রমজানের শেষ দশকে যেসব আমল করবেন

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৪৪ পিএম, ১৩ এপ্রিল ২০২৩

পাপ মোচনের মাস রমজান। জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির মাস রমজান। ক্ষমা পাওয়ার মাসও এটি। এ মাসে আল্লাহ তাআলা ক্ষমার দুয়ার অবারিত করেন। রোজার বিনিময়ে বান্দার বিগত জীবনের গুনাহ মাফ করেন। তারাবিহ আদায়েও বিগত জীবনের গুনাহ মাফ করে দেন।

এ মাসে অন্যকে সেহরি-ইফতারে শরিক করালে দেন ক্ষমার সঙ্গে অবারিত নেকি। তাই রমজানের প্রতিটি মুহূর্তই বরকতপূর্ণ ও ক্ষমা পাওয়ার সুবর্ণ সময়। তবে রমজানের শেষ দশক আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কিন্তু শেষ দশকে কোন আমল বেশি করবেন?

১. শেষ দশকে ইতেকাফ করা

শেষ দশকের ইতেকাফ নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত আমল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ দশকে ইতেকাফের আমল দিয়েছেন। গুরুত্বের সঙ্গে অন্যকেও আমল করে শিখিয়েছেন। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন।’ (বুখারি ২০২৫)

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন। আর বলতেন, তোমরা এ দশকে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করো।’ (বুখারি ২০২০)

তিনি আরও বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ইন্তেকাল পর্যন্ত রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করেছেন, তারপর তার স্ত্রীগণও ইতেকাফ করেছেন।’ (বুখারি ২০২৬)

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওফাতের বছরে বিশদিন ইতেকাফ করেন।’ (বুখারি ২০৪৪)

২. খাঁটি অন্তরে তওবা করা ও দোয়া পড়া

মানুষের গুনাহ সংঘটিত হওয়া খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু আল্লাহর কাছে ওই বান্দা সবচেয়ে বেশি প্রিয়, যে গুনাহ হয়ে গেলে আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে এবং আর কখনও গুনাহ না করার দৃঢ় সঙ্কল্প করে। এটাই প্রকৃত তওবা। তাই তওবা করার পর তওবার নিয়তে দু’রাকাত নামাজ পড়া উত্তম। পাশাপাশি গুনাহমুক্ত জীবনের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত জায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি এ দোয়া পড়ে, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়; যদি সে রণক্ষেত্রও থেকে পলায়ন করে থাকে; দোয়াটি হলো-

أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الْعَظِيْم الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ

উচ্চারণ: ‘আসতাগফিরুল্লাহাল আজিম, আল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।’

অর্থ: ‘মহান আল্লাহর কাছে আমি ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই; যিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং আমি তাঁর কাছে তওবা করি।’ (তিরমিজি ৩৫৭৭)

৩. শবে কদর তালাশ করা ও দোয়া পড়া

শেষ দশকের ইবাদতের অন্যতম হলো, শবে কদর তালাশ করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কদর রাতের সন্ধান পেতে চায়, সে যেন রমজানের শেষ দশকে খুঁজে নেয়।’ (বুখারি ১১৫৮)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করো।’ (বুখারি ২০১৭)

অন্য হাদিসে বলেন, ‘এ রাত হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। যে এর কল্যাণ অর্জন করতে পারবে না, তার সব কল্যাণই হাতছাড়া হয়। সত্যিকার হতভাগা ছাড়া আর কেউ এর কল্যাণ বঞ্চিত হয় না।’ (ইবনে মাজাহ: ১৬৪৪)

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন, যদি আমি শবে কদর পেয়ে যাই, তাহলে কী দোয়া করব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-

اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাআফু আন্নি।’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আপনি ক্ষমাকারী, ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। অতএব, আমায় ক্ষমা করুন।’ (তিরমিজি ৩৫১৩)

৪. ইবাদতের জোর প্রস্তুতি নেওয়া

রমজান মাসের সবচেয়ে গুরুত্ববহ ও আবেদনময় সময় হলো শেষ দশক। এ সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইবাদত-বন্দেগি হতো বছরের অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এমনকি রমজানের প্রথম বিশদিন থেকেও আলাদা বোঝা যেত শেষ দশদিনের ইবাদত-নিমগ্নতা। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশকে এত বেশি ইবাদত করতেন, যা বছরের অন্য সময়ে করতেন না।’ (মুসলিম ১১৭৫)

তিনি আরও বলেন, ‘যখন রমজানের শেষ দশক আসত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবাদতের জোর প্রস্তুতি নিতেন। নিজে রাত জাগরণ করতেন। পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে তুলতেন।’ (বুখারি ২০২৪)

৫. সদকাতুল ফিতর আদায় করা

শেষ দশকের অন্যতম আরেকটি আমল হলো, সদকাতুল ফিতর আদায় করা। সামর্থ্যবান প্রতিজন নারী-পুরুষ ছোট-বড় সবার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটা আবশ্যক করেছেন। সেই সঙ্গে নির্দেশ করেছেন, যেন তা ঈদুল ফিতরের নামাজের আগেই আদায় করা হয়। (বুখারি ১৫০৩

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সদকাতুল ফিতর নির্ধারণ করেছেন; যাতে এটা রোজাদারের রোজার বিচ্যুতি তথা অনর্থক কথা-কাজ ও অশালীন আচরণের ক্ষতিপূরণ হয়। আর অসহায় মানুষের খাবারের সুন্দর ব্যবস্থা হয়।’ (আবু দাউদ ১৬০৯)

হজরত আবু সাইদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে আমরা ঈদুল ফিতরের দিনে খাদ্যদ্রব্যের এক সা অথবা এক সা যব কিংবা এক সা খেজুর অথবা এক সা পনির, অথবা এক সা কিসমিস সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম।’ (বুখারি ১৫০৫)

সদকাতুল ফিতর আদায়ে সামর্থ্যবানদের উচিত, ফিতরার সর্বনিম্ন হারকে নিজেদের জন্য গ্রহণ না করে, ফিতরার উচ্চ হারগুলো প্রতিষ্ঠিত করা। যাতে সমাজের অসহায় মানুষরা বেশি লাভবান হয়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব রোজাদারকে রমজানের শেষ দশকে এ আমলগুলো বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন। লাইলাতুল কদর পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও নাজাত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।