রমজানে নাইজেরিয়ানদের বিশেষ ইফতার ও সেহরি
মহিমান্বিত মাস রমজান। এ মাসকে ঘিরে বিশ্বব্যাপী রয়েছে নানা অনুষ্ঠান আর রীতি-রেওয়াজ। সারাদিন রোজা রেখে সন্ধ্যায় বাহারি ইফতার, ইফতারের পর তারাবিহের নামাজ পড়া ইত্যাদি ছাড়াও আনন্দ-উৎসব করার মাধ্যমেও সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয় রমজানের খুশির আমেজ। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের চেয়েও এসব রীতি সাংস্কৃতিক উদযাপন হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া। দেশটির মুসলমানদের মধ্যে প্রবল ইসলামি মূল্যবোধ লক্ষ্য করা যায়। রমজান মাসে তাদের জীবনযাত্রায় বিশেষ পরিবর্তন দেখা যায়।
রমজানের রোজার প্রস্তুতি
নাইজেরিয়ায় রজব মাসের চাঁদ দেখার পর থেকেই রমজানের প্রস্তুতি শুরু হয়। সে সময় থেকে তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস-পত্র কিনে রাখে নাইজেরিয়ানরা। পাশাপাশি আমল-ইবাদতের জন্যও প্রস্তুত হয়। রমজান আসার আগেই তারা রজব ও শাবান মাসে দিনে রোজা ও রাতে তাহাজ্জুদের আমল শুরু করে। সর্বত্র অপার্থিব প্রশান্তি বিরাজ করে। নাইজেরিয়ানদের কাছে রমজান পুণ্য ও আত্মীয়তার বন্ধন সুদৃঢ় করার মাস। রমজানে প্রত্যেকে আত্মীয়-স্বজন ও আপনজনের সঙ্গে দেখা করে এবং তাদের উৎসাহিত করে রমজানের ধর্মীয় পবিত্রতা, গাম্ভীর্য ও শিক্ষা মান্য করে চলতে।
কোরআন শিক্ষার আসর
নাইজেরিয়ায় উষ্ণ আন্তরিকতায় রমজানকে বরণ করা হয়। রমজানের চাঁদ ওঠার পর আনন্দ মাহফিল হয় সেখানে এবং পুণ্য ও বরকতের মাস রমজানকে স্বাগত জানিয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়কে বের হয় আনন্দ মিছিল। মাহফিল ও মিছিলে বিশেষ ধর্মীয় সংগীত পরিবেশিত হয়। নাইজেরিয়ান মুসলিম সমাজ রমজানের জন্য মানসিক ও বস্তুগত উভয়ভাবে রমজানের জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকে।
সেহরিতে এক গ্লাস পানি
নাইজেরিয়ায় শুধু রমজান মাসেই নয় বরং বছরের পুরো সময়ই দেশটিতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। ওজনে কম দেওয়া, খাদ্যে ভেজাল মেশানো নাইজেরিয়ার মানুষরা কখনোই করেন না! এ ছাড়া নাইজেরিয়ার মুসলমানরা পারতপক্ষে নামাজ-রোজা ছাড়েন না। বছরের অন্য সময়ের মতোই তারা নির্বিঘ্ন ইবাদতে রমজান কাটিয়ে দেন। সেহরি ও ইফতারে কোনো বিশেষ আয়োজন থাকে না তাদের। একটি সিদ্ধ ভুট্টা ও এক গ্লাস পানি দিয়েই সেহরি পর্ব সারেন অধিকাংশ নাইজেরিয়ান। নাইজেরিয়ার তরুণরা কঠিন অসুখ নিয়েও রোজা ছাড়তে রাজি নন।
ইফতারে ‘হুম’ ও ‘কোকো’
নাইজেরিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তারাবিহ আদায় করা হয়। বেশির ভাগ মসজিদে আসরের পর নসিহত, কোরআন তেলাওয়াত ও কোরআনের তাফসির হয়। কোথাও কোথাও এসব মজলিস হয় এশার নামাজের পর। ইফতারের সামান্য আগে নাইজেরিয়ান পরিবারগুলো পরস্পরের মধ্যে ইফতার বিনিময় করে। ইফতার আয়োজনে তারা ‘হুম’ ও ‘কোকো’ নামক পানীয় পছন্দ করে, যা গম ও চিনি দিয়ে তৈরি করা হয়। সামান্য ইফতার গ্রহণ করে তারা মাগরিবের নামাজ আদায় করতে যায়।
একাধিক ঘরের লোকের একত্রে ইফতার
মাগরিবের নামাজ শেষে রাতের খাবার গ্রহণ করে নাইজেরিয়ানরা। এ সময়ের আয়োজনে থাকে গোশত, ভাত ও আলু। খাবার শেষে তারা চা পান করে। নাইজেরিয়ান মুসলিমদের আরেকটি ইফতার সংস্কৃতি হলো, প্রতিবেশী কয়েক ঘরের লোক কোনো বাড়ির আঙিনায় একত্র হয়ে ইফতার করা। এ ছাড়া নাইজেরিয়া রমজানে অঞ্চলভেদে ‘আসিদাহ’, ‘দাউয়্যাহ’, ‘উনজুঝি’ ও ‘লুবিয়া’ নামক খাবারগুলো বেশ জনপ্রিয়।
নাইজেরিয়ানদের তারাবিহ আদায়
তারাবিহ আদায় করতে নাইজেরিয়ান পুরুষরা মসজিদে যায়। শিশুরা ঘরে আলাদা জামাত করে। তারাবিহ শেষ করে তারা আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে যায়। এটি নাইজেরিয়ান সমাজের সৌন্দর্য। নারীরা রমজানে হরেক রকম খাবার তৈরি করে। আর যারা ধর্মীয় জ্ঞান রাখেন, তারা মেয়েদের ইসলামি আচার-আচরণ ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেন। আবার কোনো কোনো পুরুষ তাদের সঙ্গে স্ত্রীকে মসজিদে নিয়ে যান। রমজানের শেষাংশে জাকাত ও ফিতরা আদায় করেন।
এমএমএস/এএসএম