তারাবিহের আলোচনা

নেক আমলের বিনিময়ে মিলবে দ্বিগুণ সওয়াব ও সম্মানজনক রিজিক

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:০৬ পিএম, ১০ এপ্রিল ২০২৩

আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য এবং নেক আমলের দ্বিগুণ সওয়াব পাওয়ার বর্ণনায় শুরু হবে ১৪৪৪ হিজরির ১৯তম তারাবিহ। আজকের তারাবিহতে সুরা আহযাব (৩১-৭৩), সুরা সাবা (৫৪), সুরা ফাতির (৪৫) এবং সুরা ইয়াসিন (১-২১) পড়া হবে। সে সঙ্গে ২২তম পারার তেলাওয়াত শেষ হবে। নেক আমলের বিনিময়ে দ্বিগুণ সওয়াব ও সম্মানজনক জীবিকা পাওয়ার ঘোষণায় শুরু হবে আজকের তারাবিহ। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَ مَنۡ یَّقۡنُتۡ مِنۡکُنَّ لِلّٰهِ وَ رَسُوۡلِهٖ وَ تَعۡمَلۡ صَالِحًا نُّؤۡتِهَاۤ اَجۡرَهَا مَرَّتَیۡنِ ۙ وَ اَعۡتَدۡنَا لَهَا رِزۡقًا کَرِیۡمًا

‘আর তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করবে এবং নেক আমল করবে আমি তাকে দু’বার তার প্রতিদান দেব এবং আমি তার জন্য প্রস্তুত রেখেছি সম্মানজনক জীবিকা।’ (সুরা আহযাব: আয়াত ৩১)

সুরা আহযাব (৩১-৭৩)

সুরা আহযাব মদিনায় অবতীর্ণ। আহযাব মানে দল, যেহেতু কাফেররা পঞ্চম হিজরিতে যুক্তফ্রন্ট করে ঐক্যবদ্ধভাবে মুসলমানদের হৃদয়ে স্পন্দন মদিনার ইসলামি রাষ্ট্রকে সমূলে বিনষ্ট করার মানসে আক্রমণ করেছিল। এ সুরায় সেই যুদ্ধের আলোচনাই বর্ণনা করা হয়েছে। সুরাটি ৯ রুকু এবং ৭৩ আয়াতে সুবিন্যস্ত। এ সুরার প্রথমাংশে আল্লাহ তাআলা প্রিয়নবিকে কয়েকটি উপদেশ দিয়েছিলেন। যা আল্লাহর পক্ষ থেকে বিজয় লাভের পূর্বশর্ত ছিল। এ সুরার আলোচ্য বিষয়গুলো হলো-

আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্যকারীদের জন্য রয়েছে নেক আমলের বিনিময় হিসেবে দ্বিগুণ সওয়াব এবং সম্মানজনক জীবিকা। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَ مَنۡ یَّقۡنُتۡ مِنۡکُنَّ لِلّٰهِ وَ رَسُوۡلِهٖ وَ تَعۡمَلۡ صَالِحًا نُّؤۡتِهَاۤ اَجۡرَهَا مَرَّتَیۡنِ ۙ وَ اَعۡتَدۡنَا لَهَا رِزۡقًا کَرِیۡمًا

'তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অনুগত হবে এবং সৎকর্ম করবে, আমি তাকে দুবার পুরস্কার দেব এবং তার জন্য আমি সম্মান জনক রিযিক প্রস্তুত রেখেছি।' (সুরা আহযাব : আয়াত ৩১)

নেককার স্ত্রীদের প্রতি বিশেষ হেদায়েত ও নিজ গৃহে অবস্থানকালীন সময়ে করণীয় বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

یٰنِسَآءَ النَّبِیِّ لَسۡتُنَّ کَاَحَدٍ مِّنَ النِّسَآءِ اِنِ اتَّقَیۡتُنَّ فَلَا تَخۡضَعۡنَ بِالۡقَوۡلِ فَیَطۡمَعَ الَّذِیۡ فِیۡ قَلۡبِهٖ مَرَضٌ وَّ قُلۡنَ قَوۡلًا مَّعۡرُوۡفًا   وَ قَرۡنَ فِیۡ بُیُوۡتِکُنَّ وَ لَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ الۡجَاهِلِیَّۃِ الۡاُوۡلٰی وَ اَقِمۡنَ الصَّلٰوۃَ وَ اٰتِیۡنَ الزَّکٰوۃَ وَ اَطِعۡنَ اللّٰهَ وَ رَسُوۡلَهٗ ؕ اِنَّمَا یُرِیۡدُ اللّٰهُ لِیُذۡهِبَ عَنۡکُمُ الرِّجۡسَ اَهۡلَ الۡبَیۡتِ وَ یُطَهِّرَکُمۡ تَطۡهِیۡرًا

'হে নবী পত্নীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে সেই ব্যক্তি কুবাসনা করে, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে। তোমরা ঘরের ভেতরে অবস্থান করবে, অজ্ঞতার যুগের অনুরূপ নিজেদের প্রদর্শন করবে না। নামাজ প্রতিষ্ঠা করবে, জাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করবে। হে নবি পরিবারের সদস্যবর্গ। আল্লাহ কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে।' (সুরা আহযাব : আয়াত৩২-৩৩)

আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমাদের বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদা সাধারণ নারীদের মত নয়; বরং আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে রাসুল-পত্নী হওয়ার সৌভাগ্য দান করেছেন, যার ফলে তোমরা এক উচ্চস্থান ও মর্যাদার অধিকারিণী, তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়অ সাল্লামের মত তোমাদেরকেও উম্মতের জন্য আদর্শবতী হতে হবে। এখানে নবী-পত্নীগণকে তাঁদের উচ্চস্থান ও মর্যাদার কথা স্মরণ করিয়ে তাঁদেরকে কিছু দিকনির্দেশনা দান করা হচ্ছে। এ সব নির্দেশাবলীতে সম্বোধন যদিও পবিত্রা স্ত্রীগণকে করা হয়েছে, যাঁদের প্রত্যেককে ‘উম্মুল মুমিনিন’ (মুমিনদের মা) বলা হয়েছে, তবুও বর্ণনা ভঙ্গীতে প্রকাশ পাচ্ছে যে, উদ্দেশ্য সমগ্র মুসলিম নারীকে বোঝানো ও সতর্ক করা। অতএব উক্ত নির্দেশাবলী সমগ্র মুসলিম নারীর জন্য মান্য ও পালনীয়।

আল্লাহ তাআলা যেরূপভাবে নারী জাতির দেহ-বৈচিত্রে পুরুষের জন্য যৌন আকর্ষণ সৃষ্টি করেছেন (যা থেকে হেফাজতের বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে নারী পুরুষের জন্য ফেতনার কারণ না হয়ে পড়ে) অনুরূপভাবে তিনি নারীদের কণ্ঠস্বরেও প্রকৃতিগতভাবে মন কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা, কোমলতা ও মধুরতা রেখেছেন, যা পুরুষকে নিজের দিকে আকর্ষণ করতে থাকে। সুতরাং সেই কণ্ঠস্বর ব্যবহার করার ব্যাপারেও এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, পরপুরুষের সঙ্গে বাক্যালাপের সময় ইচ্ছাপূর্বক এমন কণ্ঠ ব্যবহার করবে, যাতে কোমলতা ও মধুরতার পরিবর্তে সামান্য শক্ত ও কঠোরতা থাকে। যাতে ব্যাধিগ্রস্ত অন্তরবিশিষ্ট লোক কণ্ঠের কোমলতার কারণে তোমাদের দিকে আকৃষ্ট না হয়ে পড়ে এবং তাদের মনে কুবাসনার সঞ্চার না হয়।

এই কর্কশতা ও কঠোরতা শুধু কণ্ঠস্বরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, অর্থাৎ মুখে এমন বাক্য আনবে না, যা অসঙ্গত ও সচ্চরিত্রতার পরিপন্থী। إِنِ اتَّقَيْتُنَّ (যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর) বলে আল্লাহ তাআলা ইঙ্গিত করেছেন যে, এই কথা এবং অন্যান্য নির্দেশাবলী যা সামনে বর্ণনা করা হবে, তা মুত্তাক্বী নারীদের জন্য (যারা আল্লাহকে ভয় করে)। কারণ তাদেরই আশঙ্কা থাকে যে, যাতে তাদের আখেরাত বরবাদ না হয়ে যায়। পক্ষান্তরে যাদের হৃদয় আল্লাহর ভয়শূন্য তাদের সঙ্গে এই নির্দেশাবলীর কোনো সম্পর্ক নেই। তারা কখনোও এর পরোয়া করবে না।

যেসব নারী পুরুষের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও পুরস্কার সে কথা বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-

اِنَّ الۡمُسۡلِمِیۡنَ وَ الۡمُسۡلِمٰتِ وَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ الۡمُؤۡمِنٰتِ وَ الۡقٰنِتِیۡنَ وَ الۡقٰنِتٰتِ وَ الصّٰدِقِیۡنَ وَ الصّٰدِقٰتِ وَ الصّٰبِرِیۡنَ وَ الصّٰبِرٰتِ وَ الۡخٰشِعِیۡنَ وَ الۡخٰشِعٰتِ وَ الۡمُتَصَدِّقِیۡنَ وَ الۡمُتَصَدِّقٰتِ وَ الصَّآئِمِیۡنَ وَ الصّٰٓئِمٰتِ وَ الۡحٰفِظِیۡنَ فُرُوۡجَهُمۡ وَ الۡحٰفِظٰتِ وَ الذّٰکِرِیۡنَ اللّٰهَ کَثِیۡرًا وَّ الذّٰکِرٰتِ ۙ اَعَدَّ اللّٰهُ لَهُمۡ مَّغۡفِرَۃً وَّ اَجۡرًا عَظِیۡمًا

'নিশ্চয়ই মুসলমান পুরুষ, মুসলমান নারী, ঈমানদার পুরুষ, ঈমানদার নারী, অনুগত পুরুষ, অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ, সত্যবাদী নারী, ধৈর্য্যশীল পুরুষ, ধৈর্য্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ, বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ, দানশীল নারী, রোযা পালণকারী পুরুষ, রোযা পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী পুরুষ, , যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী নারী, আল্লাহর অধিক যিকরকারী পুরুষ ও যিকরকারী নারী-তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরষ্কার। ' (সুরা আহযাব : আয়াত ৩৫)

একদিন হজরত উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা এবং অন্যান্য নারী সাহাবিগণ বললেন যে, কি ব্যাপার, আল্লাহ তাআলা সর্বস্থানে নারীদের ছেড়ে কেবল পুরুষদেরই সম্বোধন করেন। তখন এই আয়াতটি অবতীর্ণ হল। (মুসনাদে আহমদ ৬/৩০১, তিরমিজি ৩২১১)

এতে নারীদের মন জয় করা হয়েছে। তাছাড়া সকল আহকামে পুরুষদের সঙ্গে নারীরাও শামিল, শুধু তাদের কিছু বিশেষ আহকাম ছাড়া যা তাদেরই জন্য নির্দিষ্ট। এই আয়াত ও অন্যান্য আয়াতসমূহ দ্বারা পরিষফুটিত হয় যে, ইবাদত ও আল্লাহর আনুগত্য এবং পরকালের মান-মর্যাদায় পুরুষ ও নারীর মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। উভয়ের জন্য একই ভাবে সে ময়দান খোলা আছে এবং উভয়েই বেশি বেশি নেকী ও সওয়াব অর্জন করতে পারে। কেবল জাতিভেদে তাদের মাঝে কোন কম-বেশি করা হবে না। এ ছাড়া মুসলমান ও মুমিনের পৃথক পৃথক বর্ণনা করাতে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে, এই দুই-এর মাঝে পার্থক্য আছে। ঈমানের স্থান ইসলামের ঊর্ধ্বে। যেমন- কোরআন ও হাদিসের অন্যান্য দলীল দ্বারা তাই প্রমাণ হয়।

বিয়ে শাদিতে কুফু তথা সমতা রক্ষার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তাছাড়া পোষ্য পুত্রের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে বিয়ের বৈধতারে বিষয়ও বর্ণিত হয়েছে এ সুরায়। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَ اِذۡ تَقُوۡلُ لِلَّذِیۡۤ اَنۡعَمَ اللّٰهُ عَلَیۡهِ وَ اَنۡعَمۡتَ عَلَیۡهِ اَمۡسِکۡ عَلَیۡکَ زَوۡجَکَ وَ اتَّقِ اللّٰهَ وَ تُخۡفِیۡ فِیۡ نَفۡسِکَ مَا اللّٰهُ مُبۡدِیۡهِ وَ تَخۡشَی النَّاسَ ۚ وَ اللّٰهُ اَحَقُّ اَنۡ تَخۡشٰهُ ؕ فَلَمَّا قَضٰی زَیۡدٌ مِّنۡهَا وَطَرًا زَوَّجۡنٰکَهَا لِکَیۡ لَا یَکُوۡنَ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ حَرَجٌ فِیۡۤ اَزۡوَاجِ اَدۡعِیَآئِهِمۡ اِذَا قَضَوۡا مِنۡهُنَّ وَطَرًا ؕ وَ کَانَ اَمۡرُ اللّٰهِ مَفۡعُوۡلًا

'আল্লাহ যাকে অনুগ্রহ করেছেন; আপনিও যাকে অনুগ্রহ করেছেন; তাকে যখন আপনি বলেছিলেন, তোমার স্ত্রীকে তোমার কাছেই থাকতে দাও এবং আল্লাহকে ভয় কর। আপনি অন্তরে এমন বিষয় গোপন করছিলেন, যা আল্লাহ পাক প্রকাশ করে দেবেন আপনি লোকনিন্দার ভয় করেছিলেন অথচ আল্লাহকেই অধিক ভয় করা উচিত। অতঃপর যায়েদ যখন যয়নবের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করল, তখন আমি তাকে আপনার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করলাম যাতে মুমিনদের পোষ্যপুত্ররা তাদের স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলে সেসব স্ত্রীকে বিবাহ করার ব্যাপারে মুমিনদের কোনো অসুবিধা না থাকে। আল্লাহর নির্দেশ কার্যে পরিণত হয়েই থাকে।' (সুরা আহযাব : আয়াত ৩৭)

‘স্মরণ করুন যখন আল্লাহ ও আপনি নিজে যার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, তাকে বলছিলেন যে, তুমি নিজের স্ত্রীকে তোমার বিবাহাধীনে থাকতে দাও।’ এ ব্যক্তি হলো হজরত যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু। আল্লাহ তাকে ইসলামে দীক্ষিত করে তার প্রতি প্রথম অনুগ্রহ প্ৰদৰ্শন করেন। হজরত যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু যায়নাব রাদিয়াল্লাহু আনহার সম্পর্কে ভাষাগত শ্রেষ্ঠত্ব, গোত্ৰগত কৌলিন্যভিমান এবং আনুগত্য ও শৈথিল্য প্রদর্শনের অভিযোগ উত্থাপন করতেন। হজরত যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে এসব অভিযোগ পেশ করতে গিয়ে যায়নাবকে তালাক দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, ‘নিজ স্ত্রীকে তোমার বিবাহধীনে থাকতে দাও এবং আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর।’ (বাগভি; ফাতহুল কাদির; তাবারি)

কিন্তু যেহেতু তাঁদের মন-মানসিকতায় পার্থক্য ছিল, স্ত্রীর মনে বংশ-মর্যাদা ও আভিজাত্য বাসা বেঁধেই ছিল, অন্য দিকে যায়েদের সমভ্রমে ছিল দাসত্বের দাগ। ফলে তাঁদের আপোসে কলহ লেগেই থাকত, যা যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু মাঝে মাঝে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে প্রকাশ করতেন এবং তালাক দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করতেন। কিন্তু নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে তালাক দিতে নিষেধ করতেন ও কোনো রকম চালিয়ে নেওয়ার জন্য বলতেন।

অপর দিকে আল্লাহ তাআলা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অহির মাধ্যমে এই ভবিষ্যদ্বাণী করে দিয়েছিলেন যে, যায়েদের পক্ষ থেকে তালাক হবে এবং তারপর যয়নাবের সঙ্গে আপনার বিয়ে হবে; যাতে জাহেলিয়াতের পোষ্যপুত্র রাখার প্রথার উপর জোর কুঠারাঘাত হেনে প্রকাশ করে দেওয়া হবে যে, শরিয়তের দৃষ্টিতে পোষ্যপুত্র আপন পুত্রের মত নয় এবং তার তালাক দেওয়া স্ত্রীকে বিবাহ করা বৈধ। উক্ত আয়াতে এই কথার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

হজরত যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর উপর আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ এই ছিল যে, তিনি তাঁকে দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করার তাওফিক দান করেন এবং দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করেন। আর নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তাঁর প্রতি দয়া এই ছিল যে, তিনি তাঁকে দ্বীনী তরবিয়ত দান করেন ও তাঁকে স্বাধীন করে আপন পুত্র বানিয়ে নেন এবং আপন ফুফু উমাইমা বিনতে আব্দুল মুত্তালেবের মেয়ের সঙ্গে তাঁর বিবাহ সম্পন্ন করেন। অন্তরে গোপন করা কথা তাই ছিল, যা তাঁকে যয়নাবের সঙ্গে তাঁর নিজের বিয়ের ব্যাপারে অহি দ্বারা জানানো হয়েছিল।

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই কথার ভয় করতেন যে, লোকে বলবে, ছেলের স্ত্রীকে (পুত্রবধূকে) বিয়ে করে নিয়েছে। অথচ যখন আল্লাহ তাঁর দ্বারা এই প্রথার মূল উৎপাটন করতে চান, তখন মানুষকে ভয় করার কোনো প্রয়োজন ছিল না। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যদিও এটা প্রকৃতিগত ভয় ছিল, তবুও তাঁকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। প্রকাশ করার অর্থ হল যে, এ বিবাহ হবে, যাতে এ ব্যাপারে সকলে অবগত হয়ে যায়।

বিয়ের পর তালাক দিল এবং যয়নাব ইদ্দত পূর্ণ করল। এ বিয়ে স্বয়ং আল্লাহ পাকের আদেশে সাধারণ বিয়ে-শাদীর প্রচলিত নিয়ম ও শর্তাবলী থেকে ব্যতিক্রম ভাবে সুসম্পন্ন হয়। অর্থাৎ ঈজাব-কবুল, অলী (অভিভাবক), মোহর এবং কোন সাক্ষী ছাড়াই। এটি হল যয়নাবের সঙ্গে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিয়ের কারণ। আর তা এই যে, আগামীতে কোনো মুসলিম যেন এই ব্যাপারে কোনো সংকীর্ণতা বোধ না করে এবং প্রয়োজনে পোষ্যপুত্রের তালাক দেওয়া স্ত্রীকে বিবাহ করতে পারে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসুল। অধিকমাত্রায় আল্লাহর স্মরণ করার নির্দেশ এবং জিকিরের ফজিলত বর্ণণা করা হয়েছে এ সুরায়। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-

مَا کَانَ مُحَمَّدٌ اَبَاۤ اَحَدٍ مِّنۡ رِّجَالِکُمۡ وَ لٰکِنۡ رَّسُوۡلَ اللّٰهِ وَ خَاتَمَ النَّبِیّٖنَ ؕ وَ کَانَ اللّٰهُ بِکُلِّ شَیۡءٍ عَلِیۡمًا   یٰۤاَیُّهَاالَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اذۡکُرُوا اللّٰهَ ذِکۡرًا کَثِیۡرًا وَّ سَبِّحُوۡهُ بُکۡرَۃً وَّ اَصِیۡلًا  هُوَ الَّذِیۡ یُصَلِّیۡ عَلَیۡکُمۡ وَ مَلٰٓئِکَتُهٗ لِیُخۡرِجَکُمۡ مِّنَ الظُّلُمٰتِ اِلَی النُّوۡرِ ؕ وَ کَانَ بِالۡمُؤۡمِنِیۡنَ رَحِیۡمًا

'মুহাম্মদ তোমাদের কোনো ব্যক্তির পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসুল এবং শেষ নবি। আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত। মুমিনগণ তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর। আর সকাল-বিকাল আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা কর। তিনিই তোমাদের প্রতি রহমত করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণও রহমতের দোয়া করেন-অন্ধকা র থেকে তোমাদেরকে আলোকে বের করার জন্য। তিনি মুমিনদের প্রতি পরম দয়ালু।' (সুরা আহযাব : আয়াত ৪০-৪৩)

যারা সকাল-সন্ধ্যায় অধিকমাত্রায় আল্লাহকে স্মরণ করবে; তাদের প্রতি আল্লাহ তাআলা অনুগ্রহ দান করবেন; ফেরেশতারাও তাদের জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

تَحِیَّتُهُمۡ یَوۡمَ یَلۡقَوۡنَهٗ سَلٰمٌ ۖۚ وَ اَعَدَّ لَهُمۡ اَجۡرًا کَرِیۡمًا

'যেদিন আল্লাহর সাথে মিলিত হবে; সেদিন তাদের অভিবাদন হবে সালাম। তিনি তাদের জন্যে সম্মানজনক পুরস্কার প্রস্তুত রেখেছেন।' (সুরা আহযাব : আয়াত ৪৪)

বিয়ে শাদি সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও বিধান আলোচনা করা হয়েছে এ সুরায়। যদি কোনো নারীকে বিয়ে করার পর তাদেরকে স্পর্শ করার আগেই তালাক প্রদান করে; সেক্ষেত্রে তাদের জন্য কোনো ইদ্দত পালনের প্রয়োজন হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نَکَحۡتُمُ الۡمُؤۡمِنٰتِ ثُمَّ طَلَّقۡتُمُوۡهُنَّ مِنۡ قَبۡلِ اَنۡ تَمَسُّوۡهُنَّ فَمَا لَکُمۡ عَلَیۡهِنَّ مِنۡ عِدَّۃٍ تَعۡتَدُّوۡنَهَا ۚ فَمَتِّعُوۡهُنَّ وَ سَرِّحُوۡهُنَّ سَرَاحًا جَمِیۡلًا

'মুমিনগণ! তোমরা যখন মুমিন নারীদেরকে বিবাহ কর, অতঃপর তাদেরকে স্পর্শ করার পূর্বে তালাক দিয়ে দাও, তখন তাদেরকে ইদ্দত পালনে বাধ্য করার অধিকার তোমাদের নাই। অতঃপর তোমরা তাদেরকে কিছু দেবে এবং উত্তম পন্থায় বিদায় দেবে।' (সুরা আহযাব : আয়াত ৪৯)

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য যাদের সঙ্গে বিবাহ বৈধ তাদের বর্ণনায় আল্লাহ তাআলা বলেন-

یٰۤاَیُّهَا النَّبِیُّ اِنَّاۤ اَحۡلَلۡنَا لَکَ اَزۡوَاجَکَ الّٰتِیۡۤ اٰتَیۡتَ اُجُوۡرَهُنَّ وَ مَا مَلَکَتۡ یَمِیۡنُکَ مِمَّاۤ اَفَآءَ اللّٰهُ عَلَیۡکَ وَ بَنٰتِ عَمِّکَ وَ بَنٰتِ عَمّٰتِکَ وَ بَنٰتِ خَالِکَ وَ بَنٰتِ خٰلٰتِکَ الّٰتِیۡ هَاجَرۡنَ مَعَکَ ۫ وَ امۡرَاَۃً مُّؤۡمِنَۃً اِنۡ وَّهَبَتۡ نَفۡسَهَا لِلنَّبِیِّ اِنۡ اَرَادَ النَّبِیُّ اَنۡ یَّسۡتَنۡکِحَهَا ٭ خَالِصَۃً لَّکَ مِنۡ دُوۡنِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ؕ قَدۡ عَلِمۡنَا مَا فَرَضۡنَا عَلَیۡهِمۡ فِیۡۤ اَزۡوَاجِهِمۡ وَ مَا مَلَکَتۡ اَیۡمَانُهُمۡ لِکَیۡلَا یَکُوۡنَ عَلَیۡکَ حَرَجٌ ؕ وَ کَانَ اللّٰهُ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا

'হে নবি! আপনার জন্য আপনার স্ত্রীগণকে হালাল করেছি, যাদেরকে আপনি মোহরানা প্রদান করেন। আর দাসীদের হালাল করেছি, যাদের আল্লাহ আপনার করায়ত্ব করে দেন এবং বিবাহের জন্য বৈধ করেছি আপনার চাচাতো বোন, ফুফাতো বোন, মামাতো বোন, খালাতো বোন। যারা আপনার সাথে হিজরত করেছে। কোনো মুমিন নারী যদি নিজেকে নবির কাছে সমর্পন করে, নবি তাকে বিবাহ করতে চাইলে সেও হালাল। এটা বিশেষ করে আপনারই জন্য-অন্য মুমিনদের জন্য নয়। আপনার অসুবিধা দূরীকরণের উদ্দেশে। মুমিনগণের স্ত্রী ও দাসীদের ব্যাপারে যা নির্ধারিত করেছি আমার জানা আছে। আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।' (সুরা আহযাব : আয়াত ৫০)

এ সুরায় নারীদের পর্দার দ্বিতীয় বিধান নাজিল করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

لَا جُنَاحَ عَلَیۡهِنَّ فِیۡۤ اٰبَآئِهِنَّ وَ لَاۤ اَبۡنَآئِهِنَّ وَ لَاۤ اِخۡوَانِهِنَّ وَ لَاۤ اَبۡنَآءِ اِخۡوَانِهِنَّ وَ لَاۤ اَبۡنَآءِ اَخَوٰتِهِنَّ وَ لَا نِسَآئِهِنَّ وَ لَا مَا مَلَکَتۡ اَیۡمَانُهُنَّ ۚ وَ اتَّقِیۡنَ اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ کَانَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ شَهِیۡدًا

'নবী-পত্নীগণের জন্যে তাঁদের পিতা পুত্র, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, সহধর্মিনী নারী এবং অধিকার ভুক্ত দাসদাসীগণের সামনে যাওয়ার ব্যাপারে গুনাহ নেই। নবী-পত্নীগণ , তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব বিষয় প্রত্যক্ষ করেন।' (সুরা আহযাব : আয়াত ৫৫)

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে ওফাতের পর কারো সাথেই নবী পত্নীদের বিবাহ বৈধ নয়’ এ সম্পর্কিত বর্ণনাও এসেছে এ সুরায়। আল্লাহ তাআলা বলেন-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَدۡخُلُوۡا بُیُوۡتَ النَّبِیِّ اِلَّاۤ اَنۡ یُّؤۡذَنَ لَکُمۡ اِلٰی طَعَامٍ غَیۡرَ نٰظِرِیۡنَ اِنٰىهُ ۙ وَ لٰکِنۡ اِذَا دُعِیۡتُمۡ فَادۡخُلُوۡا فَاِذَا طَعِمۡتُمۡ فَانۡتَشِرُوۡا وَ لَا مُسۡتَاۡنِسِیۡنَ لِحَدِیۡثٍ ؕ اِنَّ ذٰلِکُمۡ کَانَ یُؤۡذِی النَّبِیَّ فَیَسۡتَحۡیٖ مِنۡکُمۡ ۫ وَ اللّٰهُ لَا یَسۡتَحۡیٖ مِنَ الۡحَقِّ ؕ وَ اِذَا سَاَلۡتُمُوۡهُنَّ مَتَاعًا فَسۡـَٔلُوۡهُنَّ مِنۡ وَّرَآءِ حِجَابٍ ؕ ذٰلِکُمۡ اَطۡهَرُ لِقُلُوۡبِکُمۡ وَ قُلُوۡبِهِنَّ ؕ وَ مَا کَانَ لَکُمۡ اَنۡ تُؤۡذُوۡا رَسُوۡلَ اللّٰهِ وَ لَاۤ اَنۡ تَنۡکِحُوۡۤا اَزۡوَاجَهٗ مِنۡۢ بَعۡدِهٖۤ اَبَدًا ؕ اِنَّ ذٰلِکُمۡ کَانَ عِنۡدَ اللّٰهِ عَظِیۡمًا

'হে মুমিনগণ! তোমাদেরকে অনুমতি দেওয়া না হলে তোমরা খাওয়ার জন্য আহার্য রন্ধনের অপেক্ষা না করে নবির ঘরে প্রবেশ করো না। তবে তোমরা আহুত হলে প্রবেশ করো, তবে অতঃপর খাওয়া শেষে আপনা আপনি চলে যেয়ো, কথাবার্তায় মশগুল হয়ে যেয়ো না। নিশ্চয় এটা নবির জন্য কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের কাছে সংকোচ বোধ করেন; কিন্তু আল্লাহ সত্যকথা বলতে সংকোচ করেন না। তোমরা তাঁর পত্নীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্যে এবং তাঁদের অন্তরের জন্যে অধিকতর পবিত্রতার কারণ। আল্লাহর রাসুলকে কষ্ট দেওয়া এবং তাঁর ওফাতের পর তাঁর পত্নীগণকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য বৈধ নয়। আল্লাহর কাছে এটা গুরুতর অপরাধ।' (সুরা আহযাব : আয়াত ৫৩)

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরূদ ও সালাম প্রেরণের নির্দেশও এসেছে এ সুরায়। আল্লাহ তাআলা বলেন-

اِنَّ اللّٰهَ وَ مَلٰٓئِکَتَهٗ یُصَلُّوۡنَ عَلَی النَّبِیِّ ؕ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا صَلُّوۡا عَلَیۡهِ وَ سَلِّمُوۡا تَسۡلِیۡمًا

'আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি রহমত প্রেরণ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর জন্যে রহমতের তরে দোয়া কর এবং তাঁর প্রতি সালাম প্রেরণ কর।' (সুরা আহযাব : আয়াত ৫৬)

এ সুরার শেষে মানুষকে সঠিক কথা বলার এবং আল্লাহকে ভয় করার কথা বলা হয়েছে। আর তাতে আল্লাহ এসব বান্দাকে সঠিক পথ দেখাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি এ কুরআনকে মানুষের জন্য আমান হিসেবে পেশ করেছেন বলেও এ সুরা ওঠে এসেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ وَ قُوۡلُوۡا قَوۡلًا سَدِیۡدًا  یُّصۡلِحۡ لَکُمۡ اَعۡمَالَکُمۡ وَ یَغۡفِرۡ لَکُمۡ ذُنُوۡبَکُمۡ ؕ وَ مَنۡ یُّطِعِ اللّٰهَ وَ رَسُوۡلَهٗ فَقَدۡ فَازَ فَوۡزًا عَظِیۡمًا   اِنَّا عَرَضۡنَا الۡاَمَانَۃَ عَلَی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ الۡجِبَالِ فَاَبَیۡنَ اَنۡ یَّحۡمِلۡنَهَا وَ اَشۡفَقۡنَ مِنۡهَا وَ حَمَلَهَا الۡاِنۡسَانُ ؕ اِنَّهٗ کَانَ ظَلُوۡمًا جَهُوۡلًا  لِّیُعَذِّبَ اللّٰهُ الۡمُنٰفِقِیۡنَ وَ الۡمُنٰفِقٰتِ وَ الۡمُشۡرِکِیۡنَ وَ الۡمُشۡرِکٰتِ وَ یَتُوۡبَ اللّٰهُ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ الۡمُؤۡمِنٰتِ ؕ وَ کَانَ اللّٰهُ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا

'হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তিনি তোমাদের আমল-আচরণ সংশোধন করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে। আমি আকাশ পৃথিবী ও পর্বতমালার সামনে এই আমানত পেশ করেছিলাম, অতঃপর তারা একে বহন করতে অস্বীকার করল এবং এতে ভীত হল; কিন্তু মানুষ তা বহণ করল। নিশ্চয় সে জালেম-অজ্ঞ। যাতে আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ, মুনাফিক নারী, মুশরিক পুরুষ, মুশরিক নারীদেরকে শাস্তি দেন এবং মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে ক্ষমা করেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।' (সুরা আহযাব : আয়াত ৭০-৭৩)

সুরা সাবা (৫৪)

মক্কায় নাজিল হওয়া সুরাটি ৬টি রুকু এবং ৫৪ আয়াত বিন্যস্ত। সুরাটি নাজিলের সময়ের ব্যাপারে নির্ভরযোগ্যে তথ্য পাওয়া না গেলেও আলোচ্য বিষয় থেকে বুঝা যায় যে, সুরাটি প্রিয়নবির মক্কী জীবনে মাঝামাঝি সময় অথবা প্রথম দিকে নাজিল হয়েছে। সুরাটিতে তাওহিদ ও পরকালের বিষয়ে কাফেরদের আপত্তিকর বক্তব্য, বিদ্রুপ ও অর্থহীন কথাবার্তার উত্তর। যা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন।

আপত্তির জবাবগুলো বুঝাবার পদ্ধতিতে, আলোচনার মাধ্যমে স্মরণ করিয়ে দেয়া ও যুক্তি প্রদর্শনের কায়দায় আলোচনা করা হয়েছে। এ সুরার আলোচ্য বিষয়গুলো হলো-

শিল্পজীবি মানুষকে হেয় করা গুনাহের কাজ। কারণ আল্লাহ তাআলা হজরত নূহ আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জাহাজ তৈরির কলাকৌশল শিক্ষা দিয়ে তা তৈরিতে নির্দেশ প্রদান করেছিলেন। আবার হজরত দাউদ আলাইহিস সালামকে নির্মাণ কৌশল শিক্ষা দেয়াসহ জ্বীন জাতিকে তার অধীন করে দিয়েছিলেন। আল্লাহ বলেন-

وَ لَقَدۡ اٰتَیۡنَا دَاوٗدَ مِنَّا فَضۡلًا ؕ یٰجِبَالُ اَوِّبِیۡ مَعَهٗ وَ الطَّیۡرَ ۚ وَ اَلَنَّا لَهُ الۡحَدِیۡدَ  اَنِ اعۡمَلۡ سٰبِغٰتٍ وَّ قَدِّرۡ فِی السَّرۡدِ وَ اعۡمَلُوۡا صَالِحًا ؕ اِنِّیۡ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ بَصِیۡرٌ

'আমি দাউদের প্রতি অনুগ্রহ করেছিলাম এই আদেশ মর্মে যে, হে পর্বতমালা, তোমরা দাউদের সাথে আমার পবিত্রতা ঘোষণা কর এবং হে পক্ষী সকল, তোমরাও। আমি তাঁর জন্য লৌহকে নরম করে ছিলাম। আর এবং তাকে আমি বলে ছিলাম, প্রশস্ত বর্ম তৈরী কর, কড়াসমূহ যথাযথভাবে সংযুক্ত কর এবং সৎকর্ম সম্পাদন কর। তোমরা যা কিছু কর, আমি তা দেখি।' (সুরা সাবা : আয়াত ১০-১১)

মসজিদসমূহে মেহরাবের জন্য স্থান নির্ধারণ নির্মাণের বিধান আলোচিত হয়েছে এ সুরায়। আল্লাহ বলেন-

یَعۡمَلُوۡنَ لَهٗ مَا یَشَآءُ مِنۡ مَّحَارِیۡبَ وَ تَمَاثِیۡلَ وَ جِفَانٍ کَالۡجَوَابِ وَ قُدُوۡرٍ رّٰسِیٰتٍ ؕ اِعۡمَلُوۡۤا اٰلَ دَاوٗدَ شُکۡرًا ؕ وَ قَلِیۡلٌ مِّنۡ عِبَادِیَ الشَّکُوۡرُ

'তারা সোলায়মানের ইচ্ছানুযায়ী দুর্গ, ভাস্কর্য, হাউযসদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং চুল্লির উপর স্থাপিত বিশাল ডেগ নির্মাণ করত। হে দাউদ পরিবার! কৃতজ্ঞতা সহকারে তোমরা কাজ করে যাও। আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পসংখ্যকই কৃতজ্ঞ।' (সুরা সাবা : আয়াত ১৩)

হজরত সুলায়মান আলাইহিস সালামের মৃত্যুর বিস্ময়কর ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

لَقَدۡ کَانَ لِسَبَاٍ فِیۡ مَسۡکَنِهِمۡ اٰیَۃٌ ۚ جَنَّتٰنِ عَنۡ یَّمِیۡنٍ وَّ شِمَالٍ ۬ؕ کُلُوۡا مِنۡ رِّزۡقِ رَبِّکُمۡ وَ اشۡکُرُوۡا لَهٗ ؕ بَلۡدَۃٌ طَیِّبَۃٌ وَّ رَبٌّ غَفُوۡرٌ

'যখন আমি সোলায়মানের মৃত্যু ঘটালাম, তখন ঘুণ পোকাই জিনদেরকে তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে অবহিত করল। সোলায়মানের লাঠি খেয়ে যাচ্ছিল। যখন তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন, তখন জিনেরা বুঝতে পারল যে, অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান থাকলে তারা এই লাঞ্ছনাপূর্ণ শাস্তিতে আবদ্ধ থাকতো না।' (সুরা সাবা : আয়াত ১৪)

অতঃপর ১৫নং আয়াতে সুরার নামকরণ করা হয়েছে সাবা। সাবাবাসীদের জন্য ছিল সুসংবাদের আয়াত। তাদের জন্য ছিল দুটি বাগান। যাতে উৎপন্ন ফল-ফলাদি দিয়ে তারা জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু আল্লাহ তাআলা অবাধ্যতায় তারা উত্তম রুজি থেকে বঞ্চিত হয়। যা বর্ণি হয়েছে এ সুরায়।

পার্থিব ধন-সম্পদের ধোকায় না পড়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভে ধন্য হওয়ার বিষয়টিও বর্ণিত হয়েছে এসুরায়। আল্লাহ মানুষকে রিজিক বাড়িয়ে দেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

قُلۡ اِنَّ رَبِّیۡ یَبۡسُطُ الرِّزۡقَ لِمَنۡ یَّشَآءُ وَ یَقۡدِرُ وَ لٰکِنَّ اَکۡثَرَ النَّاسِ لَا یَعۡلَمُوۡنَ  وَ مَاۤ اَمۡوَالُکُمۡ وَ لَاۤ اَوۡلَادُکُمۡ بِالَّتِیۡ تُقَرِّبُکُمۡ عِنۡدَنَا زُلۡفٰۤی اِلَّا مَنۡ اٰمَنَ وَ عَمِلَ صَالِحًا ۫ فَاُولٰٓئِکَ لَهُمۡ جَزَآءُ الضِّعۡفِ بِمَا عَمِلُوۡا وَ هُمۡ فِی الۡغُرُفٰتِ اٰمِنُوۡنَ

'বলুন, আমার পালনকর্তা যাকে ইচ্ছা রিযিক বাড়িয়ে দেন এবং পরিমিত দেন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা বোঝে না। তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ত তি তোমাদেরকে আমার নিকটবর্তী করবে না। তবে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, তারা তাদের কর্মের বহুগুণ প্রতিদান পাবে এবং তারা সুউচ্চ প্রাসাদে নিরাপদে থাকবে।' (সুরা সাবা : আয়াত ৩৬-৩৭)

وَ الَّذِیۡنَ یَسۡعَوۡنَ فِیۡۤ اٰیٰتِنَا مُعٰجِزِیۡنَ اُولٰٓئِکَ فِی الۡعَذَابِ مُحۡضَرُوۡنَ قُلۡ اِنَّ رَبِّیۡ یَبۡسُطُ الرِّزۡقَ لِمَنۡ یَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِهٖ وَ یَقۡدِرُ لَهٗ ؕ وَ مَاۤ اَنۡفَقۡتُمۡ مِّنۡ شَیۡءٍ فَهُوَ یُخۡلِفُهٗ ۚ وَ هُوَ خَیۡرُ الرّٰزِقِیۡنَ

‘আর যারা আমার আয়াতসমূহকে ব্যর্থ করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয়, তাদেরকে আযাবে উপস্থিত করা হবে। বলুন, আমার পালনকর্তা তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা রিযিক বাড়িয়ে দেন এবং সীমিত পরিমাণে দেন। তোমরা যা কিছু ব্যয় কর, তিনি তার বিনিময় দেন। তিনি উত্তম রিযিক দাতা।' (সুরা সাবা : আয়াত ৩৮-৩৯

সুরা ফাতির (৪৫)

মক্কায় নাজিল হওয়া সুরা ফাতির ৫ রুকু এবং ৪৫ আয়াতে সুবিন্যস্ত। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর যখন মক্কায় ঘোর বিরোধীতা চলছিল; যখন প্রিয়নবির দাওয়াতি কার্যক্রমকে ব্যর্থ করে দেয়া বৃথা চেষ্টা করছিল তখন সুরাটি নাজিল হয়। এ সুরায় আল্লাহ তাআলা মক্কায় সে সময়ের কুরাইশ নেতাদের গৃহীত নীতির প্রেক্ষিতে উপদেশ, সতর্কতা ও তিরস্কার প্রদান করা হয়েছে।

সুরাটির বিষয়বস্তুর সার সংক্ষেপ হলো- ‘হে মুর্খরা! প্রিয়নবি যে পথের দিকে তোমাদেরকে আহ্বান করছেন; তার মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে কল্যাণ। তার বিরুদ্ধে তোমরা আক্রোশ, প্রতারণা ও ষড়যন্ত্রসহ তাঁর দাওয়াতি কার্যক্রমকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য সব ধরনের ফন্দি ফিকির করছো; আসলে তাঁর বিরুদ্ধে নয় বরং তা তোমাদের নিজেদের বিরুদ্ধেই চলে যাচ্ছে।

তাঁর আনীত বিধানের অনুসরণ ও অনুকরণ না করলে তাঁর কোনো ক্ষতি হবে তোমরা নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সুতরাং তাঁর ওপর নাজিলকৃত বিধানের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করে দেখ। এ সুরার আলোচ্য বিষয় হলো-

> আল্লাহর ওপর ভরসাকারীদের কোনো বিপদাপদ না থাকার বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। > সৎ কর্মের তুলনা ব্যবসায়ের সঙ্গে। > উম্মতে মুহাম্মদির শ্রেণী বিন্যাস এবং এ উম্মতের আলেম সম্প্রদায়ের মর্যাদার বর্ণনাও রয়েছে এসুরায়।

আল্লাহ তাআলা এ সুরায় একই নদীতে বহমান ধারার কথা তুলে ধরেছেন। যার একটি সুপেয় পানি আর অন্যটিতে আছে লোনা পানি। এটি মহান আল্লাহর কুদরত। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَ مَا یَسۡتَوِی الۡبَحۡرٰنِ ٭ۖ هٰذَا عَذۡبٌ فُرَاتٌ سَآئِغٌ شَرَابُهٗ وَ هٰذَا مِلۡحٌ اُجَاجٌ ؕ وَ مِنۡ کُلٍّ تَاۡکُلُوۡنَ لَحۡمًا طَرِیًّا وَّ تَسۡتَخۡرِجُوۡنَ حِلۡیَۃً تَلۡبَسُوۡنَهَا ۚ وَ تَرَی الۡفُلۡکَ فِیۡهِ مَوَاخِرَ لِتَبۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِهٖ وَ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ

'দু'টি সমুদ্র সমান হয় না-একটি মিঠা ও তৃষ্ণানিবারক এবং অপরটি লোনা। ঊভয়টি থেকেই তোমরা তাজা গোশত (মৎস) আহার কর এবং পরিধানে ব্যবহার্য গয়নাগাটি আহরণ কর। তুমি তাতে তার বুক চিরে জাহাজ চলতে দেখ, যাতে তোমরা তার অনুগ্রহ অন্বেষণ কর এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।' (সুরা ফাতির : আয়াত : ১২)

সুরা ইয়াসিন (১-২১)

কুরআনুল কারিমের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ৮৩ আয়াত বিশিষ্ট সুরা ‘সুরা ইয়াসিন' মক্কায় নাজিল হয়। সুরাটি অনেক ফজিলতপূর্ণ মর্যাদার। যে দুটি হরফ দিয়ে সুরাটি শুরু করা হয়েছে, তা দিয়েই সুরার নাম করণ করা হয়েছে। সুরাটির মূল আলোচ্য বিষয় হলো- কুরাইশ বংশীয় কাফেরদের ঈমান না আনা এবং প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর জুলুম নির্যাতন ও বিদ্রুপের পরিণামে ভয় দেখানো হয়েছে। এ সুরার (১-২১) আলোচ্য বিষয়গুলো হলো-

> অস্বীকারকারীদের জন্য শপথের উপকারিতা। > শপথের মাধ্যমে রেসালাত নির্ধারিত করণের পদ্ধতি। > পেছনে প্রাচীর স্থাপনের বিষয়টি উল্লেখ করার হিকমত। > আল্লাহকে না দেখে ভয় করার বিষয়ের আলোচনা। > কিয়ামতের পরে পুনরুত্থান সম্পর্কিত আলোচনা। > প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াত ও সংশোধন পদ্ধতি এবং ইসলামের প্রতি আনুগত্যশীলদের জন্য বিশেষ নসিহতের বর্ণনা। > হাবিব নাজ্জারের দাওয়াতি বৈশিষ্ট্য ও নবি রাসুলদের সহযোগিতার বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে এ সুরায়।

সৎপথ প্রাপ্তদের পরিচয় দিয়ে শেষ হবে আজকের তারাবিহ। আল্লাহ তাআলা বলেন-

اتَّبِعُوۡا مَنۡ لَّا یَسۡـَٔلُکُمۡ اَجۡرًا وَّ هُمۡ مُّهۡتَدُوۡنَ

‘তোমরা তাদের অনুসরণ কর যারা তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চায় না আর তারা সৎপথপ্রাপ্ত।’ (সুরা ইয়াসিন: আয়াত ২১)

হজরত কাতাদাহ বলেন, সে ব্যক্তি যখন রাসুলদের কাছে এসে পৌঁছলেন তখন তিনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কি তোমাদের এ কাজের বিনিময়ে কোন পারিশ্রমিক চাও? তারা বলল, না। তখন সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা রাসুলদের অনুসরণ কর। অনুসরণ করা তাদের, যারা তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান চান না, আর তারা তো সৎপথপ্ৰাপ্ত। (তাবারি)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের এ গুরুত্বপূর্ণ সুরাগুলো বুঝে পড়ার এবং তাঁর ওপর আমল করার পাশাপাশি নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসকে শিরকমুক্ত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।