জুমার প্রথম খুতবা: ইতেকাফের ফজিলত ও বিধান

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:০১ পিএম, ০৭ এপ্রিল ২০২৩

আজ শুক্রবার। বরকতময় রমজান মাসের তৃতীয় জুমা। ০৭ এপ্রিল ২০২৩ ইংরেজি, ২৪ চৈত্র ১৪২৯ বাংলা, ১৫ রমজান ১৪৪৪ হিজরি। আজকের জুমার আলোচ্য বিষয়- ইতেকাফের ফজিলত ও বিধান
সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি একক, তার কোনো অংশীদার নেই। যিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক। যার পরে আর কোনো নবি নেই। রমজান মাসের শেষ দশকে ইতেকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়া। অর্থাৎ মহল্লার মসজিদে এক দুজন ইতেকাফ করলে বাকি পুরা মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে জিম্মাদারি আদায় হয়ে যাবে। আর যদি কেউ আদায় না করে তাহলে মহল্লার সব মানুষ সুন্নতে মুয়াক্কাদা পরিত্যাগ করার কারণে গুনাহগার হবে। এই ইতেকাফের জন্যও রোজা রাখা শর্ত। ইতেকাফের নির্দেশ এসেছে কোরআনে-
وَ اِذۡ جَعَلۡنَا الۡبَیۡتَ مَثَابَۃً لِّلنَّاسِ وَ اَمۡنًا ؕ وَ اتَّخِذُوۡا مِنۡ مَّقَامِ اِبۡرٰهٖمَ مُصَلًّی ؕ وَ عَهِدۡنَاۤ اِلٰۤی اِبۡرٰهٖمَ وَ اِسۡمٰعِیۡلَ اَنۡ طَهِّرَا بَیۡتِیَ لِلطَّآئِفِیۡنَ وَ الۡعٰکِفِیۡنَ وَ الرُّکَّعِ السُّجُوۡدِ
‘আর স্মরণ কর, যখন আমি কাবাকে মানুষের জন্য মিলনকেন্দ্র ও নিরাপদ স্থান বানালাম এবং (আদেশ দিলাম যে,) তোমরা মাকামে ইবরাহিমকে নামাজের স্থানরূপে গ্রহণ কর। আর আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম যে, ‘তোমরা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, ইতেকাফকারী ও রুকুকারী-সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র কর। ’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১২৫)

প্রিয় মুসল্লিগণ!
রমজান মাসে রোজা পালন যেমন ইবাদত তেমনি শেষ দশকে ইতেকাফও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ইতেকাফের মাধ্যমে রোজাদার মহিমান্বিত লাইলাতুল কদর তালাশ করে। ইতেকাফ রোজাদারের ইবাদতের প্রতিযোগিতা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোমড়ে কাপড় বেঁধে ইবাদত-বন্দেগিতে লেগে যেতেন। ইতেকাফের সময়-ক্ষণ, বিধান, ফজিলত ও উপকারিতায় কোরআন-সুন্নায় রয়েছে অনেক দিকনির্দেশনা।

ইতেকাফের বিধান
ইতেকাফের মর্যাদা ও উপকারিতা অনেক বেশি। যুগে যুগে ইতেকাফের প্রচলন ছিল। ইবাদত-বন্দেগির জন্য ইতেকাফ আল্লাহর দেওয়া বিধানও বটে। আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে হজরত ইবরাহিম ও ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে ইতেকাফের বিধান সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন এভাবে-
وَ اِذۡ جَعَلۡنَا الۡبَیۡتَ مَثَابَۃً لِّلنَّاسِ وَ اَمۡنًا ؕ وَ اتَّخِذُوۡا مِنۡ مَّقَامِ اِبۡرٰهٖمَ مُصَلًّی ؕ وَ عَهِدۡنَاۤ اِلٰۤی اِبۡرٰهٖمَ وَ اِسۡمٰعِیۡلَ اَنۡ طَهِّرَا بَیۡتِیَ لِلطَّآئِفِیۡنَ وَ الۡعٰکِفِیۡنَ وَ الرُّکَّعِ السُّجُوۡدِ
‘আর স্মরণ কর, যখন আমি কাবাকে মানুষের জন্য মিলনকেন্দ্র ও নিরাপদ স্থান বানালাম এবং (আদেশ দিলাম যে,) তোমরা মাকামে ইবরাহিমকে নামাজের স্থানরূপে গ্রহণ কর। আর আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম যে, ‘তোমরা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, ইতেকাফকারী ও রুকুকারী-সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র কর। ’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১২৫)

এ আয়াত থেকে প্রমাণিত যে, ইতেকাফ আল্লাহর দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান। প্রথম তিনি কাবা শরিফকে তাওয়াফ, ইতেকাফ ও নামাজের জন্য সৃষ্টি করেছেন। । দ্বিতীয়ত কাবা শরিফে আগে তাওয়াফ করা হয় পরে নামাজ পড়া হয়। তৃতীয়ত ফরজ হোক কিংবা নফল হোক কাবা শরিফের ভেতরে যে কোনো নামাজ আদায় করাই বৈধ।

এছাড়াও ইতেকাফের অন্যতম একটি বিধান হলো- কোনো ইতেকাফকারী স্বামী-স্ত্রী ইতেকফে বসলে মেলামেশা করতে পারবে না। এটি মহান আল্লাহর নির্দেশ। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَلاَ تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ تِلْكَ حُدُودُ اللّهِ فَلاَ تَقْرَبُوهَا
আর যতক্ষণ তোমরা ইতেকাফ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান কর, ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীদের সঙ্গে মেলামেশা করো না। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক বেঁধে দেয়া সীমানা। অতএব, এর কাছেও যেও না।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৭)

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশক ইতেকাফ করতেন।' (বুখারি, মুসলিম)

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত রমজানের শেষ দশক ইতেকাফ করতেন এবং তাঁর স্ত্রীগণও তাঁর পরবর্তীতে ইতেকাফ করেছেন।' (বুখারি, মুসলিম)

আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে যেমন কাবা শরিফ পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। আবার ইতেকাফে বসা স্বামী-স্ত্রীদের কেউ ইতেকাফের নির্ধারিত দিনগুলোতে মেলামেশা করতে পারবে না। এসবই মহান আল্লাহর বিধান। যাতে মানুষ আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে ইতেকাফ করতে পারে।

ইতেকাফের উদ্দেশ্য
দুনিয়াদারির ঝামেলা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে একাগ্রচিত্তে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হওয়া এবং বিনয় ও নম্রতায় নিজেকে আল্লাহর দরবারে সমর্পণ করা, বিশেষ করে লাইলাতুল কদরে ইবাদত করার সুযোগ পাওয়াই ইতেকাফের অন্যতম উদ্দেশ্য। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমি লাইলাতুল কদরের সৌভাগ্য ও এই মহিমা অনুসন্ধানে প্রথম ১০ দিন ও মাঝের ১০ দিন ইতেকাফ করেছি, অবশেষে আমার কাছে একজন ফেরেশতা এসে বলেছেন, তা শেষ দশকে। কাজেই তোমাদের মধ্যে যারা ইতেকাফ করতে চায়, তারা যেন শেষ দশকে ইতেকাফ করে।’ অতঃপর সাহাবায়ে কেরাম তাঁর সঙ্গে শেষ দশকে ইতেকাফ করলেন। (মুসলিম)

বিশ্বনবির ইতেকাফ
২০ রমজান ইফতারের আগে থেকে শুরু করে ঈদের চাঁদ না দেখা পর্যন্ত মসজিদে অবস্থান গ্রহণ করা হলো মাসনুন ইতেকাফ। হাদিসে এসেছে-
'রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশদিন ইতেকাফ করতেন।' (বুখারি, মুসলিম)

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জেহাদে অংশগ্রহণের কারণে এক রমজান ইতেকাফ করতে পারেননি। বরং তিনি পরবর্তী বছর ২০ দিন ইতেকাফ করে তা পূরণ করেছেন। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর তিনি কোনো রমজান ইতেকাফ ত্যাগ করেনি। হাদিসে এসেছে-
'রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক রমজানে দশদিন ইতেকাফ করতেন। তবে ইন্তেকালের বছর তিনি ২০ দিন ইতেকাফ করেছেন।' (বুখারি)

ইতেকাফের নির্দেশ
ইতেকাফের ফজিলত ও উপকারিতা অনেক বেশি। যুগে যুগে এ ইতেকাফের প্রচলন ছিল। ইতেকাফ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে হজরত ইবরাহিম ও ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে নির্দেশ দিয়ে বলেন-
وَ عَهِدۡنَاۤ اِلٰۤی اِبۡرٰهٖمَ وَ اِسۡمٰعِیۡلَ اَنۡ طَهِّرَا بَیۡتِیَ لِلطَّآئِفِیۡنَ وَ الۡعٰکِفِیۡنَ وَ الرُّکَّعِ السُّجُوۡدِ
‘আর আমি ইবরাহিম ও ইসমাঈলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, ইতেকাফকারী ও রুকু-সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখ।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১২৫)

আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের এ আয়াতে বায়তুল্লাহকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে মানুষ আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে ইতেকাফ করতে পারে।

ইতেকাফ অবস্থায় যেসব কাজ বৈধ
১. মসজিদে পানাহার করা
২. শৌচকর্ম বা প্রস্রাব-পায়খানার জন্য বাইরে যাওয়া
৩. ফরজ গোসলের জন্য বাইরে যাওয়া
৪. জুমার নামাজের জন্য এতটুকু সময় নিয়ে বের হওয়া যাতে জামে মসজিদে গিয়ে খুতবার আগে ২/৪ রাকাত সুন্নত আদায় করা যায়
৫. আজান দেওয়ার জন্য বাহিরে যাওয়া।

যেসব কারণে ইতেকাফ ভেঙে যায়
১. ওজরবশত বের হয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিলম্ব করা
২. বিনা ওজরে মসজিদের বাহিরে যাওয়া
৩. স্ত্রী সহবাস করা
৪. অসুস্থতা বা ভয়ের কারণে মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া।

ইতেকাফ অবস্থায় যা করণীয়
১. বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করা
২. কোরআন তেলাওয়াত করা
৩. দ্বীনি আলোচনা করা ও শোনা
৪. আল্লাহর জিকির করা
৫. দোয়া করা
৬. ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ করা।

ইতেকাফ অবস্থায় যা বর্জনীয়
১. একেবারেই চুপচাপ বসে থাকা
২. ঝগড়া-ঝাটি বা অনর্থক কথাবার্তা বলা
৩. গীবত বা পরনিন্দা করা
৪. মালপত্র মসজিদে এনে বেচা-কেনা করা।

ইতেকাফের ফজিলত
হাদিসে পাকে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা দেন-
‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এক দিন ইতেকাফ করবে আল্লাহ তাআলা তার এবং জাহান্নামের মাঝে তিন খন্দক দূরত্ব সৃষ্টি করে দেবেন। অর্থাৎ আসমান ও জমিনের মাঝে যত দূরত্ব আছে তার চেয়েও বেশি দূরত্ব সৃষ্টি করে দেবেন।’ সুবহানাল্লাহ! (বায়হাকি)
রোজাদার ইতেকাফকারীর জন্য অনুমানের একটি বিষয় হলো- কোনো বান্দা যদি রমজানের শেষ দশদিনের মাসনুন ইতেকাফ যথাযথভাবে আদায় করে তবে আল্লাহ বান্দাকে কী পরিমাণ প্রতিদান দেবেন।

ইতেকাফের উপকারিতা
১. লাইলাতুল কদর পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম ইতেকাফ। হাদিসে এসেছে-
'রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের মাঝের দশদিন ইতেকাফ করতেন। একবছর এভাবে ইতেকাফ শেষ করার পর যখন রমজানের ২১তম রাত আসল (অর্থাৎ যে রাত শেষে সকালে তিনি ইতেকাফ থেকে বের হলেন) তখন তিনি ঘোষণা করলেন, 'যে ব্যক্তি আমার সাথে ইতেকাফ করেছে সে যেন শেষ দশক ইতেকাফ করে। কারণ, আমাকে লাইলাতুল ক্বদর সম্পর্কে অবগত করা হয়েছিল (যে তা শেষ দশকের ওমুক রাতে)। এরপর তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। সুতরাং তোমরা লাইলাতুল ক্বদর শেষ দশকে খোঁজ কর।’ (বুখারি)

২. ইতেকাফকারীর অবসর সময়ে কোনো আমল না করলেও তার দিনরাত ইবাদত হিসেবেই গণ্য হয়।

৩. ইতেকাফের উসিলায় অনেক পাপাচার ও গোনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকা যায়। কেননা গোণাহ থেকে বেঁচে থাকার জন্য আল্লাহর ঘর যেন একটি প্রকৃত দুর্গ।

৪. ইতেকাফ দ্বারা দুনিয়ার সব ঝামেলা ও সমস্যা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা যায়। ঝামেলা ও সমস্যামুক্ত সময়ে নিজেকে পুরোপুরি আল্লাহ তাআলার কাছে সঁপে দেয়া যায়। রোজার কারণে সারাদিন রোজা পালন ফেরেশতাদের সাথে মানুষের সামঞ্জস্য হয় এবং ফেরেশতাসূলভ আচরণের উপর অবিচল থাকার চমৎকার প্রশিক্ষণ হাসিল হয়।

৫. রোজার যাবতীয় আদব ও হক যথাযথ আদায় করে পরিপূর্ণ রোজা আদায় করার জন্য ইতেকাফ অত্যন্ত কার্যকর।

৬. আল্লাহ তাআলার মেহমান হয়ে তার সাথে মহব্বত ও ভালবাসা সৃষ্টি করার অন্যতম মাধ্যম মসজিদে ইতেকাফ। এজন্যই সশ্রদ্ধভাবে একান্ত মনোবাসনা নিবেদনের জন্য ইতেকাফের বিকল্প ইবাদত দুনিয়াতে সত্যিই বিরল।

৭. সর্বোপরী ইতেকাফকারী ব্যক্তি মসজিদে অবস্থান করার ফলে স্বাভাবিক সময়ের যে সব আমল করতে অক্ষম, সেসব আমলেরও সাওয়াব পায় ইতেকাফকারী। যেমন- জানাজায় শরিক হওয়া, অসুস্থদের সেবা করা ইত্যাদি আমল না করেও তার ছাওয়াবের অংশীদার হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করে থাকে।

ইতেকাফের স্থান
পুরুষরা শুধু মসজিদেই ইতেকাফ করতে পারে। ইতেকাফের সর্বোত্তম স্থান হলো মসজিদে হারাম, তারপর মসজিদে নববি, তারপর মসজিদে আকসা, এরপর যেকোনো জামে মসজিদ।

জামে মসজিদে ইতেকাফ উত্তম। কারণ জুমার জন্য অন্যত্র যেতে হবে না। কিন্তু জামে মসজিদে ইতেকাফ করা জরুরি নয়। বরং যেসব শরয়ি মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ হয়, সে মসজিদে ইতেকাফ করতে পারে। (ফতোয়া শামি ২/১২৯)

ইতেকাফের শর্ত
১. নিয়ত করা
২. জামাত অনুষ্ঠিত হয় এমন মসজিদে ইতেকাফ হতে হবে
৩. ইতেকাফকারী রোজাদার হবে
৪. জ্ঞানসম্পন্ন মুসলমান স্ত্রী-পুরুষের জানাবাত ও মহিলারা হায়েজ-নেফাস হতে পাক হওয়া
৬. পুরুষ লোক জামে মসজিদে ইতেকাফ করবে
৭. সর্বদা হদসে আকবর থেকে পাক-পবিত্র থাকতে হবে।

নারীর ইতেকাফ
নারীদের জন্য ইতেকাফ করা মুস্তাহাব। নারীদের ইতেকাফ ঘরের কোনো (নামাজের স্থানে) বাঞ্ছনীয়। নারীদের ইতেকাফের জন্য স্বামীর অনুমতি আবশ্যক। স্বামী স্ত্রীকে একবার ইতেকাফের অনুমতি দেওয়ার পর আর বাধা দিতে পারবেন না। বাধা দিলেও সে বাধা গ্রহণযোগ্য নয় এবং স্ত্রীর জন্য তা মানাও জরুরি নয়। (রদ্দুল মুখতার ২/৪৪১; ফতোয়া আলমগিরি ১/২১১)

ইতেকাফ অবস্থায় রাতেও স্ত্রী-সহবাস করা যাবে না। করলে ইতেকাফ নষ্ট হয়ে যাবে। তদ্রূপ স্ত্রীকে চুম্বন, আলিঙ্গন ও উত্তেজনার সঙ্গে স্পর্শ করাও বৈধ নয়। যদি এসবের কারণে বীর্যপাত ঘটে, তাহলে ইতেকাফ ভেঙ্গে যাবে। (সুরা বাকারা ১৮৭, বাদায়েউস সানায়ে ২/২৮৫, আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৫০, ফতোয়া আলমগিরি: ১/২১৩)

নারীদের ঋতুস্রাব অবস্থায় ইতেকাফ করা সহিহ নয়। কেননা এ অবস্থায় রোজা রাখা যায় না। আর সুন্নত ইতেকাফের জন্য রোজা রাখা শর্ত। (বাদায়েউস সানায়ে ২/২৭৪, ফতোয়া আলমগিরি ১/২১১)

সুতরাং মুমিন মুসলমান রোজাদারের উচিত রমজানের শেষ দশ ইতেকাফে অংশগ্রহণ করা। কেনানা রমজানের ইতেকাফ পালন যেমন মহান আল্লাহর নির্দেশ আবার নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাসনুন ইবাদতও বটে।

উল্লেখ্য, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে তার স্ত্রীগণ, সাহাবায়ে কেরামও ইতেকাফ অংশগ্রহণ করতেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকালের পরও এ ধারা অব্যহত থাকে। আজও বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহ যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যের মাধ্যমে ইতেকাফ করে থাকেন। তাইতো ইতেকাফ একটি মর্যাদা ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাসনুন আমল। যা ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংশও বটে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথ হক আদায় করে ইতেকাফে অংশগ্রহণ করে কোরআন-সুন্নাহর নির্দেশ ও ফজিলত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।