দক্ষিণ আফ্রিকার ‘মান কাইকার’রা ঈদের ঘোষণা দেয়
মহিমান্বিত মাস রমজান। এ মাসকে ঘিরে বিশ্বব্যাপী রয়েছে নানা অনুষ্ঠান আর রীতি-রেওয়াজ। সারাদিন রোজা রেখে সন্ধ্যায় বাহারি ইফতার, ইফতারের পর তারাবিহের নামাজ পড়া ইত্যাদি ছাড়াও আনন্দ-উৎসব করার মাধ্যমেও সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয় রমজানের খুশির আমেজ। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের চেয়েও এসব রীতি সাংস্কৃতিক উদযাপন হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। দক্ষিণ আফ্রিকা একটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। সেখানকার মুসলিমরা মানবসেবার মধ্য দিয়ে বরকতময় মাস রমজানের রোজা পালন করে থাকেন।
ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি
বরকতময় রমজান দক্ষিণ আফ্রিকার একটি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সেতুবন্ধন। বিভিন্ন শ্রেণি-গোষ্ঠির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সম্মিলনে দেশটিতে বর্ণিলভাবে রমজান উদযাপিত হয়। ইফতার, তারাবিহ ও সেহরিসহ সবকিছুতেই চোখে পড়ে হরেক রকম আয়োজন ও উপস্থাপনা।
রমজানের প্রস্তুতি
দেশটির ইসলামি সেন্টারগুলো রমজানের পবিত্রতা, গুরুত্ব ও ফজিলত সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের প্রকাশনা ও সাময়িকী বের করে। তা মুসলিমদের মাঝে বিতরণ করা হয়। মসজিদগুলোতে নেওয়া হয় ইফতার ও তারাবিহের ব্যাপক প্রস্তুতি।
তারাবিহ নামাজের জামাত
রমজানে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিটি মসজিদেই তারাবিহ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। দুই শতাধিক মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় খতমে তারাবিহ। নারীরাও মসজিদের বাইরে ভিন্ন জামাতে তারাবিহের নামাজ আদায় করেন। যেখানে মসজিদ নেই, সেখানেও ইসলামি সেন্টারগুলোর উদ্যোগে কোনো হল, কমিউনিটি সেন্টার বা বাড়ি ভাড়া করে তারাবিহের জামাতের ব্যবস্থা করা হয়।
অন্যায় পরিহার
রমজানে দক্ষিণ আফ্রিকার মুসলিমগণ সর্বতভাবে অনর্থ, পাপ ও অন্যায় পরিহার করে চলেন। এমনকি নাটক, সিনেমা ও নিছক বিনোদনমূলক টিভি সিরিয়ালগুলো দেখেন না তারা।
রমজানের বিশেষ আমল
দেশটির প্রতিটি পরিবারে গুরুত্বের সঙ্গে পবিত্র কোরআনে কারিমের খতম করা হয়। রমজান মাসে সাউথ আফ্রিকানরা আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করেন। মরহুম আত্মীয়দের কবর জেয়ারত করে মৃতদের জন্য দোয়া করে থাকেন।
সমাজসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ
দক্ষিণ আফ্রিকার মুসলিম সংগঠনগুলো রমজানের আগ থেকেই সমাজসেবামূলক কাজের জন্য প্রস্তুতি নেয়। স্থানীয় ধনী ও আরব শায়খদের সহযোগিতায় তারা আফ্রিকার দারিদ্র্যপীড়িত বিভিন্ন দেশে ইফতার ও সেহরির ব্যবস্থা করে। প্রতি বছর রমজানে তারা দশ লক্ষাধিক মানুষকে আহার করায়। পাঁচ লাখ মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, চিকিৎসা প্রদান ও ওষুধ বিতরণ করে। স্থানীয় পর্যায়ে ও দরিদ্র্য এলাকার মসজিদসমূহে সাধারণ মানুষের জন্য ইফতার ও সেহরির ব্যবস্থা করা হয়।
মুসলিম সোসাইটি অব সাউথ আফ্রিকা
রহমত, বরকত ও মাগফেরাতের মাসে বাংলাদেশ মুসলিম সোসাইটি অব সাউথ আফ্রিকা নামে বাংলাদেশি প্রবাসীদের একটি সংগঠন নানা উদ্যোগ নিয়ে থাকে। অসহায় গরীব-দুঃখীদের মাঝে জাকাত ও ইফতার সামগ্রী বিতরণ করে নিয়মিত। এ ছাড়া পুরো রমজানজুড়ে তাদের বেশ কিছু পরিকল্পনা হাতে থাকে। তাহলো- ৪টি মসজিদে প্রতিদিন প্রায় ৭০০-এর অধিক মুসলমানদের জন্য ইফতারের ব্যবস্থা, প্রায় ২৪০ জনের অধিক অসহায় ও দরিদ্র মুসলিমদের মাঝে জাকাত ও ইফতার বিতরণ, বয়স্কদের জন্য বিভিন্ন স্থানে বিনামূল্যে কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা এবং ব্যবসায়ী ও বিশিষ্টজনদের সম্মানে ইফতারের আয়োজন করা হয়।
ঈদের ঘোষণা
শাওয়ালের চাঁদ দেখার মধ্য দিয়ে ঈদুল ফিতর ঘোষিত হয়। সাউথ আফ্রিকায় ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা গেছে, এই ঘোষণা করতে পারেন ‘মান কাইকার’রা। আফ্রিকান ভাষায় ‘মান কাইকার’ অর্থ, চাঁদের পর্যবেক্ষক। দক্ষিণ আফ্রিকাজুড়ে মুসলমানরা প্রধান শহর কেপটাউনে নতুন চাঁদ দেখার অনুষ্ঠানে যায়। তবে শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার মুসলিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কর্তৃক নিযুক্ত মান কাইকাররা আনুষ্ঠানিকভাবে চাঁদ দেখার ঘোষণা দিতে পারেন।
সি পয়েন্ট প্রোমেনাডে থ্রি অ্যাঙ্কর বে বা সিগন্যাল হিলের ওপরে তীরে দাঁড়িয়ে মুসলিম সম্প্রদায়কে তারাই জানাতে পারেন, ‘ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা গেছে।’ এ ক্ষেত্রেও শর্ত আছে, চাঁদটি অবশ্যই খালি চোখে দেখা যেতে হবে। সবাই মিলে চাঁদ দেখার মাধ্যমে কেপটাউন তথা সাউথ আফ্রিকাবাসী সামাজিক সৌহার্দ্য বিনিময় করে। ঈদ উদযাপনে মেতে ওঠে।
এমএমএস/এমএস