রমজানের রোজা কখন ফরজ হয়েছিল?
রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাতের মাস রমজান। বছরের সেরা মাস এটি। এ মাসের অসংখ্য ফজিলত ও মর্যাদার কথা কোরআন-হাদিস দ্বারা স্বীকৃত। কিন্তু এ মাসের রোজা ফরজ হয়েছিল কোন মাসে?
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজব ও শাবান মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি নিতেন। রমজানের জন্য নিজেকে তৈরি করতে শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা রাখতেন। রমজানের রোজা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াতের পরপরই ফরজ করা হয়নি। বরং এটি দ্বিতীয় হিজরিতেই ফরজ করা হয়।
রমজানের রোজার পালনের নির্দেশ
মদিনায় দ্বিতীয় হিজরির ১০ শাবান মুমিন মুসলমানের ওপর রমজানের রোজা ফরজ হয়। আল্লাহ তাআলা আয়াত নাজিল করেন-
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِىٓ أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْءَانُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنٰتٍ مِّنَ الْهُدٰى وَالْفُرْقَانِ ۚ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ ۖ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلٰى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ ۗ يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلٰى مَا هَدٰىكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
‘রমজান মাস, এ মাসেই নাজিল করা হয়েছে কুরআন। মানুষের জন্য হেদায়েত, সৎপথের সুস্পষ্ট নিদর্শন এবং হক ও বাতিলের পার্থক্যকারী।
অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস পাবে, সে যেন এ মাসে রোজা পালন করে। তবে কেউ রোগাক্রান্ত হলে অথবা সফরে থাকলে এ সংখ্যা অন্য সময় পূরণ করবে।
আল্লাহ চান তোমাদের জন্য যা সহজ তা, আর তিনি চান না তোমাদের জন্য যা কষ্টকর তা, যেন তোমরা সংখ্যা পূর্ণ করো এবং আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করো, তোমাদের সৎপথে পরিচালিত করার জন্য এবং যেন তোমরা শুকরিয়া আদায় করতে পার।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)
এরপর থেকেই মুসলিম উম্মাহর ওপর পুরো রমজান মাস রোজ রাখা ফরজ হয়ে যায়। সে থেকে মুমিন মুসলমান মাসব্যাপী রোজা পালন করে আসছেন।
রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে
রমজানে রোজা ফরজ হওয়ার আগে কোনো রোজা ফরজ ছিল কিনা তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা ফরজ ছিল আবার কেউ কেউ বলেন, আইয়্যামে বিজের রোজা তথা আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজা ফরজ ছিল।
কুরাইশদের রোজা
প্রাক ইসলামি যুগে আরবের লোকেরাও রোজা পালনে সক্রিয় ছিল। মক্কার কুরাইশরাও অন্ধকার যুগে ১০ মহররম রোজা রাখতো। এ দিন তারা রোজা অবস্থায় পবিত্র কাবা শরিফে নতুন কিসওয়া বা গিলাফ পরিধান করাতো। (মুসনাদে আহমদ)
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, ‘জাহেলি যুগে কুরাইশরা আশুরার রোজা পালন করত এবং আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও এই রোজা পালন করতেন। যখন তিনি মদিনায় আসেন, তখনো এই রোজা পালন করেন এবং তা পালনের নির্দেশ দেন। বেশির ভাগ ফকিহ ও মুহাদ্দিসের মতে, রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা ওয়াজিব ছিল, যা পরবর্তী সময়ে নফলে পরিণত হয়। যখন রমজানের রোজা ফরজ করা হলো, তখন আশুরার রোজা ঐচ্ছিক করে দেওয়া হলো। যার ইচ্ছা সে পালন করবে আর যার ইচ্ছা পালন করবে না।’ (বুখারি ২০০২)
রমজানের রোজা ইসলামের পাঁচটি রুকনের একটি। রমজান মাসব্যাপী রোজা রাখা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগের জাতির (নবি-রাসুলদের) জন্যও রোজা রাখা ফরজ করা হয়েছিল। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الصِّیَامُ کَمَا کُتِبَ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ
‘হে মুমিনেরা! তোমাদের জন্য রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের আগের মানুষের জন্য, যেন তোমরা আল্লাহভীতি অর্জন করতে পারো।’ (সুরা বাকারা : ১৮৩)
দ্বিতীয় হিজরির শাবান মাসে রমজানের রোজা ফরজ করা হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সার্লাম মোট ৯ বছর রমজানের রোজা রেখেছেন। কেননা তা দ্বিতীয় হিজরির শাবান মাসে ফরজ হয়। আর নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একাদশ হিজরির রবিউল আউয়াল মাসে ইন্তেকাল করেন।
এমএমএস/এমএস