও বৈশিষ্ট্য একমাত্র মহান আল্লাহর জন্য নির্ধারিত। যে ব্যাপারে অন্য কাউকে শরিক করা হলো শিরক।

لَا یَسۡـَٔمُ الۡاِنۡسَانُ مِنۡ دُعَآءِ الۡخَیۡرِ ۫ وَ اِنۡ مَّسَّهُ الشَّرُّ فَیَـُٔوۡسٌ قَنُوۡطٌ

‘মানুষ কল্যাণ প্রার্থনায় কোন ক্লান্তি বোধ করে না, কিন্তু যখন তাকে অকল্যাণ স্পর্শ করে তখন সে প্রচণ্ডভাবে হতাশ ও নিরাশ হয়ে পড়ে;’ (সুরা হামিম আস-সাজদা: আয়াত ৪৯)

দুনিয়ার ধন-সম্পদ ও আসবাব-পত্র, সুস্থতা ও শক্তি, সম্মান ও মর্যাদা এবং অন্যান্য পার্থিব নিয়ামত চাইতে মানুষ ক্লান্ত ও বিরক্ত হয় না; বরং অবিরাম চাইতেই থাকে। এখানে ‘মানুষ’ বলতে অধিকাংশ মানুষ উদ্দেশ্য।

কষ্ট পৌঁছলেই, নিরাশ হয়ে পড়ে। অথচ, আল্লাহর খাঁটি বান্দার অবস্থা এর বিপরীত হয়। এরা প্রথমত দুনিয়ার জীবনের সুখ-সামগ্রী চায় না; বরং সর্বদা তারা আখেরাতের চিন্তা-ভাবনাই করে থাকে। দ্বিতীয়ত কষ্ট পৌঁছবার পরও তারা আল্লাহর রহমত এবং তাঁর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ে পড়ে না। বরং পরীক্ষাকেও গুনাহের প্রায়শ্চিত্ত এবং মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ মনে করে থাকে। এই জন্য, নৈরাশ্য তাদের কাছেও পৌঁছতে পারে না।

এ সুরায় মহান আল্লাহ তাআলা আরও ঘোষণা করেন-

وَ لَئِنۡ اَذَقۡنٰهُ رَحۡمَۃً مِّنَّا مِنۡۢ بَعۡدِ ضَرَّآءَ مَسَّتۡهُ لَیَقُوۡلَنَّ هٰذَا لِیۡ ۙ وَ مَاۤ اَظُنُّ السَّاعَۃَ قَآئِمَۃً ۙ وَّ لَئِنۡ رُّجِعۡتُ اِلٰی رَبِّیۡۤ اِنَّ لِیۡ عِنۡدَهٗ لَلۡحُسۡنٰی ۚ فَلَنُنَبِّئَنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا بِمَا عَمِلُوۡا ۫ وَ لَنُذِیۡقَنَّهُمۡ مِّنۡ عَذَابٍ غَلِیۡظٍ

'দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করার পর যদি আমি তাকে অনুগ্রহের আস্বাদ দিই, তাহলে সে অবশ্যই বলবে, ‘এ আমার প্রাপ্য এবং আমি মনে করি না যে, কেয়ামত সংঘটিত হবে। আর আমি যদি আমার প্রতিপালকের কাছে প্রত্যাবর্তিতও হই, তাহলে তাঁর কাছে তো আমার জন্য কল্যাণই থাকবে।’ আমি সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদেরকে ওদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে অবশ্যই অবহিত করব এবং ওদেরকে আস্বাদন করাব কঠিন শাস্তি।' (সুরা হামিম আস-সিজদা : আয়াত ৫০)

আয়াতের ব্যাখ্যায় এসেছে, (নবিজি বলেন) আমি আল্লাহর কাছে প্রিয়। তিনি আমার প্রতি সন্তুষ্ট, এই জন্য তিনি আমাকে তাঁর নেয়ামত দান করেছেন। অথচ পার্থিব ধনবত্তা ও দারিদ্র্য এবং সুখ ও দুঃখ তাঁর সন্তুষ্টি অথবা অসন্তুষ্টির কোনো নিদর্শন নয়। বরং কেবল পরীক্ষার জন্য আল্লাহ এমন করে থাকেন। যার দ্বারা তিনি দেখতে চান যে, তাঁর নেয়ামতের কে শুকরিয়া জ্ঞাপন করে এবং মসিবতে কে ধৈর্য ধারণ করে?

তাই যারা বিশ্বনবির প্রতি ঈমান আনতে অনীহা প্রকাশ করে এবং তার বিরোধীতা করে, তাদের উদ্দেশ্যে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে এ সুরায়। মক্কার কুরাইশদের বিভিন্ন প্রকার লোভনীয় প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সুরা দিয়ে জবাব দিয়েছিলেন। মুমিন এবং কাফেরদের মধ্যে পার্থক্য করা হয়েছে এ সুরায়। এ সুরার শেষ আয়াতে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-

 اَلَاۤ اِنَّهُمۡ فِیۡ مِرۡیَۃٍ مِّنۡ لِّقَآءِ رَبِّهِمۡ ؕ اَلَاۤ اِنَّهٗ بِکُلِّ شَیۡءٍ مُّحِیۡطٌ

'জেনে রাখুন, নিশ্চয় তারা তাদের রাবের সাথে সাক্ষাতের ব্যাপারে সন্দিহান। জেনে রাখুন যে, নিশ্চয় তিনি (আল্লাহ) সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে রয়েছেন।' (সুরা হামিম আস-সিজদা : আয়াত ৫৩)

সুরা শুরা : আয়াত ০১-৫৩

সুরাটি মক্কায় নাজিল হয়। সুরার শুরুতেই ওহির কথা বলা হয়েছে। আর ওহি কিভাবে নাজিল হতো পরিসমাপ্তি তা আলোচিত হয়েছে। এতে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রিসালাতের প্রমাণ, কোরআনের শ্রেষ্ঠত্ব ও মাহাত্ম্য বর্ণনার পর তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘কাফেরদের নির্যাতনে ব্যথিত হবেন না।’ মহান আল্লাহ বান্দার প্রতি সীমাহীন দয়ালু। তিনি কোরআনুল কারিমে তা এভাবে ঘোষণা করেছেন-

 تَکَادُ السَّمٰوٰتُ یَتَفَطَّرۡنَ مِنۡ فَوۡقِهِنَّ وَ الۡمَلٰٓئِکَۃُ یُسَبِّحُوۡنَ بِحَمۡدِ رَبِّهِمۡ وَ یَسۡتَغۡفِرُوۡنَ لِمَنۡ فِی الۡاَرۡضِ ؕ اَلَاۤ اِنَّ اللّٰهَ هُوَ الۡغَفُوۡرُ الرَّحِیۡمُ

আসমানসমূহ উপর থেকে ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়, আর ফেরেশতাগণ তাদের রবের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং জমিনে যারা আছে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। জেনে রাখুন, নিশ্চয়ই আল্লাহ, তিনিই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।' (সুরা শুরা : আয়াত ৫)

সুরার সংক্ষিপ্ত আলোচ্যসূচি তুলে ধরা হলো-

১. নবির পরিবারের সম্মান ও মহব্বত সম্পর্কিত বিষয়;

২. তাওবার স্বরূপ;

৩. দুনিয়াতে সম্পদের প্রাচুর্য ও ধ্বংসের কারণ;

৪. পরামর্শের পন্থা ও গুরুত্ব;

৫. ক্ষমা ও প্রতিশোধ গ্রহণের ফয়সালা প্রসঙ্গ।

সুরা যুখরূফ : আয়াত ০১-৮৯

সুরাটি মাক্কী। অহি ও কোরআনের মাহাত্ম্য বর্ণনায় সুরাটি আরম্ভ করা হয়েছে। কোরআনুল কারিম আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিলকৃত ঘোষণা দিয়েই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়তের প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে। যারা তাঁকে অস্বীকার করে, তাদের উদ্দেশ্যে কঠোর শাস্তির সতর্কবানীও করা হয়েছে।

কোরআনের সত্যতা ও বিশ্বনবির রিসালাতের প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে। কোরআনের অস্বীকারকারীদের শাস্তির বিধান ঘোষণা করা হয়েছে। সুরাটির সংক্ষিপ্ত আলোচ্যসূচি তুলে ধরা হলো-

১. জীবিকা বণ্টনের প্রাকৃতিক পদ্ধতি;

২. সামাজিক সাম্য ও ইসলামিক সাম্যের স্বরূপ;

৩. আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল হওয়ার পরিণতি।

সুরা দুখান : আয়াত ০১-৫৯

বরকতময় রাতে নাজিল হওয়া কোরআনের এ সুরাটি মাক্কী। এতে কোরআনের মর্যাদা, মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্ব আলোচিত হয়েছে। বিশেষ করে এ সুরায় তুব্বা সম্প্রদায়ের কথা আলোচিত হয়েছে। তাদের ইসলাম গ্রহণ এবং পরবর্তীতে ধ্বংস প্রাপ্ত হওয়ার বিবরণও বর্ণিত হয়েছে।

কোরআনসহ আসমানি কিতাব নাজিলের তারিখ

রোজাদার মুসল্লিরা তারাবি শেষে জাহান্নামের আগুন থেকে নিষ্কৃতি চাইবে। আজকের তারাবিতে লাইলাতুল কদর ও কোরআন নাজিল প্রসঙ্গে সুস্পষ্ট ঘোষণা এসেছে এভাবে-

حم وَالْكِتَابِ الْمُبِينِ - إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ - فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ - أَمْرًا مِّنْ عِندِنَا إِنَّا كُنَّا مُرْسِلِينَ - رَحْمَةً مِّن رَّبِّكَ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

হা-মীম। শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের। আমি একে (কোরআন) এক বরকতময় রাতে নাজিল করেছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়। আমার পক্ষ থেকে আদেশক্রমে, আমিই প্রেরণকারী। আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে রহমতস্বরূপ। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা দুখান : আয়াত ১-৬)

গ্ৰহণযোগ্য তাফসিরের তথ্য মতে, এখানে কদরের রাত বোঝানো হয়েছে; যা রমজান মাসের শেষ দশকে হয়। সুরা কদরে স্পষ্টভাবে তা বর্ণিত হয়েছে। কোরআন  লাইলাতুল কদরে নাজিল হয়েছে। এতে বোঝা গেল যে, এখানেও বরকতের রাত বলে লাইলাতুল কদরকেই বোঝানো হয়েছে। এ রাতকে 'মোবারক' বলার কারণ এই যে, এ রাতে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে অসংখ্য কল্যাণ ও বরকত নাজিল হয়। হাদিসে পাকে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, 'দুনিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা পয়গম্বরগণের প্রতি যত কিতাব নাজিল করেছেন, তা সবই রমজান মাসেরই বিভিন্ন তারিখে নাজিল হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ইবরাহিম আলাইহিস সালামের সহিফাসমূহ রমজানের প্রথম তারিখে, তাওরাত ৬ তারিখে, যাবুর ১২ তারিখে, ইঞ্জিল ১৮ তারিখে এবং কোরআন ২৪ তারিখ অতিবাহিত হওয়ার পর (পঁচিশের রাতে) অবতীর্ণ হয়েছে।' (মুসনাদে আহমাদ)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আরও এসেছে, لَيْلَةٌ مُبَارَكَةٌ বরকতময় রাত বলতে لَيْلَةُ الْقَدْرِ কদরের রাতকে বোঝানো হয়েছে। যেমন- অন্যত্র পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে اِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ অর্থাৎ, আমি এ কোরআন লাইলাতুল কদরে (মর্যাদার রাতে) অবতীর্ণ করেছি।' (সুরা কদর)

আর এই লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে কোনো একটি রাত। সুতরাং কোরআন অবতীর্ণ হয় রমজান মাসে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন-

 شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيْ أُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْآنُ

রমজান মাসে কোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে।' (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)

এই আয়াতে কদরের এই রাতকে বরকতময় রাত গণ্য করা হয়েছে। আর এই বরকতময় হওয়াতে সন্দেহই বা কি?

প্রথমত : এ রাতে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে।

দ্বিতীয়ত : এ রাতে বহু ফেরেশতাসহ জিবরিল আমিনও অবতরণ করেন।

তৃতীয়ত : সারা বছরে সংঘটিত হবে এমন ঘটনাবলীর ফায়সালা করা হয়।

চতুর্থত : এই রাতের ইবাদত হাজার মাস (৮৩ বছর ৪ মাস) এর ইবাদতের থেকেও উত্তম।

লাইলাতুল কদর বা বরকতময় রাতে কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার অর্থ হল, এই রাত থেকে নবিজির উপর কোরআন অবতীর্ণ হওয়া আরম্ভ হয়। অর্থাৎ, সর্বপ্রথম এই রাতেই তাঁর উপর কোরআন অবতীর্ণ হয়।

এই রাতে ‘লাওহে মাহফুজ’ থেকে কোরআনকে ‘বায়তুল ইয্‌যাহ’তে অবতীর্ণ করা হয়, যা নিকটতম আসমানে অবস্থিত। এরপর সেখান থেকে প্রয়োজন ও ঘটনার চাহিদা অনুযায়ী দীর্ঘ ২৩ বছরের বিভিন্ন সময়ে নবিজি উপর অবতীর্ণ করা হয়।

কেউ কেউ لَيلَة مُبارَكَة ‘বরকতময় রাত’ বলতে শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাত লাইলাতুল বরাতকে বুঝিয়েছেন। যখন কোরআনের স্পষ্ট উক্তি দ্বারা এ কথা সুসাব্যস্ত যে, কোরআন লাইলাতুল কদরে অবতীর্ণ হয়েছে, তখন এ থেকে লাইলাতুল বরাত অর্থ নেওয়া কোনভাবেই ঠিক নয়।

সুরা জাসিয়া : আয়াত ০১-৩৭

সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ। এ সুরার মূল বিষয়বস্তু হলো মানুষের আক্বিদা বিশ্বাসের সংশোধন সম্পর্কিত আলোচনা। তাই এতে তাওহিদ, রেসালাত, পরকালের প্রমাণ উপস্থাপিত হয়েছে। কাফের অবিশ্বাসীদের সন্দেহের অবসানে প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে। সর্বোপরি তামাম সৃষ্টি জগতের মহিমা শুধুই মহান আল্লাহর। এ  সুরার শেষ আয়াতে মহান আল্লাহ ঘোষণা সে কথাই ঘোষণা করেন-

وَ لَهُ الۡکِبۡرِیَآءُ فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ۪ وَ هُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ

'আর আসমানসমূহ ও জমিনের যাবতীয় গৌরব-গরিমা তারই) এবং তিনি মহা পরাক্রমশালী, হিকমতওয়ালা।' (সুরা জাসিয়া : আয়াত ৩৭)

এটি মহান আল্লাহর গুণ। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তা এভাবে এসেছে-

১. হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘গৌরব ও গর্ব খাস আমার গুণ। সুতরাং যে তাতে আমার অংশী হতে চাইবে আমি তাকে শাস্তি দেব।’ (মুসলিম)

২. নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, 'বড়ত্ব আমার বস্ত্র আর অহংকার আমার চাদর; যে কেউ এ দুইটির কোনো একটি নিয়ে টানাহেঁচড়া করবে, আমি তাকে জাহান্নামের অধিবাসী করে ছাড়বো।' (মুসলিম)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআনের এ গুরুত্বপূর্ণ সুরাগুলো বুঝে পড়ার এবং তাঁর ওপর আমল করার পাশাপাশি নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসকে শিরকমুক্ত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।